ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও কি পরিমান খাবেন

মুখরোচক এবং মিষ্টি স্বাদের কারণে ছোট বর সকলেই চকলেট খেতে পছন্দ করে। কিন্তু কিছু ক্ষতিকর দিক থাকার কারণে অনেকে চকলেট খেতে নিষেধ করেন। অনেকে অন্যান্য চকলেট খেতে নিষেধ করলেও ডার্ক চকলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। ডার্ক চকলেট নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ বলে এটি খেলে নানা উপকার পাওয়া যায়, কেউ বলে ডার্ক চকলেটে খেলে ঘুম হয়না, কেউ বলে চকলেট খাওয়া মানেই ক্ষতি। অনেকেই জানতে চান ডার্ক চকলেটে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। এটির উপকার যেমন রয়েছে তেমনি এটাও ঠিক যে নিয়ম না মেনে কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয়। 

চকলেট তৈরি করা হয় কোকোয়া বীজ দিয়ে, ৭০-৮৫ ভাগ কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেটকে বলা হয় ডার্ক চকলেট। অন্যান্য মিল্ক চকলেটে কোকোয়ার পরিমাণ সামান্য পরিমানে থাকে এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু ভালো মানের ডার্ক চকলেটে চিনির পরিমাণ কম এবং কোকোয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। এই ডার্ক চকলেট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। আমাদের হার্ট, ব্রেইন ফাংশন, স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ও ত্বকের সুস্থতা- সবকিছুর উপরই পজেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলে এই উপাদানটি। 

শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে পরিমিত পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাওয়া হলে বেশ কিছু উপকারিতা পেতে পারেন। তবে অবশ্যই ভালো মানের ডার্ক চকলেট কিনতে হবে। 

ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে এই ডার্ক চকলেট। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে পলিফেনল, ফ্ল্যাভানল। এমনকি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল হিসেবে পরিচিত ব্লুবেরি, আসাই বেরির চেয়েও এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষের ক্ষতি হওয়া রোধ এবং ক্যানসার রোধে ভূমিকা রাখে।

ডার্ক চকলেটের কোকোয়া বীজের ফ্ল্যাভানল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে পারে। এ ছাড়া মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ডার্ক চকলেট খেলে মনের বিষণ্ণতা দূর হয়। এই চকলেটে থাকে ট্রিপটোফ্যান, যা বিষণ্ণতা রোধে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে।

ডার্ক চকলেট খেলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে গ্লুকোজ শোষণ হয়ে গ্লুকোজের মাত্রা ভালো থাকে। ডার্ক চকলেটের ফ্ল্যাভনয়েডর কারণে শরীরের রক্ত প্রবাহ উন্নত হয় ও এবং রক্তচাপ ও কমে। ফলে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য এটি বেশ উপকারী।

ডার্ক চকলেট শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা রাখে।

ডার্ক চকলেটে ফিনাইল ইথাইলামাইন নামক উপাদান আছে, যাকে বলা হয় ‘লাভ কেমিক্যাল’। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।

ডার্ক চকলেট কি পরিমান খাবেন

ডার্ক চকলেট নিয়ে প্রচলিত সবচেয়ে কমন মিথ সম্ভবত এটি যে এটি খেলে ঘুম আসে না ! এর কারণ হিসেবে অনেকে বলে থাকেন যে এতে ক্যাফেইন থাকে, তাই খেলে ঘুম আসে না! কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এই ক্যাফেইনের পরিমাণ এতই কম যে ঘুম না আসার পেছনে একে কোনোভাবেই দায়ী করা যায় না।

সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম কফিবিনে ১৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে যেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেটে আছে মাত্র ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। তাই কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইনের সাথে একে তুলনা করা একেবারেই ঠিক না। উল্লেখ্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যাফেইন এর হেলদি লিমিট ৪০০ মিলিগ্রাম বলে ধরে নেওয়া হয়। অল্প পরিমাণ ক্যাফেইন থাকার কারণে ডার্ক চকলেট সাময়িক ব্রেইন ফাংশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

কিন্তু কেউ যদি নিয়মিত বেশি পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেতে থাকেন তখন শরীরের ক্ষতি হবে। ডার্ক চকলেটে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক ইত্যাদি থাকার সঙ্গে এটিতে ক্যালরির পরিমাণও বেশি। তাই অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়ার কারণে ওজন বাড়তে পারে এবং শরীরে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

একজন সুস্থ ব্যক্তি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মধ্যকালীন নাশতা, বিকেলের নাশতা বা বাচ্চারা তাদের টিফিনের সময় এক বা দুই স্কয়ার ডার্ক চকলেট অনায়াসেই খেতে পারে। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে ১০০ গ্রামের বেশি ডার্ক চকলেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, বরং ক্ষতিকর।

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডার্ক চকলেট খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *