২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকে দিন যত গড়াচ্ছে ততই চাপ বারছিলো সরকারের উপর। আন্দোলন দমাতে শিক্ষার্থী ও সাধারন মানুষ কে হত্যার ফলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষও ক্ষোবে ক্ষেপে উঠছিলো। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা বর অংশের মধ্যে দ্বিধা কাজ করলেও প্রতিরক্ষা বাহিনী সরকারকে জানিয়ে দেয় তারা দেশের জনগণের উপর আর হত্যা বা নির্যাতন চালাতে পারবে না।
৫ আগস্ট এর সকালটা আর দশটা সকালের মত হলেও আন্দোলন শুরু হোওয়া আগের দিনগুলোর মত ছিলো না। আগস্টের শুরুর দিকে চারিদিকে শুরুহয় উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, আর শংকা। দেশে বিদেশে সবাই যেন একটি শেষ দেখার অপেক্ষায়। কিন্তু সে সময়টি যে চলে এসেছে সেটি বুঝতে পারেন নি শেখ হাসিনা। আগের রাতে অনেক দেরিতে ঘুমোতে যাওয়ার পরেও ৫ আগস্টে তিনি ভোরেই ঘুম থেকে উঠেন। ফযরের নামাজে দীর্ঘক্ষন দোয়া করলেন। নামাজ শেষে এক কাপ চা নিয়ে বসলেন গনভবনে নিজের অফিস কক্ষে বসেন। চারিদিকে নিরাপত্তা রক্ষী, এলিট বাহিনী এস এস এফ ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট – পি জি আর একাধিক বাহিনীর সদস্যরা গনভবনকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখেন। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীতে থাকা আস্থাভাজন পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে পরিস্থিতির খোজ খবর নেন ও দিক নির্দেশনা দেন।
কার্ফিউ বলবত আছে, বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান কার্ফিউ ভঙ্গকারিদের বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। রাজধানীতে প্রবেশের সব পথ বন্ধ রয়েছে একটা পিপড়াও ঢুকতে পারবে না।
শেখ হাসিনা নাস্তা করলেন, দুপুরে খাবারের মেনু কি কি হবে তারও খোজ খবর নিলেন। কারণ রাজনৈতিক নেতা ও শুশিল সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে নানান বাহিনীর শির্ষ কর্মকর্তাদের তার সঙ্গে দেখা করার কথা।
সেদিন ঐ সময় গন ভবনের বাইরে সাংবাদিক হিসেবে গিয়ে দেখা যায় চুপ চাপ একটি পরিবেশ। আগের দিনগুলোর তুলনায় গন ভবনের বাইরে নিরাপত্তা বেশ কড়া। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল গাড়ি চলা চল করতে দেয়া হয়েছিলো, এমনকি রিক্সা ও ব্যাটারি চালিত অট রিক্সাও। গনভবন থেকে কয়েক মিনিট গারি চালানোর দূরুত্বেই অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সৃতি জাদুঘর, সেখানেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে আগের দিনগুলোর মত গনভবন সংলগ্ন আসাদগেট থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের হেলমেট পরা নেতা কর্মিদের দেখা মিল্লো না, তাদের আসতে হয়তো আরো ঘন্টা খানেক সময় লাগবে। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়ে এসে দেখা গেল গাড়িগুলোকে সাকুরা বার এন্ড রেস্টুরেন্টের পাশের ছোট রাস্তায় ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেউ বলেন টেংক কেউ বলেন আরমড পার্সোনাল কেরিয়ার বা এপিসি সেগুলোর দেখা পাওয়া গেল হোটেলের সামনে। কিন্তু অস্বাভাবিক ব্যাপারটা হল যেদিক থেকে বিক্ষোবকারীদের আসার কথা সাহাবাগের বদলে টেংকগুলো বাংলামোটর এর দিকে তাক করে রাখা।
কেন্দ্রিয় শহিদমিনারের দিকে ততক্ষনে বেশ মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে। চাংখার পুলেও বিক্ষোভকারীদের ভীর, সেদিন ওখানে একটু পরি গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেক আন্দোলনকারী নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশটা চুপচাপ ছিলো। মেট্রো না চলায় মেট্রো স্টেশন ও নিঃশব্দ, তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর সদর দপ্তরের সামনে গোয়েন্দা পুলিশের সসস্ত্র সদস্যরা গাড়ি ও পথচারিদের থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন, তাদের আচরন ও ছিল ড়ুড়। কাছের মিন্টো রোড ও হেয়া রোডের মন্ত্রি পাড়াতেও নিরবতা দেখা গিয়েছিল। কেব্ল প্রধান বিচার পতির বাস ভবনের বাইরের দেওইয়ালে কিছু কর্মিকে রং করতে দেখা যায়। আগের কয়েকদিন এসব দেওয়ালে কিছু স্লোগান লিখেছিলেন আন্দোলন কারিরা। এরকম দেয়াল লিখন সেদিন পুরো ঢাকা শহর জুড়ে দেখা গেছে। মূলত ৩ টি স্লোগান বেশি দেখা গেছে- খুনি হাসিনা, সৈরাচার হাসিনা, এবং শেখ হাসিনা পদত্যাগ কর।
শেখ হাসিনা ততক্ষনে গনভবনের উর্ধতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠিক করছিলেন। বেশকয়েকটি গোপন সূত্রের মাধ্যমে ফাস হওয়া খবরের ইঙ্গিত বড় কিছু একটা ঘটতে চলেছে। নিজের দলের লোকদের ব্যবহার করে আন্দোলন দমাতে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে তিনি আগের দিনটা সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও হিতে বিপরিত হয়, আন্দোলন আরো ছড়িয়ে পরে। উভয় পক্ষে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেদিনই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা লং মার্চ টু ঢাকা একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট এর ঘোষনা দেন, আর তাতেই কাজ হল। দুদিন আগে ৩ আগস্ট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অফিসার্স এড্রেসে সেনাপ্রধান বলেছিলেন সসস্ত্র বাহিনী দেশের সার্থে দেশের জনগণের পাশে থাকবেন। তাই ২০ জুলাই থেকে মোতায়ন করা সেনা সদস্যরা দেশবাসির উপর গুলি চালাবেনা বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঐ বৈঠকে। সেদিন ই অর্থাৎ ৩ আগস্ট আন্দোলন কারিরা সরকার পতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে, বুঝা গিয়েছিল গন উভ্যুথ্যান আসন্ন। আর সবকিছুর চুড়ান্ত রুপটা দেখা যায় ৫ আগস্ট, সকাল সারে ১০টার মধ্যে শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীর শির্স কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান, তারাও শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাচ্ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের মতন ঢাকার পতন হতে চলেছে এমন প্রতিবেদন নিয়ে তারা বৈঠকে যোগ দেন, পার্থক্য হচ্ছে ১৯৭১ পাকিস্তানি বাহিনীকে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনী যৌথভাবে ঘিরে ধরেছিলো আর ২০২৪ এ এসে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবীতে বিক্ষোভকারিরা।
শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের ব্যার্থতার জন্য ভৎসনা করে বিক্ষোভকারিদের প্রতিরোধের নির্দেশ দেন। কিন্তু বাহিনী প্রধানরা রক্তপাত এড়াতে চান, তারা জানান গুলি করলে আরো হতাহতের ঘটনা ঘটবে, রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দমিয়ে রাখা যাবে না, তারা এখন অকুতোভয় প্রান দিয়ে হলেও গনভবনের দিকে এগিয়ে আসবে। তারা গোয়েন্দা প্রতিবেদন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে রাজধানীর প্রবেশমুখে লাখ লাখ মানুষ অবস্থান করছেন বলে জানান। ইতমধ্যেই যাত্রাবাড়ি, সাভার, আশুলিয়া, উত্তরা সহ বিভিন্ন জায়গায় অনেককে হত্যা করেছে পুলিশ। ৫ আগস্ট সকালেই নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। তখনো ডি এম পির কমান্ড সেন্টার চালু ছিলো, উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজধানীতে প্রবেশ বন্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু বৈঠকে তাদের শির্ষ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে জানান ঢাকার পতন এখন আর মাত্র ১-২ ঘন্টার ব্যাপার। পরিস্থিতি এমন দারিয়েছিলো যে শেখ হাসিনার সামনে তখন একটাই পথ খোলা আর তা হল পদত্যাগ। শেখ হাসিনা তাদের ধ্মক দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। আরো বলেন তাদেরকে তিনি তুলে এনে আজকের এই অবস্থানে বসিয়েছেন কিন্তু তারা সরকার আর রাস্ট্রকে রক্ষা করতে পারছেন না। বাহিনী প্রধানরা নিরুপায় হয়ে শেখ রেহানার সঙ্গে আলাদা ভাবে অন্য কক্ষে আলোচনা করেন। পরে শেখ রেহানা তার বোন শেখ হাসিনাকে পরিস্থিতি বুঝানোর চেস্টা করলেও তিনি রাজি হন নি। পরে কথা বলা হয় যুক্তরাস্ট্রে থাকা হাসিনা পুত্র সজিব ওয়াজেদের সাথে। হাসিনা পুত্র প্রথমে সরকার কে রক্ষায় বাহিনিগুলোর ব্যার্থতার অভিযোগ তুলেন। পরে পরিস্থিতির বাস্তবতা বুঝতে পেরে তিনি শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে পদত্যাগ করতে রাজি করালেন। তবে তিনি ধানমন্ডি ৩২ ও গোপালগঞ্জ এ গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চান। কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন এতে নতুন করে ঝামেলা তৈরি হতে পারে তাই