মাইগ্রেন কি? কেন হয় | চিকিৎসা ও প্রতিকার

জীবনে কখনো মাথা ব্যথা হয়নি এমন কাউকে পৃথিবীতে খুজে পাওয়া দুষ্কর। মাথা ব্যথার বড় একটা কারণ হচ্ছে মাইগ্রেন। মাইগ্রেন হচ্ছে মাথার একপাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি বা তিব্র ব্যথা। কখনো কখনো এ ব্যথা মাথার একপাশ থেকে শুরু হয়ে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পরে। ব্যথার সাথে সাথে কখনো কখনো চোখে ঝাপশা দেখা ও বমি ভাব হতে পারে।

মাইগ্রেন সাধারণ একটি রোগ, এটিতে বেশি ভুগে থাকেন নারীরা। প্রতি ৫ জন নারীর মধ্যে একজনের এবং প্রতি ১৫ জন পুরুষের মধ্যে একজনের মাইগ্রেন এর ব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকেই মাইগ্রেন হয়ে থাকে। 

মাইগ্রেন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের কোন পূর্ব লক্ষন দেখা যায় না, এই ধরনের মাইগ্রেন ই সবচেয়ে বেশি হয়। তবে মাঝে মাঝে মাইগ্রেন হওয়ার আগে আমদের শরীরে কিছু লক্ষন দেখা দেয়। যেমন চোখে হঠাত আলোর ঝলকানি দেখা দেয়া। এক ধরনের মাইগ্রেন আছে সাইলেন্ট মাইগ্রেন, এসব ক্ষেত্রে পূর্ব লক্ষন থাকলেও মাথা ব্যথা থাকে না। 

মাইগ্রেন এর উপসর্গ

ঘাম, কোন বিষয়ে মনযোগের অভাব, অনেক বেশি ঠান্ডা বা অনেক বেশি গরম অনুভব হওয়া, পেট ব্যথা ডায়রিয়া, আপনার যদি এসব লক্ষন দেখা দেয় এবং মাথা ব্যথা থাকে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। 

মাইগ্রেন কেন হয়

মাইগ্রেন এর সঠিক কারন জানা যায় না, তবে কিছু কারণে মাইগ্রেন হয় বলে ধারণা করা হয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মস্তিস্কের অস্বভাবিক কার্যক্রম যেমন স্নায়ু ব্যবস্থা শরীরের রাসায়নিক উপাদান এবং রক্তনালিকে আক্রান্ত করে ফেলে তখনি মাথার একপাশে এধরণের তিব্র ব্যথা হয় এবং মনে করাহয় এটি মাইগ্রেন এর কারণ।

মাইগ্রেন এর আর একটি কারণ হল হরমোন এর পরিবর্তন। নারীরা মাসিক ঋতুস্রাব এর সময় বেশি মাইগ্রেন এ ভোগেন। আবেগ ও স্ট্রেস এর কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে যেমন মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, আঘাত, উত্তেজনা ইত্যাদি নানা করনে মাইগ্রেন হতে পারে। 

এছাড়াও শারীরিক বিভিন্ন কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে যেমন ঘুম কম হওয়া, শিফট এ কাজ করা হঠাত অতিরিক্ত ব্যায়াম করে ফেলা ইত্যাদির কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে। 

এছাড়াও আরো বেশকিছু কারণ রয়েছে যেসবের কারণে মাইগ্রেন হতে পারে যেমন হঠাত পরিবেশ পাল্টালে অর্থাৎ গরম থেকে ঠান্ড বা ঠান্ডা থেকে গরমে গেলে। তাছাড়া হঠাত যদি অনেক বেশি আলো আছে এমন যায়গায় যান এর ফলেও মাইগ্রেন হতে পারে। 

আমাদের খাবার এর কারণেও অনেক সময় মাইগ্রেন হতে পারে। খাবারে অনিয়ম করা, পানিশুন্যতায় ভুগা, মদ্যপান করা, চা বা কফি বেশি খাওয়া ইত্যাদিও মাইগ্রেন হওয়ার জন্য সহায়ক। 

