সাভারে পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে নির্মমভাবে ফেলা ইয়ামিন এর স্মৃতিচারণ

আহত ইয়ামিনকে পুলিশের সাজোয়া জান থেকে টেনে হিচড়ে ফেলার পর আবার রোড ডিভাইডারের অপরপাশে ফেলার ভিডিওটি আমরা প্রায় সকলেই দেখেছি। আহা কি নির্মম! সেই ভিডিওটি সামাজিক জোগাযোগ মাধ্যম সহ দেশি বিদেশি অনেক সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। এমন নির্মমতার শিকার যুবকের নাম শাইক আশাবুল ইয়ামিন। তিনি রাজধানীর মিরপুরের মিলিটারি ইনিস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যাান্ড টেকনলজিস এর এম আই এস টির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই সাভারের পাকিজা মডেল মসজিদের পাশে এই নির্মম ঘটনাটি ঘটে। 

১৭ জুলাই ইয়ামিন হল বন্ধের ঘোষণা পেয়ে বাড়িতে চলে যান। তবে ইয়ামিন বিচলিত ছিল তার বন্ধুদের নিরাপদে ঘরে ফেরা ও আন্দোলনে হতাহতের শিকার বন্ধুদের চিকিৎসা নিয়ে। ১৮ জুলাই জুহরের নামাজের পর আহত বন্ধুদের দেখতে সাভারের ব্যাংক টাউনের বাসা থেকে বের হন ইয়ামিন। 

নিহত ইয়ামিন এর বাবা মহিউদ্দিন জানান গুলি লাগার পর আহত ইয়ামিনকে সাজোয়া জানে করে ঘুরানো হয় পেনিক সৃষ্টি করার জন্য। তার পর মৃত্যুর আশংকা দেখা দিলে ফেলে দেয়ার যেই দৃশ্য সবাই দেখেছেন সেটা কোন মানুষ করতে পারেনা। অহত হওয়ার পর চিকিৎসা পেলে হয়তো ছেলেকে বাচানো যেত। যখন তাকে টেনে হিচড়ে ফেলা হয় তখনো ছেলেটা জিবিত ছিল, তারা চিকিৎসার কোন চেস্টা করেনাই। 

২ ছেলে মেয়ের মধ্যে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সৃস্টিকর্তার বিচারের প্রতি শান্তনা খুজছেন ইয়ামিন এর বাবা। চোখে জল নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন আপাত দৃস্টিতে মনে হবে আমার ছেলে নাই, কিন্তু এটা আসল পরিক্ষা না। আসল পরিক্ষা হচ্ছে আল্লাহ দেখতেছেন আমরা এটাকে কিভাবে নিচ্ছি। আমরা আল্লাহর এই ফয়সালাকে মেনে নিয়েছি। আমাদের আর কোন চাওয়া পাওয়া নাই, এজন্য কার বিচার করবে, কি পাব না পাব এসব ভাবছিনা, আল্লাহ বিচার শুরু করে দিয়েছেন। 

ইয়ামিনের নিজ হাতে গুছিয়ে রাখা বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত সনদ ও ক্রেস্টগুলোই এখন তার পরিবারের জন্য সৃতি। ইয়ামিনের বাবার ইচ্ছা ছিলো গ্রামের বাড়িতে দাফন হবে ইয়ামিনের, কিন্তু সেটিও করতে পারেন নি। অনেক বাধা পেরিয়ে স্থানীয়দের সহযগিতায় দাফন করা সাভারের ব্যাংক টাউন এর গোরস্থানে। ইয়ামিন এর বাবা বলেন থানা থেকে তাদের বলা হয়েছে পোস্ট মর্টেম করা কোন লাশ এখানে দাফন করা যাবে না। তখন ইয়ামিন এর বাবা বলেন আমি ছেলের লাশ পোস্ট মর্টেম করিনাই আর করবো ও না। ইয়ামিন এর কবরে একটি তুলসি গাছ ও একটি ফুলের চাড়া লাগিয়েছেন তার মা। 

কলোনির ভিতরেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ইয়ামিন এর ছবি সহ একটি শোক র‍্যালির ব্যানার টানানো দেখা যায়। বি এন পি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ইয়ামিন এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দিচ্ছেন সেখানে। 

বাবার কাধে সন্তানের লাশযে কতটা ভারি তা সন্তান হারানো বাবা ছাড়া কেউ বুঝবে না। ইয়ামিনের বাবা জানান ইয়ামিন ছিল আমার মত মেধাবী ও প্রতিবাদী। ইয়ামিনের ইচ্ছে ছিল পছন্দের বিষয় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়া শেষ করে দেশের বাইরে যাবেন উচ্চতর শিক্ষার জন্য। তার বাবার ইচ্ছা ছিল ইয়ামিন এর দাদার নামে গ্রামে একটি ফাউন্ডেশন করার। ইয়ামিন চেয়েছিলেন বাবাকে সেই বিষয়ে সহযোগিতা করবেন। 

এখন ইয়ামিন এর বাবা জানান ছেলের মৃত্যুর পর ছেলের নামেই করবেন সেই ফাউন্ডেশন। 

সূত্রঃ https://www.facebook.com/watch?v=396719089717603 

আরো পড়ুনঃ রিক্সায় চিত করে শোয়ানো নিহত নাফিজ এর স্মৃতিচারণ
ফেনীতে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চিহ্নিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *