পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

প্রত্যেক নারী পিরিয়ডের ব্যথা সম্পর্কে জানেন। নারীদের মাসিক ঋতুচক্রের সময় পিরিয়ডের ব্যথা হয়ে থাকে, এটি স্বাভাবিক একটা বিষয়। সাধারণত পিরিয়ডের  ব্যথা খুব বেশি বা গুরুতর হয় না, তবে মাঝে মধ্যে বাড়তে পারে বা বাড়ে। সকল নারী কোন না কোন সময় এটির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। অনেকেই এই ব্যথা দূর করার উপায় জানেন, কিন্তু নতুন যাদের পিরিয়ড হয় বা এখনো যারা এই ব্যথার সম্মুখীন হন নি তাদের অনেকেই জানে না পিরিয়ডের ব্যথা কমার উপায় কি তা। তাদের জন্যই আমাদের আজকের এই লেখাটি।

পিরিয়ডের সময় ব্যথা হয় কেন?

গবেষনায় দেখা গেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারীর মাসিক ঋতুচক্রের সময় পিরিয়ডের ব্যথা হয়। পিরিয়ডের সময়ে নারীর শরীর থেকে অনিষিক্ত ডিম্বাণু, মিউকাস, বেশ কিছু এপিথেলিয়াল কোষ ও রক্ত বের হয়। জরায়ু থেকে এই উপাদানগুলো বের হওয়ার কারণে পেট ও তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তখন অনেক নারীর ব্যথা এতো বেশি হয় যে তাদের জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। পিরিয়ডের সময় জরায়ু গঠনকারী টিস্যু থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় এর কারণে মূলত ব্যথা হয়। পিরিয়ডের সময় প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস নামক এক জাতীয় পদার্থ জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে এবং প্রদাহ তৈরি করে এর ফলে পিরিয়ডের সময় ব্যথা হয়।

পিরিয়ডের সময় পেট ও তলপেট এ ব্যথা ছাড়াও শরীরে আরো কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন – 

বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন এর ব্যথা, ব্রেস্টে পেইন, ডায়রিয়া ইত্যাদি।

ঠিক কি কারণে এসব সমস্যা হয় তা নির্দিস্ট নয় তবে বেশ কিছু কারণে ও বিশেষ কিছু সময়ে এই পিরিয়ড এর ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন – প্রথম পিরিয়ড এর সময়, বয়স ২০ বছরের কম হলে, পিরিয়ড এ ব্লাড ফ্লো বেশি হলে, প্রথম সন্তান জন্মের পরে, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সেনসিটিভিটি, এন্ড্রোমেট্রিওসিস, ইউটেরাইন, ফাইব্রয়েড, বার্থ কন্ট্রোল পিল নেওয়া ইত্যাদি।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

গরম সেঁক

পিরিয়ডের ব্যথা কমার জন্য সবচেয়ে কার্যকরি ঘরোয়া উপায় হল গরম সেঁক দেয়া। এটি এই ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে ঔষধের চেয়ে ভাল কাজ করে। গরম সেঁক দেয়ার সহজ উপায় হল হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করা। তার জন্য সাবধানতার সহিত গরম পানি ওয়াটার ব্যাগ এ ঢুকিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে ওয়াটার ব্যগটি আরামদায়ক তোয়ালে-বা কাপর মুড়িয়ে ব্যথার যায়গার দিয়ে রাখতে হবে। খেয়াল রাখবেন গরম তাপ যেন সহনীয় থাকে। কিছুক্ষন পর পর ওয়ারটার ব্যাগটি উল্টে পালটে দিতে হবে। ওয়াটার ব্যাগ ছাড়াও ইলেকট্রিক হিটিং পেড বা অন্য উপায়েও গরম সেঁক দিতে পারেন।

আদা চা

পিরিয়ডের ব্যথা কমার জন্য আদা চা ও বেশ কার্যকর। শুধু আদা খেলেও পিরিয়ডের ব্যথা কমে। চাইলে পিরিয়ডের ২-১ দিন আগে থেকেই প্রতিদিন ২-৩ বার শুধু অল্প অল্প আদা কুচি চিবিয়ে অথবা রং চা নয়তো গরম পানির সাথেও আদা খেতে পারেন।

অ্যাসেনসিয়াল অয়েল ম্যাসাজ

সাধারণত রুপচর্চার জন্য আমরা অ্যাসেনসিয়াল অয়েল ব্যবহার করে থাকি। পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অ্যাসেনসিয়াল অয়েল দিয়ে পেট,  তল পেট ও কোমোড় ম্যাসাজ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

নিঃশ্বাসের ব্যায়াম

নিঃশ্বাসের ব্যায়ামও পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করার উপায় হল বুকে এক হাত ও পেটে আরেক হাত রেখে এমন ভাবে দীর্ঘ শ্বাস নিতে হবে যেন বুকের ভেতরে বাতাস ঢুকে পেট ফুলে যায়। আর মোমবাতি নেভানোর মত করে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। নিঃশ্বাস ছাড়ার পর বুক ও পেট থেকে হাত সরাই ফেলতে হবে।

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম আমদের শরীরের সবকিছুর জন্যই অত্যন্ত উপকারি। গবেষনায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম ও হাটাচলা করেন তাদের পিরিয়ডের ব্যথা কম হয়। আর পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করতে সমস্যা হলে হালকা ব্যায়াম যেমন হাটা, সাইকেলিং যোগাসনশন ইত্যাদি করতে পারেন।

ব্যথা কমায় এমন খাবার

যেকোন সময় ই স্বাস্থকর খাবার খাওয়া উচিৎ। অস্বাস্থকর খাবার যেমন চকলেট, চিপস, জুস থেকে শুরু করে চানাচুর, চিজ, সবধরণের ভাজাপোড়া সবসময় ই ক্ষতিকর বিশেষ করে পিরিয়ডের সময়।  পিরিয়ডের সময় ফাইবার ও ভিটামিন যুক্ত খাবার শরীরের ক্ষয় কমাতে সহায়তা করবে, শরীরকে দ্রুত হিল করে সেই সাথে আপনাকে ফিট রাখবে। পিরিয়ডের সময়কে সহজ করে এমন কিছু খাবার হল – ব্রকলি, পালংশাক, কলা, কমলালেবু, পেস্তা বাদাম, কাজু বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, ক্যামোমাইল চা, আদা চা, গ্রিন টি, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি। এছাড়া এই সময় বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। 

কুসুম গরম পানিতে গোসল

কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও পিরিয়ডের ব্যথা কিছুটা কমে স্বস্তি ও আরাম অনুভব হয়। তাই পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে এটা করে দেখতে পারেন।

রিলাক্স থাকুন

এসময় স্ট্রেস ফ্রি বা মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেস্টা করুন, তাহলে ব্যথা অনেকটা কম মনে হবে। চিন্তামুক্ত থাকার জন্য মেডিটেশন, যোগাশন ইত্যাদি করতে পারেন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর বেশকিছু ঔষধ রয়েছে নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

প্যারাসিটামল

১২ বছরের বেশি বয়সিরা ৫০০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম করে প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। ব্যথার তিব্রতা অনুযায়ী ৬ ঘন্টা পর পর ৫০০ মিলিগ্রাম এর একটি বা ২ টি করে ঔষধ খেতে পারবেন। প্যারাসিটামল খেয়ে যদি ব্যথা না কমে তখন আইবুপ্রোফেন আর প্যারাসিটামল দুটোই একসাথে খেয়ে দেখতে পারেন।

আইবুপ্রোফেন

প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন  নামক এক ধরনের কেমিক্যালের কারণে পিরিয়ডের ব্যথা হয়। আইবুপ্রোফেন পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। আইবুপ্রোফেন প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন কেমিক্যালকে থামিয়ে দেয়ার ফলে ব্যথা কমে যায়। ১২ বছরের কম বয়সিরা এটা খেতে পারবে না। ৬ ঘন্টা পর পর ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিনে ৩ থেকে ৪টা খেতে হয় ভরা পেটে। এই ঔষধ খাওয়ার ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে ব্যাথা কমে যায়। 

কিছু মানুষ এই ঔষধ খেতে পারবে না – অ্যাজমা বা হাঁপানির রোগী হলে, পাকস্থলী, লিভার, কিডনি ও হার্টের সমস্যা থাকলে, পেটে আলসার অথবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে।

আশাকরি উপরের নিয়মগুলো ফলো করলে আপনার পিরিয়ডের ব্যথা থেকে পরিত্রান পাবেন। এগুলোর পরও যদি ব্যথা না কমে বা ব্যথা অনেক বেশি বা অসহনীয় হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

তথ্য সূত্রঃ https://shohay.health/conditions/period-pain
https://www.shajgoj.com/home-remedies-to-relieve-menstrual-cramps/
www.kalbela.com/health/treatment/41476
https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2023/08/20/1310145

আরো পড়ুনঃ থ্যালাসেমিয়া কি? কেন হয় | লক্ষন ও প্রতিকার
বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কি করবেন?
বিয়ের আগে যেসব বিষয় জানা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *