আল্লাহ মিরাকুলাসলি গুমের হাত থেকে বাচিয়ে দিয়েছিলেন “বুলবুল হাসান”

বুলবুল হাসানের পোস্টটি হুবহু নিচে দেয়া হল। 

আসসালামু আলাইকুম,   স্বাধীন বাংলাদেশে মাজলুম ভাইবোনদের অনেকের অনেক কথাই মনে পড়ছে। এই সুযোগে আমার প্রতি জুলুমের ঘটনাগুলোও বলতে চাই। আমি ক্ষমা প্রার্থী আমি খুব সুন্দর করে লিখতে পারি না, এবং লিখলে অনেক বড় হয়ে যায়।

আমি মোঃ বুলবুল হাসান মাহমুদ।
মাস্টার্সঃ এমবিএ, আইবিএ  ৫২ ব্যাচ।
গ্র্যাজুয়েশনঃ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ০৭ ব্যাচ, বুয়েট।

ঘটনার সময় চাকুরিস্থলঃ সামিট গাজিপুর পাওয়ার লিমিটেড, কড্ডা, গাজিপুর।
পোস্টঃ এসিস্ট্যান্ট ডেপুটি ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) -মেইনটেনেন্স।

অন্যান্য জুলুম নির্যাতনের ঘটনার চেয়ে আমার ঘটনাটি ছিলো ব্যতিক্রম। আমাকে আল্লাহ মিরাকুলাসলি গুমের হাত থেকে বাচিয়ে দিয়েছিলেন।
কিভাবে হলো সেটা বলছি…

সেপ্টেম্বর ২০১৮। আমি তখন এক ছোটো মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে থাকি গ্রেট ওয়াল সিটি, গাজিপুর চৌরাস্তায়। সামিটের গাজিপুর প্ল্যান্টে আসার আগে বরিশাল শহরে বরিশাল প্ল্যান্টে ছিলাম প্রায় ৩ বছর। বরিশাল শহরে বুয়েটিয়ান ভাই ব্রাদারদের সাথে অল্পস্বল্প উঠাবসা হতো। সেখান থেকে স্থানীয় কিছু ভাই ব্রাদারদের সাথেও পরিচয় হয়েছিলো। এদের মধ্যে জামান ভাই ও রাকিব ভাই (ছদ্মনাম) অন্যতম।  এবার ফিরে আসি ঘটনাস্থল কড্ডা, গাজিপুরে ।

সেপ্টেম্বরের ২য় সপ্তাহে খবর পাই জামান ভাই মিসিং। তাঁর ফ্যামিলির সাথে পরিচয় থাকায় তারা কয়েকবারই আমাকে ফোন টোন দিতো। হলি আর্টিজান পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দাড়িওয়ালা সাধারন মুসলিমদের ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার ঘটনা আমি শুনতাম প্রায়ই। আমিও তাদের বলতাম এরকম কিছুই হয়তো হবে , আশা করি ফিরে আসবে শিঘ্রি।

তবে ঘটনা যে আমার সাথেও ঘটে যাবে তা বুঝতে পারি নি। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮। আমার স্ত্রী ছিলেন ২ মাসের প্রেগন্যান্ট। কিছু জটিলতা দেখা দেয়ায় সেদিন ডাক্তার দেখানোর এপয়েন্টমেন্ট নিলাম। অফিসে সেদিন  WATSILA ইঞ্জিনগুলোর  ডে লং বেসিক ট্রেনিং চলছিলো ।

আমি সিনিয়রকে বলে আগেই বের হয়ে গেলাম। যেহেতু আমি অফিস থেকে আগেই বের হয়েছি তাই আমি অফিসের গাড়ির অপেক্ষায় না থেকে  অটোতে শেয়ারে উঠেছিলাম। বাসায় যাওয়ার রুট টা মূলত আমার এরকম ছিলো সামিট প্ল্যান্ট-কড্ডার মোড় – গাজিপুর চৌরাস্তা- গ্রেট ওয়াল সিটি। কয়েকবার ভেংগে ভেঙ্গে যেতে হতো।

কড্ডার মোড়ে পৌছে আমি রাস্তা ক্রস করে ঐপারে গিয়ে লেগুনা বা অটোতে আবার উঠবো।  এই মুহুর্তে তাকিয়ে দেখি  রাস্তার অপোজিটে আমাদের সামিটের গাড়ি চলে আসছে। আমি তখন ওয়েট করতেছি সামিটের গাড়ি এইদিকে আসলে উঠবো। এই দিকে হঠাত একটা লোক আমার কনুই পেচিয়ে ধরলো।  বুলবুল ভাই, আমার সাথে চলেন । আমিতো অবাক, বললাম আমার অফিস গাড়ি চলে আসছে , এরপর সে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলো আমার সাথে।

এই ফাঁকে আমার কলিগরাও পৌছে গেছে। পাশে একটা কালো কাঁচে ঘেরা আরেকটি গাড়ি দাঁড়ানো ছিলো । এবার সেখান থেকে আরো লোক বেরিয়ে এলো। কিন্তু আমার কলিগেরা তো আমাকে ছাড়বে না। একজন কলিগ তো খুবই ফাইট দিলো। এরপর আমি নিজেই কলিগদের শান্ত করলাম। উঠে গেলাম তারা যেভাবে চায়। কারণ আমিতো জানি আমি নিরাপরাধ। তারা যখন আমাকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চায় করুক, আমিতো কোনো অপরাধ করিনি , আমি কেনো ভয় পাবো!

এই ফাঁকে তারা ফাইট করা সেই ভাইকেও তুলে নিছে । হায়াসে ছিলো মানুষ ভর্তি , এর মধ্যে আমাকে আর ঐ ভাইকে বসিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দিলো, চোখে কালো কাপড়। ভাই আমার এখন বাস্তবতা বুঝে আতংকিত হয়ে গেলো। আমি টের পেয়ে গেছি ভাই জাস্ট ফেঁসে গেছে।বেচারী আতংকে কান্নকাটি করা শুরু দিলো। পাশের লোক বললো, তোকে সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার মামলা দিয়ে দিবো। আমি বললাম আমার অপরাধ কি ? আমাকে ধরেছেন কেনো? বললো তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবো, তুমি নিরপরাধ হলে ছেড়ে দিবো। আমি দু’আ দুরুদ পড়তে লাগলাম। কখন পরীক্ষা চলে আসে ভাবতে লাগলাম । তারা এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, এই ফাকে তারা টের পেলো আমার অফিসের গাড়ি এই গাড়িকে ফলো করে করে আসতেছে।

এবার তারা অনেক কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করা শুরু করলো। আমি বুঝতে পারলাম কিছু একটা ঝামেলায় পড়ে গেছে তারা। বারবার আমার বয়স জিজ্ঞেস করতেছে। জন্ম তারিখ জিজ্ঞেস করতেছে। অলরেডি তাদের কাছে আমার এন আইডি কার্ড এর কপি ছিলো। এই রহস্য পরে বুঝতে পারছি। যাই হোক অনেক যোগ বিয়োগ করে আমার বয়স বের করে কিছু একটা ঠিক করলো তারা।

এই ফাঁকে আমাদের ডেপুটি প্ল্যান্ট ইন চার্জ তিন স্যার, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রা সবাই প্ল্যান্ট থেকে গাড়ি নিয়ে চলে আসছেন। এখন দুই গাড়ি চলে আসলো ওদের গাড়ির সামনে।

সামিটের ওমর শরিফ স্যার, আবু বকর স্যার, মিজান ভাই ওদের সাথে কথা বলে আমাদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, তারা কোনোভাবেই আমাকে ছাড়বে না, তবে ঐ ভাইকে ছেড়ে দিলো। আমার পরীক্ষা এরপরই শুরু হয়ে গেলো। বড় একটা কালো কাপড়ে পুরো মাথা ঢেকে দিয়ে বেধে দিলো । চুনোপুটি একজন আমাকে বললো, বুলবুল ভাই আপনি অনেক শান্ত আছেন। আপনার মতো অনেকে অনেক প্যানিকড হয়ে যায়। আরো অনেক কথা, মাঝে মাঝে কাপড় সরিয়ে আমার মোবাইল থেকে আমার মেয়ে ফাতিমার ছবি দেখিয়ে বললো, আপনার মেয়ে তাই না? খুব সুন্দর, পার্কে গেছিলেন তাই না? আপনার স্ত্রী আছে, বাচ্চা আছে? ভালো ভালো সব বলে দেন , স্যার ছেড়ে দিবে। আপনি যেমন বুয়েটের স্টুডেন্ট , তেমনি স্যার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ছিলো।

আমি বললাম কি বলে দিবো বলেন ? বললো , আপনার সাথে আর কে কে আছে বলেন? আমি বললাম, কি বলছেন এগুলো ? আমি কোনো রাস্ট্রবিরোধী, দেশ বিরোধী কাজে জড়িত নেই। পুরো ঘটনায় আমি বারবার এই বক্তব্যে অটল থেকেছি যে, আমি কোনো রাস্ট্রবিরোধী দেশ বিরোধী কাজে জড়িত নেই, বরং আমি বরিশাল ১১০ মেগাওয়াট প্ল্যান্ট ও গাজিপুর ৩০০ মেগাওয়াট প্ল্যান্ট গড়ার অন্যতম কারিগর ছিলাম। সামিট বরিশাল সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে এবং সামিট গাজিপুর এরপর সবচেয়ে দ্রুততম প্ল্যান্ট তৈরি করার রেকর্ড করেছিলো। আর সেখানে আমার কি অবদান ছিলো কেউ সেটা অস্বীকার করতে পারবে না।

প্রথম পরীক্ষাঃ

আমি অনুমান করছি গাড়ি তখন কড্ডা থেকে বাইপাসের দিকে। আইইউটিতে (IUT) আমার পরিচিত একটা ছোটো ভাই ছিলো । বছরে এক দুইবার সে আমার সাথে দেখা সাক্ষাত করতে আসতো। আমাকে অফিসার বললো তাঁকে ফোন দিতে যে তোমার সাথে দেখা করতে আসছি। আমি বললাম , আমি ফোন করবো না, আপনার দরকার হলে আপনি নিজ দায়িত্বে ফোন দিয়ে নিয়ে আসেন । তখনই ঠাস করে একটা চড় দিলো ঐ অফিসার। এরপর আমাকে চুনোপুটি কয়েকজন এটা সেটা বুঝায় তোমার ওয়াইফ আছে, বাচ্চা আছে তাদের কথা চিন্তা করো। আমি বললাম, আই ইউ টির এই ছেলের মা-বাবা কি ভাববে আমাকে, তাদের ছেলেকে বিপদে ফেলেছি আমি। আপনারা তো আমাকে ছাড়তেসেন না।

যাই হোক, বহু ভয় টয় দেখিয়ে তারা আমাকে রাজি করালো কথা বলতে। কিন্তু ঐ ছোটো ভাই সারা বিকাল ই ফোন ধরলো না। মেসেঞ্জারে তাঁর সাথে আমার আইডি থেকে নক দিলো ঐ অফিসার,  তাও রেসপন্স আসলো না। এক পর্যায়ে তারা হাল ছেড়ে দিয়ে গাড়ি চলতে লাগলো।

অবজারভেশন- ফোন করে না পাওয়াতে হাল ছেড়ে দেয়ায় এটা স্পষ্ট হলো তাদের কাছে কোনো ক্লিয়ার এভিডেন্স, এরেস্ট ওয়ারেন্ট, এমনকি বর্তমান অবস্থান নিয়ে কোনো ইন্টেলিজেন্স কিছুই ছিলো না। একজনকে তুলে নিয়ে ভয় দেখিয়ে আরো নিরপরাধ কয়েকজনকে তুলে নিয়ে নাটক করা হলো এদের উদ্দেশ্য। নতুবা ক্যাম্পাসে ঢুকে ভিসির সহায়তায় ওকে এরেস্ট করা তো কঠিন কিছু ছিলো না।

দ্বিতীয় পরীক্ষা

মাগরিবের পর এবার রাকিব ভাই এর কথা জিজ্ঞেস করে, যার সাথে আমার গত ৬ মাসেও  যোগাযোগ হয় নি। তাঁর কথা জিজ্ঞেস করায় আমি হতবাক হয়ে যাই, তারা তাকেও ট্র্যাপে ফেলতে চায় ! আমি জোর করে বলা শুরু করি, আপনারা বলেছেন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিবেন, কিন্তু তিন চার ঘন্টা হয়ে গেলো, তাও ছাড়তেছেন না। তারা বারবার আমাকে বুঝাতে থাকে তোমাদের একসাথে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিবো।

এভাবে কল করার জন্যে চাপ দেয়া শুরু করে, আমার আইডি থেকে চ্যাট ও করে।এক পর্যায়ে আমি যোগাযোগ করতে বাধ্য হই। আমাকে ইনস্ট্রাকশন দেয়া হয় নতুনবাজার ফুট ওভার ব্রীজ এর নিচে যেনো সে আসে, এবং আমাকে থ্রেট দেয়া হয় কোনো রকম কৌশল করলে সেটা ভালো হবে না।  এখানে আমি তারপরও একটা কৌশল অবলম্বন করি।  তবে রাকিব ভাই তাও ধরতে পারে নি। আমি রাকিব ভাইকে আপনি করে বলি কিন্তু এবার যখন কথা বলি, তখন আমি তাঁকে ‘তুমি’ করে বলি। বললাম, নতুন বাজার ফুট ওভার ব্রীজের নিচে আসো। আমি বসে বসে আল্লাহ আল্লাহ করি যেনো ভাই আমার সিগনাল টা পায় , কিন্তু বেচারী সিগন্যাল টা বুঝে নি। ফুটওভার ব্রীজের কাছে আসতেই তাঁকে তুলে নিয়ে আসে তারা।

অফিসার তখন জিজ্ঞেস করে ‘জামান’ কোথায়  আছে জানো? আমরা দুইজন বললাম না, জানি না। তোমরা জানো, ‘জামান’ তাঁর মামাকে কি মেসেজ পাঠিয়েছে? তখন আমাদের অফিসার একটা ভয়েস মেসেজ শোনায়, সেখান সেই জামান ভাই তাঁর মামাকে বলছে, আমি একটু আত্মগোপনে আছি, আমার আব্বু আম্মুকে চিন্তা করতে মানা করো। “ আমরা তো অবাক হয়ে যাই, জামানের আত্মগোপন করার কি আছে !  এরপর বহু অনুরোধ করেও তারা আমাদের ছেড়ে দেয় নি। বরং পরের দিন যা ঘটলো তাতে আমার ছাড়া পাওয়ার আশা সব নিভে যায় একেবারে।

আমাদের একটি বিল্ডিং এ ঢুকানো হলো

অনেকক্ষণ গাড়ি চলবার পরে এক জায়গায় এসে আমাদের মাথা কালো টুপি দিয়ে ঢেকে এক বিল্ডিং এ ঢুকানো হলো। আমি বুঝার চেষ্টা করলাম , এটা কি ডিবি অফিস মিন্টো রোড? কয়েকজন ভাইকে এর আগে মিন্টো রোড এ নিয়ে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো।

আমাদেরকে দুইটা আলাদা সেলে ঢুকানো হলো যাকে ইতোমধ্যে আয়নাঘর হিসেবে সবাই চিনে ফেলেছেন। আয়নাঘরের মধ্যেই টয়লেটের ব্যবস্থা, পাশে কোনো রকম শোয়ার ব্যবস্থা। আমার লম্বা শরীর ছড়ানোর কোনো ব্যবস্থা সেখানে ছিলো না। রাত ১২টা ১টার দিকে  আমার প্রথম ডাক পড়ে। পিছনে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে চোখ বেধে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। মনে মনে প্রস্তুতি নিতেছিলাম আরেকটি যেকোনো পরীক্ষার।

এ পর্যায়ে শুধু একজনই জিজ্ঞাসাবাদ করে।  একের পর এক কোশ্চেন করে নাম, ঠিকানা, গ্রামের ঠিকানা, শহরের ঠিকানা সব ই নেয়া হয়। এমনকি তারা জিজ্ঞেস করে পুলিশ বা সশস্ত্র বাহিনীতে কেউ আত্মীয় আছে কিনা আমার। এরপর জিজ্ঞেস করে, তারপর বলো এই লাইনে কিভাবে আসছো ? কে কে আছে তোমার সাথে? জিজ্ঞেস করলাম কোন লাইন, আমি সাধারণ মুসলিম, নাম, রোজা করার চেষ্টা করি, বই পড়ি ? এর বাইরে তো কিছু না। যাই হোক তারা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এসবই জিজ্ঞেস করতে থাকে।

সে এমন চাপ দেয় যে তাঁকে কিছু না কিছু স্টোরি বলতেই হবে। আমিতো অবাক হয়ে যাই, আমি বলি আমার অপরাধ টা কি ? আর তারা আমার স্টোরি জানতে চায় ।

মানে ব্যাপারটা এমন হয়ে গেলো  যে, অপরাধীকে ধরে এনে জিজ্ঞেস করতেছে তোমার অপরাধ কি কি বলো? এছাড়া তাদের কোনো এভিডেন্স নেই , জিজ্ঞাসা করার ও কিছু নেই । সে বলে তোমার পরিচিত তোমার মত ১০টা নাম দাও , আমরা তোমাকে ছেড়ে দিবো। এভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই শুধু স্টোরি শোনা, আর নাম দেয়ার জন্যে চাপাচাপি করতে থাকে। তবে সেদিন আমাকে কোনো নির্যাতন করা হয় নি।

পরদিন সকালে আবার ডাক পড়ে। এবার ভিন্ন অফিসিয়াল, কিন্তু কোশ্চেন সব একই, নাম, ঠিকানা, তথ্য যাচাই বাছাই ইত্যাদি। আমি বুঝতে পারছিলাম না  কি হচ্ছে, কি করা হবে আমাকে নিয়ে , বারবার আমি বলতেছি , আমি কোনো দেশবিরোধী , রাস্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নেই, কেনো আমাকে ছেড়ে দিচ্ছেন না?

এরপর আমাকে ঐ বিল্ডিং এর বাইরে আরেকটা বিল্ডিং এ নিয়ে চোখ খুলে দিয়ে দুই পাশে দুই চুনোপুটিকে সাথে নিয়ে ফটোসেশন করায়। বুঝলাম গেইম ইজ ওভার, যদিও কোনো মিডিয়া ছিলো না, বুঝলাম আমাকে আর ছাড়া হবে না, তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে আটকে ফেলেছে।  আরো বুঝলাম এটা মিন্টো রোড না, এটা র‍্যাব-১১।

দুপুর ১২টায় আবার আমাকে তাড়া দেয়া হয় দ্রুত রেডি হতে আমাকে নিয়ে বাইরে যাবে, আমি এবার ভয় পেয়ে যাই এবার আবার কাকে ফোন দিতে বলবে! মনে মনে ঠিক করি যতো প্রেশার ই দিক আর কাউকে ফোন দিতে রাজি হবো না। এরপর আমাকে আবার একটা কালো হায়াস গাড়িতে তোলা হলো , এবার দেখতে পারলাম কালো পোশাকে অনেক গুলো র‍্যাব এর লোক গাড়িতে। মানে মনে হয় আমি এক বিশাল কিছু,  ১০/১২ জন পাহাড়া দিয়ে আমাকে কোথাও নিয়ে যাবে। পরে আমাকে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

অবশেষে আনুমানিক ৩টার দিকে আমার মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে অনেক গলি গুপচি পেরিয়ে একটা ছোটো রুমে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বসালো। রুমটি ছিলো খুবই ছোটো, সেখানে আর কোনো মানুষজন ছিলো না। বোঝাই যাচ্ছে লুকিয়ে এনে এখানে আমাকে হাজির করা হয়েছে। কোনো উকিল নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয় নি। ফ্যামিলির সাথে কথা বলার ও সুযোগ দেয়া হয় নি। যা কিনা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।

ম্যাজিস্ট্রেট আমার বক্তব্য জানতে চাইলো, আমি জোর গলায় বললাম, সামিট প্ল্যান্টে চাকুরি করা একজন ইঞ্জিনিয়ার।  আমাকে ধরে নিয়ে আসছে, কেনো নিয়ে আসছে আমি জানি না, আমি দেশবিরোধী বা রাস্ট্রবিরোধী কোনো কাজে জড়িত নেই। আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলতে চাই। ম্যাজিস্ট্রেট কিছু না বলে কাগজে কিছু লিখে দিলো । এরপর তারা আমাকে আবার গাড়িতে করে আগের জায়গায় নিয়ে যায়।

পর্যবেক্ষণঃ

মূলত তারা আমাকে গুমই করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ব্যাপারটা আমি কখনো চিন্তা করতে পারি নি।  বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ যে সাধারণ মানুষের সাথে এই পর্যন্ত চলে গিয়েছে তা আমার চিন্তার ও বাইরে ছিলো।

প্রথমত, যেহেতু আমাকে তুলে নেয়ার সময় বিশাল গেঞ্জাম এবং অনেক সাক্ষী হয়ে গিয়েছিলো আমাকে গুমের কোনো সুযোগ ছিলো না। তাই আমাকে তুলে নেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তারা তিনটার একটা কাজ করতে পারতো – ১) আমাকে মামলা দিয়ে এরেস্ট করা। ২) পুরাতন কোনো মামলায় অজ্ঞাতনামা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া যেটাতে আসলে অভিযোগ অনেক হালকা হয়ে যায়। ৩) ছেড়ে দেয়া।

১) মামলা রুজু করা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, আর আমার বিরুদ্ধে তো তাদের কোনো প্রমানিত অভিযোগও নেই, তাই এটা অসম্ভব ছিলো।

২) পুরাতন মামলায় পুরো নামের কোনো অংশ মিলিয়ে যদি দেখানো যায়, এজন্যেই তারা গাড়িতে বারবার আমার বয়স নাম চেক করছিলো। তারা ২০১৭ সালের একটি  মামলায় জনৈক ‘হাসান’ নামের সাথে মিল দেখে আমাকে এই মামলায় এরেস্ট দেখিয়ে দেয়।আর এজন্যে গত রাত থেকেই তারা আমার সকল ডিটেইলস নেয়।  এগুলো সবই আমি পরে বুঝেছি।

রিকভারি- এরেস্টের সময় সাথে কি ছিলো এটা মামলার বিচারে খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু অনেক সাক্ষী ছিলো এরেস্টের সময় , তাই আমার সাথে কোনো রিকভারি দেখাতে পারে নি, এমনকি মোবাইল ঘেটেও কিছু পায় নি। যদি গুম করতে পারতো তাহলে হয়তো পিস্তল, বই, চাকু যা ইচ্ছা দেখিয়ে জাতির সামনে আমাকে জ. হিসেবে উপস্থাপন করতো।

লুকোচুরি/তাড়াহুড়ো/ছেড়ে না দেবার কারণ- সামিটে আমার সিনিয়ররা খুব দ্রুত হেড অফিসে ইনফর্ম করে দেয়। সামিটের হেড অফিসে তখন একজন অবসরপ্রাপ্ত আর্মি হাই অফিসিয়াল ছিলেন। স্যার তখন আমাকে গুমকৃত গাড়ির নাম্বার দেখে বের করতে পাঠিয়ে দেন। যেকোনোভাবেই হোক, এটা যে র‍্যাব ১১ এর নাম্বার সেটা বেরিয়ে আসে। এই তথ্য যখন বেরিয়ে আসে তখন আমার শশুড়পক্ষের আরো একজন অফিসিয়াল তিনিও র‍্যাব-১১ তে ফোন দেন। মোট কথা র‍্যাব -১১ আমাকে নিয়ে প্রেশারে পড়ে যায়। পরদিন সামিটের ঐ স্যার আমার বাবাকে জানিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জ  কোর্টে তোলা হবে। এদিকে বাবা তখন গাজিপুর আমার মেয়ে আর ওয়াইফের কাছে এবং থানায় থানায় দৌড়াতে ব্যস্ত , জিডি করতে ব্যস্ত।

তখন আমার জ্যাঠা আর জ্যাঠাতোভাই নারায়ণগঞ্জ কোর্টে চলে আসেন, কিন্তু তারা আমাকে খুঁজে পান না। আর এজন্যেই লুকিয়ে আমাকে গোপন কক্ষে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তোলা হয়, যেনো জামিনের বিন্দুমাত্র সুযোগ ও না থাকে।

কোনো ধরনের তথ্য প্রমান নেই, কিচ্ছু নেই তারা কি আমাকে ছেড়ে দিতে পারতো না? অবশ্যই পারতো। কিন্তু র‍্যাবের এই অফিসাররা উচ্চ বিলাসী, যত জ. ধরে দেখাতে পারবে ততো তাদের পয়েন্ট, ততো তাদের পুরষ্কার, প্রধানমন্ত্রী পদক, রাস্ট্রীয় পদক, প্রমোশন। র‍্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে চলে এগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতা।

এরপর যখন আবার আয়না ঘরে ফেরত নিয়ে আসে, আমি তখনো জানি না আরো কয়দিন থাকতে হবে। প্রহরীদের কাছ থেকে ১/২ দিন পর জানতে পারি ৮ দিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ ৮ দিন পরে আমাকে আবার কোর্টে চালান করা হবে।

জামান এর ভয়েস মেসেজ- পরে জানা গিয়েছিলো আসলে এই অফিসার ;জামান’ কে আরো ৭ দিন আগেই তুলে এনে গুম রেখেছিলো। তাঁর সাংবাদিক চাচাতো ভাই , পুলিশ অফিসার ফুফা মিলে অনেক খোজাখুজি করতেছিলো । তারা যাতে তৎপরতা কম চালায় , সেজন্যে জামানকে দিয়ে এ ধরনের মেসেজ পাঠায়। আর জামানের মোবাইল, ফেসবুক, মেসেঞ্জার থেকেই আমাদেরকে টার্গেট করে।

পরবর্তীতে আমার সাথে ধরা রাকিব ভাই, আগেই গুমকৃত জামান ভাই আরো একজন কে নিয়ে ৭/৮ দিন পরে ঠিকই জ. নাটক সাজিয়ে মিডিয়াতে দেয়। পরে জেনেছি তাদেরও সেইম স্টোরি, তুলে নিয়ে পরে নাটক করে মামলা দিয়ে দেয়।

এরপরের দিনগুলো কেটে যায় অনেকটা একই প্যাটার্নে । চোখ বেধে চেয়ারে বেধে জিজ্ঞাসাবাদ , কখনো ফেসবুক থেকে , কখনো মেসেঞ্জার থেকে এটা সেটা । সংক্ষেপে যে বিষয়গুলো নিয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করতো।

১) ম্যাট্রমনি পেইজ- আমি ‘সুকুনের সন্ধানে’ নামে একটি পেইজ চালাতাম যেখানে বিয়ের জন্যে কাজ করতাম, তারা এই বিষয়টাকে খুব অপরাধ হিসেবে দেখে। আমাকে অনেক কথা শুনিয়ে মানসিক অত্যাচার করেছিলো।

২) অমুকের সাথে কথা, তমুকে সাথে দেখা করেছো কেনো ? মসজিদে বসে কি করতা, বাসায় এনে কি করতা, অমুকের সাথে রিলেশন কেনো । আজব ব্যাপার এগুলো কি অপরাধ নাকি ? সমাজে বসবাস করলে একই ঘরানার মানুষ একে অপরের সাথে মিশবে না? আপনার কাছে কোনো তথ্য থাকলে বলেন ? আমরা মিটিং করে কোথায় বোমাবাজি করছি বলেন ? এগুলো কেমন কোশ্চেন ভাই ?? মাঝে মাঝে আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারতাম না। এদের ইন্টেলিজেন্স স্কিল আর স্টুপিডিটি দেখে মেজাজ গরম হয়ে যেতো। তখন ওই অফিসার ও চিল্লাতো সমানে। আমি ভাবতাম এই মনে হয় আমাকে পিটানো শুরু করলো।

৩) তিন নাম্বার দিনে আমি সর্বেশেষ পরীক্ষার সম্মুখীন হলাম। আই ইউ টির ছেলেটা মেসেঞ্জারে রেসপন্স করেছে, ঐ অফিসার আমার হয়ে তাঁকে রিপ্লাই দিয়েছে এবং এমন একটা প্লট সাজাচ্ছে যাতে সে জব খুজতে আমার কাছে আসে। প্রসংগত ঐ ছেলে আমার কাছে চাকরি খোঁজার কথা বলেছিলো। যেহেতু র্যাব-১১ এর পাশে পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে সেহেতু এদিকে আসলে ধরা যাবে এমন একটা প্ল্যান। কিন্তু ঐ ছেলে নাকি আমার ফোনে বারবার কল দিচ্ছে। এখন অফিসার আমাকে বলে তুমি ওকে ফোন দিয়ে অমুক জায়গায় আসতে বলো। ততোদিনে আমি মনে মনে ফিক্সড করে নিয়েছি ওদের আর কোনো কথায় আমি বিশ্বাস করবো না, আমাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তুলে ফেলেছে সো গেম ওভার। আমি দৃঢ় চিত্তে বললাম, আমি ফোন করবো না, ও যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে আপনি গিয়ে ধরে নিয়ে আসেন, সমস্যা কি?? এরপর সে খুব রেগে যায় , রুম ফাটিয়ে আবার চিৎকার করে। কিন্তু আমি অটল থাকি। আবারো ভয় পাচ্ছিলাম এখনই না নেমে আসে নির্যাতন।

কিন্তু আল্লাহর রহমতে কোনো এক কারণে তারা আমার উপর একদিনই সেই অর্থে নির্যাতন করে নি। যেটা করতো সেটা হলো আয়নাঘরে লকারে উপরে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে সারা রাত দিন দাড় করিয়ে রাখত। দাঁড়াতে দাঁড়াতে আমার পা ফুলে যেতো। রাত ৩টা থেকে ৬টার দিকে প্রহরীরা দয়া করে একটু রেস্ট দিতো , কিন্তু ওই সময়ও কুরআন চাইলে কুরআন দিতো না। ৫/৬ নাম্বার দিন থেকে আমাকে কুর’আন দেয়া হয়।

৪) এভাবে সময় কাটতে থাকে , কিন্তু আয়না ঘরে দিন যেনো কাটেই না। মেয়ে ফাতিমা, ওয়াইফ, বাবা, মা , ছোটো ভাই সবার কথা খুব মনে পড়তো। গাজিপুর চৌরাস্তায় আমরা অনেকটা একাই থাকতাম, ফাতিমাকে নিয়ে ওর মা কি করতেছিলো তাই ভাবতাম সারাদিন। আগের স্মৃতি সব মনে পড়তো, আর মনে হতো কোনোদিন আর কি দেখা হবে!

৫) আমার রিমান্ড চলার সময় আমার প্রেগন্যান্ট ওয়াইফকে দুই দিন র‍্যাবে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসা থেকে আমার ল্যাপটপ, ওয়াইফের মোবাইল নিয়ে যাওয়া হয়। অভিভাবকের উপস্থিতিতে এক প্রকার রিমান্ডই চলে ওর উপর এই সময়।

৬) এভাবে শেষদিন ঘনিয়ে আসলো । শেষের আগের দিন আমাকে খুব আপ্যায়ন করলো, ভালো খাবার দিলো , আপেল দিলো।  শেষবারের মতো আমাকে ডাকা হলো। বললো, বুলবুল তোমাকে আমরা ছেড়েই দিতাম , কিন্তু তোমার অফিসের কলিগরা তো দেখে ফেলছিলো, তোমাকে এনে সব কিছু খোজখবর করার জন্যে তো সময় লাগে। কিন্তু ওরা দেখে ফেলায় তোমাকে মামলা দিয়ে দিতে হয়েছিলো।  আমি কিছু আর বললাম না। মনে মনে ভাবলাম, ওরা আমাকে সেইভ করতে না আসলে আমাকে নিয়ে যে কি করতেন আপনারা…

আরো বললো, এই মামলায় ৬/৭ মাস লাগবে জামিন পেতে, বের হবার পর আগের কারো সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবা না , একদম ভালো হয়ে যাবা(!)। আমাদের অফিসে আসবা নিয়মিত। আর যদি আবার যোগাযোগ করো, তাহলে কিন্তু আমরা আবার তোমাকে নিয়ে আসবো। আর ম্যাট্রিমনি পেইজ চালাবা না সব বন্ধ।

আইন-আদালত নিয়ে কিছুই না জানা আমি হতবিহবল হয়ে র‍্যাব-১১ থেকে গাড়িতে উঠলাম। আশ্চর্যের বিষয় এবার গাড়িতে মাত্র ২/৩ জন। কোর্ট, হাজতি গাড়ি হয়ে নিয়ে গেলো নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে। জেল, সে তো আরেক বিশাল অধ্যায়, বই লেখা যাবে সে জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। আপাতত আমার মামলাটির এজহার বিষয়ে একটু বলি।

জেলের ভিতরে গিয়ে আমি ধীরে ধীরে গুম, জ নাটক, র‍্যাব-১১, ইত্যাদি নিয়ে জানা শুরু করি। আমাকে যে মামলা দেয়া হয়েছে সে মামলার এজহার যোগাড় করি। হায় আল্লাহ! যে মামলা যে কাহিনী এটার মধ্যে দেয়া হয়েছে তাঁর সাথে দূরতম সম্পর্ক না আছে আমার সাথে, না এই মামলার একটা কথা তারা জিজ্ঞাসা করছে আমাকে। জাস্ট একটা নাম, জাস্ট একটা নাম দিয়ে এই মামলায় আমাকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বুঝতে পারি সন্ত্রাস বিরোধী আইন একটি ভয়ংকর আইন, তিন মাস আগে যার জামিন হবার চান্স নেই। আর সচারচর সব এডভোকেট এটা ডিল করতে পারে ও না।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮  থেকে ২০ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত জেলে ছিলাম। হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরে বের হয়ে আসি। বের হবার এক দুই দিন পরে সামিট পাওয়ার প্ল্যান্টে গিয়ে দেখা করি। এই পুরো সময়ে সামিটের অনেকেই বিশেষ করে তখনকার ডিপিএম স্যার নিয়মিত আমার আব্বুর কাছে খোজ নিতেন , সেটার একটা কারন ও ছিলো। আমি যাবার পর তারা আমাকে জানায় তিন মাসের মাথায় আমাকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, হেড অফিস থেকে প্ল্যান্টে চিঠি পাঠিয়েছে তাদের পলিসি অনুসারে। তারা আর কিছু বলতে পারছে না। পরদিন হেড অফিসেই যাই।

এখানে বলে রাখি সামিটের তখনকার এক্স আর্মি অফিসিয়াল এমডি স্যার আমার এক প্রকার আত্মীয় ও বটে। তবে এমডি স্যার এবার  আমার সাথে সাক্ষাত করলেন না। আমার আব্বুকে ডেকে নিয়ে বলেন, যেহেতু এটা একটা অমিমাংসিত কেইস, কবে এটার রায় হবে ঠিক নেই, তাই আমাকে আর নেয়া যাচ্ছে না। আর র‍্যাব-১১ নাকি তাঁকে জানিয়েছে, বুলবুল হাসান জ. নেতা, তাদের তদন্তে এসেছে। আফসোস যে , তিনি একবার নথিপত্র দেখবার প্রয়োজনো মনে করেন নি। ঘৃণায় আমি আর কথা বলার অনুরোধ ও করি নি।

এখানে বলে রাখি, সামিট তাদের পলিসি অনুসারে আমাকে ওই তিনমাসের অর্ধেক স্যালারি দিয়েছিলো, আমি এইচ আর এর কাছে আমার প্রভিডেন্ট ফান্ড এর টাকার কথা জিজ্ঞেস করি। এ পর্যায়ে তিনি বলেন , আপনি তো কেইসের একিউজড। আমি বললাম সেটা প্রমানিত নয়, সত্য আদালতে বেরিয়ে আসবে, এটা একটা মিথ্যা মামলা । পরে উনি এমডির সাথে কথা বলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের আমার অংশটা দেবার ব্যবস্থা করেছিলেন। ওই সময়ে বেকার অবস্থায় তিন মাসের বেতন একসাথে আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা খুব ভালো উপকারই করেছিলো।

এরপর আমি আমার মামলার কাগজপত্র , নথিপত্র সব রিসার্চ করা শুরু করি, মামলার এজহার, ১৬৪ জবানবন্দী, ১৬১ জবানবন্দী সকল নথি চেক করে দেখি, কোনো নথিতে আমার নামে কিচ্ছু বলতে কিচ্ছু নেই। এসব বিষয়ে ঢাকার একজন আইনজীবির পরামর্শে শুনানি এখনও হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে, বিচার শালিশ এর কোনো নাম গন্ধ নাই, কোর্ট শুধু কালক্ষেপন করে যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট দেশ স্বাধীন হবার পর প্রেক্ষাপট পালটে যায়, একে একে এসব র‍্যাব-সিটিটিসির করা মিথ্যা মামলা, জ. নাটক বেরিয়ে আসে। গত ৬ বছরে নতুন করে আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই নি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রেখেছেন।

কিছু না কিছু ত আছে নাহলে ধরলো কেনো ? জি ভাই কিছু তো আছেই , দাড়িওয়ালা ভাইদের সাথে মাসে ১/২ বার দেখা সাক্ষাত, চা-নাস্তা খাওয়া। ১/২ দিন আরবি শেখার আসর করা। সমাজে একটু চ্যারিটি কাজ করা, রোহিংগা ক্যাম্পে সাহায্য নিয়ে যাওয়া , ভাই ব্রাদারদের বিয়ে শাদিতে সহযোগিতা করা, পরাধীন বাংলাদেশে এইগুলোই ছিলো আমাদের অপরাধ। একারনেই আমাদের জেল-জুলুম এর শিকার হতে হয়েছে।

আরেকটা বিষয় জ.গি ট্যাবু এতোই মারাত্মক যে আপনার আত্মীয় স্বজনে যতোই হাই অফিসিয়াল লোকজন থাকুক না কেনো , একবার আপনি ট্যাগ খেয়ে গেলে তারা আর কখনো আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না।

সত্য-মিথ্যা প্রমানিত হয়ে গিয়েছে। কে সত্যের পথে আছে আর কে বাতিলের পক্ষে আছে প্রমাণ হয়ে গেছে। আমরা বর্তমান শাসকদের কাছে এসব অফিসারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি, যারা এসব নাটক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দেখিয়ে একদিকে নিজেরা পদক-পদবী বাগিয়েছে , অন্যদিকে মাসে মাসে জ.গি  নাটক সাজিয়ে সাজিয়ে বিদেশীদের কাছে স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের অপরিহার্যতা তুলে ধরে তাঁকে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *