দেশের বন্যা পরিস্থিতি ২৮ আগস্ট ২০২৪

বন্যা কবলিত হয়েছে পূর্বাঞ্চলের ১১ টি জেলা, তবে সস্তির বিষয় হল কোথাও কোথাও পানি কমতে শুরু করেছে। আবার অনেক এলাকা নতুন করে তলিয়ে যাচ্ছে বানের জ্বলে। ফেনি ও নোয়াখালী থেকে নেমে আসা পানিতে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে লক্ষিপুরের আরো এলাকা। সংশ্লিস্টরা বলছেন নিষ্কাশন ব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় পাই নামছে ধীর গতিতে। কুমিল্লায় ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। গৌমতি নদীর পানি নেমেছে বিপদ সিমার নিচে। অপর দিকে ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গেল কয়েকদিনে ডুবেছে লাকসাম, মোনহরগঞ্জ, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা।

নতুন প্লাবিত এলাকাগুলোতে ত্রান পৌছাতে হিমসিম খাচ্ছে সেচ্ছাসেবীরা। প্রায় ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন অর্ধলক্ষেরো বেশি মানুষ। কুমিল্লা জেলায় বন্যায় এপর্যন্ত প্রান গেছে শিশু সহ ১০ জনের।

লক্ষিপুরে বন্যায় পানিবন্দি প্রায় ১০ লাখ মানুষ, কোথাও কোথাও ৫-৬ ফুট পর্যন্ত পানি। জেলা সদর সহ ৫৮ টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি এলাকায় পানি ঢুকেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে মুশল্ধারে বৃষ্টি হওয়ায় নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রানের জন্য দেখা দিয়েছে হাহাকার। মেঘনার পানি বেরে হাতিয়ার ঘাসিয়ার চর নিঝুম দ্বিপও জ্বলমগ্ন। এখন পর্যন্ত পানিবন্দি জেলার ২১ লাখের বেশি মানুষ।

ফেনি সদর ও সোনাগাজির বন্যা পরিস্থিতি এখনো উন্নতি হয়নি। এই উপজেলাগুলোর সবকটি ইউনিয়ন বানের জ্বলে নিমজ্জিত। শহর এলাকা থেকে পানি নামলেও এখনো নেই বিদ্যুৎ, ইন্টার্নেট ও গেস সংযোগ। পূর্ব, পশ্চিম উকিলপাড়া, পেট্রোবাংলা, পাঠানবাড়ি, একাডিমি সহ বহু এলাকা এখনো পানিবন্দি। ফুলগাজি, পশুরাম ও ছাগলনাইয়ার কিছু এলাকায় পানি কমায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে।

এদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেই ত্রান সরবরাহ, দূর্গম এলাকাগুলোতে পৌছানো যাচ্ছেনা ত্রান। দূর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে ত্রান পাঠানো হচ্ছে।

রাত থেকে মুশলধারে বৃষ্টির ফলে বেলা বারার সাথে সাথে লক্ষিপুরে পানি বারছে। পানি বাড়ার ফলে মানুষ খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ঔষধের সংকটে পরেছে। দূর্গতদের দাবী তাদের কাছে যেন অতিপ্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী দ্রুত পৌছায়।

কুমিল্লায় গৌমতি নদীর পানি বিপদ সিমার নিচে নেমেছে ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় পানি কিছুটা কমেছে। কিন্তু উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ১০ লাখেরো অধিক মানুষ পানি বন্দি, নৌকার অভাবে প্রান্তিক এলাকায় ত্রান পৌছানো বেঘাত ঘটছে ফলে অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছেন। বেশিরভাগ মানুষ মানবেতর জিবনযাপন করছেন। বেশিরভাগ ই ত্রান কাছের এলাকায় দিয়ে যান কিন্তু দুরের লোকজন বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছেন। ফলে লাকসাম, মনহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট এসব এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগে পরেছেন। তাদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ত্রান পৌছানো উচিৎ।

ফেনীর ভিস্তির্ণ এলাকা জুড়েই বন্যার পানি, দাগনভূঞার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর হাজার হাজার পরিবার এখনো পানি বন্দি। বিস্তির্ন এলাকার দেখে হাওড় মনে হলেও একসময়ের মেঠো পথ ধরে চলছে স্পিডবোট। অনেক দূর্গম এলাকায় স্পিডবোটের ইঞ্জিন না চলায় ঠেলে নিতে হয় ত্রানবাহী বোট। দাগনভূঞার সবকটি গ্রামেই এখনো বন্যার পানির নিচে। বানভাসিরা ঘর ছেরে উচু ভবনে আশ্রয় নিলেও জুটছে না ৩ বেলা খাবার। গজারি সহ আশেপাশের আরো কয়েকটি গ্রামেও চলছে ত্রানের জন্য হাহাকার। ফেনির দাগনভূঞার গজারিয়া এলাকার কয়েকশ পরিবার অনাহারে আছে বলে জানা গেছে। তাই সেনাবাহিনী বোট ঠেলে ত্রান নিয়ে যাচ্ছে সেখানে।

ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ধানী জমি, ডুবে গেছে ঘর বাড়ি, আশ্রয়হীন মানুষগুলোর শেষ ভরসা স্কুলের বারান্দা ও উচু ভবনের ছাদ। অলস সময় কাটে ত্রানের অপেক্ষায়। তবে ধীরে ধীরে দূর্গম এলাকায় ত্রান পৌছানো শুরু হয়েছে।

ফেনীর বানভাসি ১৬ জন প্রসুতি সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১ জন জমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *