সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ এর পর পর ই বিপুল অবৈধ সম্পদ নিয়ে আলোচনায় এসেছেন সাবেক ডি এম পি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। বিভিন্ন গনমাধ্যমে উঠে এসেছে নামে বেনামে গড়া তার হাজার কোটি টাকার সম্পদের বিবরণ। সাবেক ডি এম পি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া স্ত্রী সন্তান ছাড়াও সম্পদ এর মালিক বানিয়েছেন বোন, ভাগিনা, শেলক, শালিকা এমনকি বাড়ির কেয়ারটেকারকেও শতকোটি টাকার মালিক।
কি নেই আছাদুজ্জামান মিয়ার, রাজধানী ঢাকাতেই বিশাল বিশাল একাধিক বাড়ি, প্লট, ফ্লেট। ঢাকার বাইরেও আছে একরের পর একর জমি। এছাড়াও আছে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ, স্বর্ণ ব্যবসা, পরিবহন ব্যবসা, এমনকি জাহাজের ব্যবসায় ও আছে বিনিয়োগ।
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর আমেনাবাদ হাউজিং এলাকা – বর্তমানে আবাসন প্রতিষ্ঠান রুপায়নের অভিজাত হাউজিং প্রজেক্ট রুপায়ন স্বপ্ন নিলয় আবাসিক এলাকা। এখানকার ৩ নম্বর ভবনের ছষ্ঠ তলায় প্রায় ৪০০০ স্কয়ার ফিটের বিশাল রাজকিয় ফ্লেট রয়েছে আসাদুজ্জামান মিয়ার। জি ৫ নাম্বার এই ফ্লাট টি তিনি নিয়েছেন তার একমাত্র কন্যা আয়েশা সিদ্দিকার নামে। এখানকার একেকটি ফ্লাটের মূল্য নুন্যতম তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা।
পাশেই রাজধানীর আর এক অভিজাত এলাকা রমনার এসকাটন গার্ডেন এর ১৪ তলা বিশিষ্ট এপার্ট্মেন্ট প্রিয় নীড়। এটির ১১ তলায় ১৯৩৩ বর্গফূটের ২ টি ফ্লাট রয়েছে তার পরিবারের মালিকানাধীন শিপইয়ার্ড কোম্পানির নামে। যার চেয়ারম্যান সাবেক কমিশনারের স্ত্রী আফরোজা জামান, বড় ছেলে আসিফ শাহাদাৎ, ও ডাক্তার কন্যা আয়েশা সিদ্দিকাকে করা হয়েছে পরিচালক। তবে চেয়ারম্যান আফরোজা জামান, বড় ছেলে আসিফ শাহাদাৎ, ও ডাক্তার কন্যা আয়েশা সিদ্দিকার বসবাসের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ধানমন্ডির ১২/এ এর ৬৯ নাম্বার বাড়িতে। আসাদুজ্জামান মিয়া কমিশনার থাকা কালে এই বাসাতেই থাকতেন। কিন্তু এখন আর এখানে তারা কেউ থাকেন না। শুনা যাচ্ছে এটি বিক্রি করা হবে।
নিকুঞ্জের ৮/এ এতে ১০ কাঠা জমির উপর নির্মিত ৬ তলা বিশিষ্ট ৬ নাম্বার বাড়িটিও সাবেক ডি এম পি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার। তবে এটিও নিজের নামে নয়, এটি যুক্তরাস্ট্রে পড়ুয়া ছোট ছেলে আসিফ মাহাদিন এর নামে। গনমাধ্যমকর্মিদের আনাগোনায় সম্প্রতি বারিটির সামনে থেকে নামফলক তুলে ফেলা হয়েছে।
আফতাব নগরের সবচেয়ে বড় জমিটিও মিয়া সাহেবের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদিন এর নামে যার পরিমান ২১ কাঠা। এইচ ব্লকের ৮ ও ৯ নাম্বার রোডের একসাথে যার অবস্থান। এসব দেখাশুনা করেন সাবেক ডি এম পি কমিশনার নিজেই। ২১ কাঠার এই প্লট টি আফতাব নগরের সবচেয়ে বড় প্লট।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকে ছয় তলা বাড়ি সাবেক ডি এম পি কমিশনারের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে। বর্তমানে বিশাল এই ভবনটিতে একটি স্কুল চালু রয়েছে।
জোয়ার সাহারায় আছে একটি ছয় তলা বাড়ি। মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুরে মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে রয়েছে পাঁচ কাঠা জমি। একি এলাকায় শালিকা ফাতেমাতুজ জোহরার নামে চারটি শরিক মালিকানায় দশ কাঠা জমি। আফতাব নগরে নিজ নামে পাঁচ কাঠার প্লট। একি এলাকায় বড় ছেলে আসিফ শাহাদাতের নামেও পাঁচ কাঠা, ছোট ছেলে আসিফ মাহাদিনের নামে পাঁচ কাঠা, শালিকা পারভিন সুলতানার নামেও রয়েছে পাঁচ কাঠার প্লট।
পূর্বাচলে জমির কারবার করা মানুষের মুখে মুখে সাবেক এই কমিশনারের জমির ফিরিস্থি। পূর্বাচল ১ নাম্বার সেক্টরেই তার ছয়টি প্লট এর সন্ধান পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে বিক্রি করেছেন ২ টি প্লট। বিক্রিত প্লটের একটি ২০৩ নাম্বার রোডের ৭ কাঠার একটি প্লট। নিউটাউনে ৪০৬/বি রোডের ৩ নাম্বার প্লটটী আসাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে। ১০ কাঠার এই প্লটটি তে বর্তমানে শেড করে রাখা হয়েছে। তার পাশেই ৪০৯ নাম্বার রোডের সারে সাত কাঠার প্লটটি তার ছেলের। এর সাথেই ১৪ নাম্বার প্লটটিও তার আর এক ছেলের নামে। এসব প্লট এর খোজ খবর নিতে প্রায়ই আসেন সাবেক ডি এম পি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। তবে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ তাকে নিয়ে, একজন এলাকাবাসী বলেন উনার মুখ খুব খারাপ। স্থানিয়রা জানান ভালভাবে খোজ নিলে আসাদুজ্জামানের আরো অনেক প্লট পাওয়া যাবে। সংবাদ কর্মি দেখে স্থানীয়রা দলে দলে এসে বলতে থাকেন আসাদুজ্জামানের প্লটের সম্পর্কে। তারা বলেন প্রতিটই সেক্টরেই একাধিক প্লট পাওয়া যাবে তার নামে। সম্প্রতি ১০৮ নাম্বার রোডের বাআন্ন নাম্বার প্লটটি বিক্রির কথাও শুনা গেছে।
মিয়া সাহেবের ছোয়ায় বদলে গেছে তার বেকার শেলক নুরুল আলম মিলনের ভাগ্য। গাজিপুরের শ্রিপুরে তার নামে রয়েছে দের একর জমি। ফরিদপুরে কেয়ারটেকার সম্পর্কে কমিশনারের ভাগনে ইব্রাহিম কলম ও বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক। তার নামেও আছে গাজিপুরে দের একর জমি। বাদ পরেন নি স্ত্রির সৎ ভাই হাসিনুর রহমান সোহানও, ছয়টি জাহাজ রয়েছে তার নামে।
ডি এম পি কমিশনার হওয়ায় রাজধানীর পরিবহন কমিটির প্রধান ছিলেন আসাদুজ্জামান। সেসময় তার স্ত্রী ও শেলক শালিকার নামে পরিবহন খাতে করেন বিপুল বিনিয়োগ। স্ত্রী আফরোজা জামান মৌমিতা ট্রান্সপোর্টের চেয়ারম্যান, স্ত্রীর শত ভাই হাসিনুর রহমান সোহান ভাইস চেয়ারম্যান, কেয়ারটেকার ভাগনে ইব্রাহিম কলম এর ছেলে হারুনুর রশিদ ও ডি এম ডি, এবং আর এক ভাই নুর আলম পরিচালক। মধুমতি পরিবহন ও গুলশান চাকায় ও রয়েছে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ।
স্বর্নের ব্যবসায় ও রয়েছে বিপুল বিনিয়োগ স্ত্রীর সৎ ভাই হাসিনুর রহমান সোহান এর নামে। পিউর গোল্ড লিমিটেড এর ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। স্ত্রীর সৎ বোন রহিমা পারভিনকেও দেখানো হয়েছে পিউর গোল্ড লিমিটেড এর পরিচালক হিসেবে।
গাজিপুর কালিগঞ্জের চাদখোলা মৌজায় বিভিন্ন সময় স্ত্রীর নামে কেনেন আলাদা আলাদা করে ৪১, ২৬, ও ৩৯ শতাংশ জমি। এবং জোয়ার সাহারা মৌজায় পাঁচ কাঠা জমি ও ১০ কাঠার উপর ছয় তলা বাড়ি। ধানমন্ডির ১২/এ এর ৬৯ নাম্বার বাড়িতে বিলাশবহুল ফ্ল্যাট। রুপগঞ্জের কৈয়ামসাইর কায়েতপাড়া মৌজায় প্রায় এক বিঘা জমি। মিয়া সাহেবের গৃহিণী স্ত্রী শুধু সতকোটি টাকার জমি, বাড়ি আর ফ্ল্যাটের মালিক ই নন, ২ টি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও তিনি।
আথচ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ণে সাবেক ডি এম পি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তার স্থাবর-অস্থাবর সব মিলে সম্পদ দেখিয়েছেন পাঁচ কোটি একাশি লাখ একশ উনআশি টাকা। যা তার শুধুমাত্র যেকোন একটি প্লট বা বাড়ির সমান বা কম। যদিও সেই নথিতেও রয়েছে ব্যপক গড়মিল। যেমন ৩১ ভরির বেশি স্বর্ণের মূল্য দেখানো হয়েছে ২ লক্ষ টাকা, ফার্নিচার পঞ্চাশ হাজার, সাভারে ১৯০০+ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য ৩ লক্ষ টাকা সহ সব গুলোতেই কম দেখানো হয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়া তার কর্মজীবনের সকল আয় মিলে হবে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা। তাহলে এত সম্পদ কিভাবে গড়লেন সাবেক এই ডি এম পি কমিশনার প্রশ্ন ও তদন্তের দাবী সবার।
তথ্য সূত্রঃ https://www.youtube.com/watch?v=mx_QfOoCx_c