ভিটামিন ই ক্যাপসুল মানে ভিটামিন ই, অন্যান্য ভিটামিনের মতো ভিটামিন ‘ই’ ও শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানI ভিটামিন ই আমাদের শরিরকে যে কোনরকম অসুস্থতা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেI এছাড়া রুপচর্চা সহ নানা কারণে ভিটামিন ই ক্যাসুল ব্যবহার করা যায়। নানা রকম খাবার থেকে ভিটামিন ই পাওয়া যায়, তারপরও সহযে ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরনের জন্য অন্যান্য ভিটামিন ঔষধ এর মত ভিটামিন ই ক্যাপসুল পাওয়া যায়I যা সেবন করে সহযেই ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরন করা যায় এবং এই ক্যাপসুল রুপচর্চা ও নানা কাজে ব্যাবহার করতে পারেন।
ভিটামিন ই এর নানান উপকারের কথা ভেবে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিংবা নিয়ম না মেনে ইচ্ছামত ভিটামিন ই ক্যাপসুল বা ভিটামিন ই গ্রহন করে থাকেন এতে নানা রকম স্বাস্থ্য জতিলতা দেখা দিতে পারে।
তাই আজকে আমরা আলোচনা করব ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা, খাওয়া ও ব্যাবহারের নিয়ম সম্পর্কে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা
ভিটামিন ই আমাদের শরীরের কোষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন-ই ক্যান্সার, ভুলে যাওয়ার রোগ, এটি হার্ট সম্পর্কিত রোগ এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে। ভিটামিন ই আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত দরকারী। ভিটামিন ই এর কারণে আমাদের শরিরে ছত্রাকের মতো বিষাক্ত রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। ভিটামিন ই প্রোস্টাগাল্যান্ডিন নিয়ন্ত্রণ, প্রজনন, পেশী সংকোচনের পাশাপাশি পেশী মেরামত কাজ সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং লিভারের পিতল এবং পাচক সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও ত্বক ও চুলের যত্নে নানা ভাবে ব্যবহার করা যায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল
বয়সকে ধরে রাখতে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে কাজ করে ভিটামিন ই ক্যাপসুল। ত্বকের বিভিন্ন বলিরেখা, টান পড়া ত্বক ও অন্যান্য দাগ দূর করতেও এটি অনেক উপকারী। ই ক্যাপ নিয়মিত খেলে ত্বকে সানবার্ন কম হয়।
কসমেটিক শপে পাওয়া চাইনিজ স্কিন বা হেয়ার ক্যাপসুল নয়, ঔষধের দোকানে যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল পাওয়া যায় সেগুলো। এগুলো ২০০ মিলিগ্রাম এর গুলো সচ্ছ সবুজ রং এর হয় আর ৪০০ মিলিগ্রাম এর গুলো সচ্ছ কমলা রং এর হয়। আমরা যেই কাজএর কথা বলব তার জন্য ২০০ মিলিগ্রাম আর্থাত সবুজটাই যথেস্ট।
অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে ‘খাওয়ার জিনিস কি মুখে দেয়া যায়?’ তাদের জন্য বলে রাখি খাওয়ার ক্যাপসুল মুখে, চুলে, হাতে,পায়ে সবখানে মাখা যায়। কারণ এগুলো নির্ভেজাল, সাইড ইফেক্ট হবার সম্ভবনা নেই বললেই চলে।
রূপচর্চায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার এর উপায়?
নিচের প্রতিটা টিপসের জন্যই ভিটামিন ই ক্যাপসুল ফুটো করে ভিতরের তেলটা বের করে ব্যবহার করতে হবে। একটি ক্যাপসুল থেকে প্রায় আধা চা চামচ তেল পাওয়া যায় আর এই তেল খুবই গাড় হয় সুতরাং আপনারা একটা ক্যাপসুলের তেল দিয়ে নিজের ত্বকের ধরন বুঝে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ব্যবহার করতে হবে।
ভিটামিন ই স্কিন সিরাম
ভিটামিন ই ক্যাপসুল যদি আপনি ত্বকে ব্যবহার করেন চমৎকার রেজাল্ট পাবেন। ড্রাই আর নরমাল ত্বকের অধিকারীরা ভিটামিন ই তেল ত্বকে ফোঁটা ফোঁটা লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে বসিয়ে দিন। আর তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারিরা এক ফোঁটা তেল প্রথমে দুই হাতে নিয়ে ঘষুন, এরপর হাত দুটো মুখে ৫ সেকেন্ড চেপে ধরুন ব্যাস হয়ে গেল আপনার সিরাম লাগানো। এভাবে ভিটামিন ই ব্যবহার করলে আপনার আর অন্য কোন নাইট ক্রিম বা সিরাম ব্যবহারের দরকার পড়বে না। এটি করে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন একটু বয়স্করা, কারণ তাদের ত্বকের ফাইন লাইন দূর করতে ভিটামিন ই খুবই ভালো কাজ করবে।
ভিটামিন ই নাইট ক্রিম
আপনি যেই নাইট ক্রিম বা হালকা বিবি ক্রিম ব্যবহার করেন সেটির কৌটায় ১-২ টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ফুটো করে ভিতরের তেল ভালোভাবে নাইট ক্রিম বা বিবি ক্রিম এর সাথে মিশিয়ে নিন। এবার এই ক্রিম রেগুলার ব্যবহারে আপনি এক্সট্রা ভিটামিন ইর গুণটা পাবেন। একি ভাবে আপনার প্রিয় বডি লোশনেও ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে
আছেন যারা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে অনেকেই খাটি ব্যবহার করেন। বাদাম তেল এর সাথে ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে নিলে খুব কম সময়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কনুই বা হাঁটুর জেদি কালো দাগ দূর করতে ভিটামিন ই এর ব্যবহার
কনুই বা হাঁটুর জেদি কালো দাগ ও দীর্ঘদিনের পুরনো স্কিন ড্যামেজের দাগ দূর করতে ভিটামিন ইর কোন তুলনা নেই। এর জন্য রেগুলার ১ টা ক্যাপসুলের তেল দাগ এর স্থানে লাগালে ২-৩ সপ্তাহ ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন!
চুল পড়া বন্ধে ও নতুন চুল গজাতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল
চুলের জন্য ভিটামিন ই ভীষণ উপকারী। চুল পড়া কমানো থেকে শুরু করে ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল পেতে ভিটামিন ই সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল খান এবং সরাসরি ব্যবহার করেন চুলে।
নিয়মিত ভিটামিন ই ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়, চুলের গোড়া মজবুতও হয়। এছাড়া অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা প্রতিরোধ করতেও সক্ষম ভিটামিন ই। সেসঙ্গে ফ্রি-ব়্যাডিকালস ধ্বংস করে এবং চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ফলে চুল থাকে ঝলমলে ও সুন্দর। এছাড়া স্ক্যাল্পের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও ভিটামিন ই এর জুড়ি মেলা ভার। ভিটামিন ই সরাসরি চুলে, মাথার ত্বকে ব্যবহার করা যায়। তবে কেউ চাইলে বিভিন্ন হেয়ার প্যাক বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন এ উপকারী ভিটামিন।
ভিটামিন ই ও অ্যালোভেরা
এই হেয়ার প্যাক বানানোর জন্য প্রয়োজন অ্যালোভেরা জেল, গোলাপ জল এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল। একটি পাত্রে পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল নিন, এর সঙ্গে মিশিয়ে দিন একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস। এর পরে সামান্য পরিমাণে গোলাপ জল মিশিয়ে তৈরি করে নিন হেয়ার মাস্ক। এটি চুলে লাগানোর পরে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন,চাইলে পুরো রাতও রাখা যেতে পারে, তারপরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
ভিটামিন ও জোজোবা অয়েল
ভিটামিন ই অয়েল এর সঙ্গে মিশে জোজোবা অয়েল বেশ কার্যকরী হয়ে ওঠে। তাই এই দুই উপাদান মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করলে উপকার মিলবেই।
মাস্ক বানানোর উপায় হল একটি পাত্রে একটি ডিম ফাটিয়ে তার মধ্য়ে ১ চামচ জোজোবা অয়েল এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল ভাল করে মিশিয়ে নিন।
হেয়ার মাস্কটি চুলে লাগানোর ১ ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
স্বাস্থ্যসুরক্ষায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল
নিয়মিত ই ক্যাপ খেলে শরীরের কোষগুলো ধীর গতিতে ক্ষয় হয়, যা আপনাকে অন্যদের তুলনায় বেশি সুন্দর করে তোলে। চর্মরোগ এমনকি অ্যালঝাইমার্স রোগ দূর করতেও দারুণ কাজ করে ভিটামিন ই ক্যাপ। ভিটামিন ই ক্যাপসুল হাড়ের সমস্যা রোধ করে। এমনকি বন্ধত্বের সমস্যা রোধ করতেও কার্যকরী ই ক্যাপ। কিডনির সমস্যা হতেও বাঁধা দিতে পারে ই ক্যাপ। ভিটামিন ই ক্যাপ হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়।
এগুলো স্কিন আর হেয়ার কেয়ার তথা রূপচর্চা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের কিছু উপায়। এতে করে কিছু না বুঝে শুনে ক্যাপসুল না খেয়ে ভিটামিন ই এর উপকার আপনি পাবেন। আর যদি খেতেই চান তবে ক্যাপসুল না খেয়ে ভালো সুষম খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ই শরীরে দেয়ার চেষ্টা করুণ। শাক সবজি, বাদাম, ডিম ইত্যাদি বেশি করে খান। ত্বক আর চুল তো ভালো থাকবেই আর কোন এক্সট্রা ঝুঁকিও নিতে হবে না। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।
ভিটামিন ই এর অপকারিতা
ভিটামিন ই এর পর্যাপ্ত পরিমাণ আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। কিন্তু সেই ভিটামিন ই এর অত্যধিক পরিমাণ আমাদের দেহকে ক্ষতিগ্রস্তও করতে পারে।
প্রয়োজনের থেকে বেশি ভিটামিন ই খাওয়া হলে, এটি শরীরের মধ্যে জমা হতে থাকে। এটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় তাই এটিকে মূত্রনালীর মাধ্যমে শরীর থেকে অপসারণ করা যায়না। এটি ধীরে ধীরে শরীরে একটি বৃহৎ স্তরের সংশ্লেষ পায় এবং খাদ্যদ্রব্যর মাধ্যমে এই ভিটামিন সাধারণ ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু যখন আপনি এটিকে একটি খাদ্যতালিকা গত সম্পূরক মাধ্যমে গ্রহণ করেন, তখন এটি অনেক সমস্যা তৈরী করতে পারে।
- ই ক্যাপ এর অতিরিক্ত ব্যবহারে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে ই ক্যাপ মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার কারণ হতে পারে।
- ই ক্যাপ এর অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
- ই ক্যাপ রক্ত পাতলা করার ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে। তাই, যারা রক্ত পাতলা করার ঔষধ খান, তাদের ই ক্যাপ খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- কিছু ক্ষেত্রে, ই ক্যাপ অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, ও শ্বাসকষ্ট।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ই ক্যাপ খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়া উচিত নয়।