আজকের সর্বশেষ খবর হচ্ছে কোটা সংস্কার নিয়ে আলোচনার জন্য দুজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন পিতৃতূল্য হিসেবে অনুরোধ করছি, আন্দোলন থেকে সরে আসুন।
ঢাকায় শাটডাউন কর্মসুচিতে নিহত ৩ জন
রাজধানীর উত্তরা ও বাড্ডায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উত্তরায় সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আর বাড্ডায় নিহত হয়েছেন একজন। এই দুই জায়গায় আহত হয়েছেন কয়েক শ আন্দোলনকারী।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উত্তরায় নিহত দুজনই আন্দোলনকারী। আর বাড্ডায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ব্যক্তি পথচারী ছিলেন। তিনি পেশায় মাইক্রোবাসচালক বলে রামপুরার ফরাজী হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মিরপুর ১০ নম্বরে সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ
মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় পুলিশ বক্সে দেওয়া আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে বেলা দুইটার কিছু পরে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের পাশে নির্মাণাধীন একটি ভবনে দুজন পুলিশকে মারধর করা হয়।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
বেলা তিনটার দিকে ১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করছিলেন।
রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান নিহত
ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে এক ছাত্র নিহত হয়েছে। সে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকেও থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।
রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একটি সূত্র জানায়, নিহত ছাত্রের নাম ফারহান ফাইয়াজ রাতুল। আজ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকার সিটি হাসপাতালে ফারহানের মৃত্যু হয়। তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে।
সাভারেও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ নিহত ১
সকাল ১০টার দিকে সাভার থানা স্ট্যান্ড এলাকার বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন পাকিজা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হলে দুপুর ১২টার দিকে উপস্থিত পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়েন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত শিক্ষার্থীর নাম শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন। তিনি মিরপুরের এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনচার্জ মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, নিহতের বুকের মধ্যে অনেকগুলা গুলি (ছররা গুলি) লেগেছে। আনুমানিক তিনটার দিকে তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’
নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. মহিউদ্দিন বলেন, তাঁরা সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় থাকেন। তাঁর ছেলে ব্যাংক টাউন এলাকায় নামাজ পড়ে বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলন দেখতে গিয়েছিল। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছিল। সংঘর্ষে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট তাঁর ছেলের গায়ে লাগে।
বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে, গুলিবিদ্ধ ৩৭, আহত অর্ধশতাধিক
বগুড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থানে এসব সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৫ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে বগুড়ার সদর থানার পরিদর্শক মো. শাহীনুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে আবার কয়েক শ শটগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে শিক্ষার্থীরা পার্ক রোড, স্টেশন সড়ক ও ঝাউতলা এলাকায় অবস্থান নেন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলির শব্দে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পুলিশ, শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩৭ জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশকে উদ্ধার করল হেলিকপ্টার
সকাল থেকেই মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। একপর্যায়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে যায় পুলিশ। বাইরে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেই পুলিশ ছররা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে আহত হয়েছে অনেকে।
একসময় মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পরে কিছু পুলিশ তাদের উদ্ধারে দুটি হেলিকপ্টার আসতে দেখা গেছে। একটি হেলিকপ্টারে কয়েকজন পুলিশকে ছাদ থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এছাড়া দেশের আরো কয়েকশ স্থানে শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহত হয় অনেকে।