মাইগ্রেনের বিভিন্ন পর্যায়

মাইগ্রেন কিন্তু একেবারেই হয়ে যায় না, মাইগ্রেনের বেশ কয়েকটি ধাপ থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রডোমাল, এই ধাপে মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার আগে বেশ কয়েকটি লক্ষন থাকে। মেজাজ খিতখিটে হয়ে যাওয়া, শরীরে শক্তি না পাওয়া, আচরণগত পরিবর্তন এবং ক্ষুধা নস্ট হয়ে যাওয়া। 

২য় ধাপ হচ্ছে অরা ধাপ, এই ধাপের লক্ষন হচ্ছে চোখে আলোর ঝলকানি দেখা বা একেবারে চোখে না দেখা এধরণের কিছু লক্ষন থাকে। এই লক্ষনগুলো ৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। 

৩য় ধাপ হচ্ছে মাথা ব্যথা পর্যায়, এ পর্যায়ে তিব্র মাথা ব্যথা থাকে, সেই সাথে আরো কিছু উপসর্গ থাকতে পারে যেমন অসুস্থতা বোধ করা, বমি ভাব, শব্দ ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা। এধরণের লক্ষন ৪ ঘন্টা থেকে শুরু করে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত চলতে পারে। 

৪র্থ পর্যায় হচ্ছে রেজুলেশন ধাপ। এ পর্যায়ে এসে মাথা ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে থাকে তবে শরীরে যে দূর্বলতা তৈরি হয় সেটি কয়েকদিন রয়ে যায়। 

মাইগ্রেন থেকে দূরে থাকার উপায়

কিছু নিয়ম মেনে চললে মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যেমন –  প্রতিদিন একই সময় ঘুমানো, প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো, অতিরিক্ত বেশি আলো বা অতিরিক্ত কম আলোতে কাজ না করা, তীব্র ঠান্ডায় অথবা অতিরিক্ত রোদে বাইরে না যাওয়া, স্বাভাবিক শব্দের চেয়ে বেশি শব্দ অথবা অতিরিক্ত কোলাহল পূর্ণ এলাকা পরিহার করা, অকারণে বেশিক্ষন মোবাইলের স্ক্রিন না দেখা, মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার চেস্টা করা বা যেকোন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকার চেস্টা করা ইত্যাদি।  এরপরেও মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং মাথায় ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখতে হবে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ

যদি ঘন ঘন তিব্র মাথা ব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। মাথা ব্যথার সাথে বমি হলেও চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত মাইগ্রেনের ব্যথা কোমাতে উচ্চমাত্রার ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটি সাময়িকভাবে ব্যথা কমালেও এটি পরবর্তিতে মাইগ্রেনের চিকিৎসায় ব্যঘাত ঘটাতে পারে। মাসে ৫ বারের বেশি মাইগ্রেনেনের ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

এছাড়াও আরো কিছু লক্ষন রয়েছে যেগুলো দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। একটি হল মুখ বা হাতের এক অংশ প্যরালাইসড হয়ে যায় বা আপনি যদি দূর্বলতা অনুভব করেন। তাছাড়া কথা বলার সময় কথা অস্পস্ট হলে বা কথা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসলেও চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া মাথা ব্যথার সাথে তিব্র জ্বর, এর আগে হয়নি এমন তিব্র ধরণের মাথা ব্যথা যদি হঠাত দেখা দেয়। জ্বর এর সাথে তিব্র মাথা ব্যথা, ঘার শক্ত হয়ে যায় এবং শরীরে র‍্যাশ দেখা যায় এবং সে সময় রোগী ডাব ভিশন দেখলে অবশ্যই দেরি না করে অতি দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। 

মাইগ্রেনের চিকিৎসা কি

আসলে মাইগ্রেনের সঠিক কোন চিকিৎসা নেই, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন মাইগ্রেনকে এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। মাইগ্রেনের কোন প্রতিশেধক নেই, তবে এই রোগের বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে এগুলো বেশ সম্য সাপেক্ষ। মাইগ্রেন আছে এমন নারীদের গর্ভবতি অবস্থায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবে যে পর্যায়ের মাইগ্রেন ই হোক না কেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। 

আরো পড়ুনঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
থ্যালাসেমিয়া কি? কেন হয় | লক্ষন ও প্রতিকার
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *