প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি

একজন নারীর জীবনের সব থেকে সুন্দর সময়টা হলো প্রেগন্যান্সির সময়। একটি মেয়ের জন্য মা হতে পারার অনুভুতি অন্য সকল অনুভুতির চেয়ে ঊর্ধ্বে। শরীরের ভেতরে নতুন একটি জীবন বেড়ে উঠে, এর ফলে শরীরের অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। প্রেগন্যান্সির সময় বিভিন্ন ধরনের নিয়ম মেনে চলা উচিত। নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। একটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে একজন নারীর থাকতে হয় যত্নশীল। গর্ভাবস্থা্র সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। খাবার-দাবারে সচেতন থাকতে হয়। সুষম খাবার গ্রহণ করতে হয়। মাতৃকালীন সময়ে একজন মা কে থাকতে হয় সব থেকে বেশি সর্তক। কেননা তখন একজন মায়ের উপর নির্ভর থাকে তার অনাগত সন্তান। এই অবস্থায় বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। চলুন প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি জেনে নেয়া যাক।

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

সাধারণত মাসিক বন্ধ হলে সবাই বুঝতে পারে যে সে প্রেগন্যান্ট। সাধারণত যেসব নারীর নিয়মিত মাসিক বা ঋতুচক্র হয় এমন নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক বা ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়াটা হল প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ। কখনও কখনও রক্তস্রাব হতে পারে। এতে হাল্কা ঋতুচক্র (মাসিক) বা দাগ কাটার মতো রক্ত দেখা যায়। তবে এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কারো যদি গর্ভাবস্থায় এমন রক্তস্রাব দেখা যায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

এই সময় মেজাজে চরমভাবে পরিবর্তন আসে। বমি বমি ভাব বা হালকা বমি হওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, মাথা ব্যাথা করা, বুক জ্বলা ইত্যাদি প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণের লক্ষণ।

পিরিয়ড ছাড়াও আরও কিছু প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

সাধারণত পিরিয়ড বন্ধ হলে সবাই ধরে নেয় সে হয়তো প্রেগন্যান্ট। কিন্তু পিরিয়ড বন্ধ হওয়া ছাড়াও প্রেগ্ন্যাসির আরও অনেক লক্ষণ রয়েছে।  

প্রেগনেন্সির প্রথম সপ্তাহগুলোতে হরমোনের পরিবর্তন গর্ভবতীর পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। কোন কোন সময় ভিন্ন হতে পারে, তবে প্রথম তিন মাস কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

বমি বমি ভাব এবং বমি: গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে সারা দিন এবং বিশেষ করে সকালে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।

স্তন সংবেদনশিলতা: গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে স্তনে সংবেদনশীলতা, স্তনের রঙের পরিবর্তন এবং সামান্য ব্যথা।

স্তনে ভারী হওয়া এবং ব্যথা: গর্ভাবস্থার পরে, একজন মহিলার শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে স্তনে ভারীতা এবং হালকা ব্যথা হয়। তবে হরমোনের ভারসাম্য থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই সমস্যাগুলো চলে যায়।

মেজাজে চরম পরিবর্তন হওয়া: গর্ভাবস্থার শুরুতে, একজন মহিলার শরীরে হরমোনের বড় ওঠানামা হয়, যা মহিলার মেজাজকে প্রভাবিত করে। এই কারণেই গর্ভাবস্থার শুরুতে একজন মহিলা ছোট ছোট বিষয়ে খুশি বা দুঃখ অনুভব করতে পারেন। উপরন্তু, এটাও ঘটতে পারে যে মহিলা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বা বিষণ্ণ বোধ করেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া: গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনও অন্তর্ভুক্ত। এই সময় শরীরে রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার ফলে মূত্রাশয়ে তরল জমা হতে থাকে।

রুচির পরিবর্তন: গর্ভধারণের পর নারীর শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে তার রুচিরও পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা বাড়তে বা কমতে পারে। যদি একজন মহিলার স্বাদের পরিবর্তনের সাথে অন্যান্য উপসর্গগুলি অনুভব করে, তবে এটি সম্ভব যে তিনি গর্ভবতী। স্বাদ পরিবর্তনের সাথে সাথে একজন মহিলার ঘ্রাণশক্তিও পরিবর্তিত হয়। এটি ঘটে কারণ স্বাদ এবং গন্ধ একে অপরের সাথে যুক্ত।

পেটে ব্যথা: গর্ভাবস্থার পরে, কিছু মহিলার জরায়ুতে হালকা ব্যথাও হতে পারে। এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের অভিযোগ থাকতে পারে।

জ্বর হওয়া: গর্ভধারণের পর নারীর শরীরে ব্যাপক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং জ্বর।

ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া: পূর্বে গর্ভবতি মায়ের ওজন কেমন ছিল তার উপর ভিত্তি করে গর্ভয়াবস্থ্যায় ওজন বারতে বা কমতে পারে। তবে সর্বোউচ্চ কতটুকু ওজন বারা বা কমা স্বাভাবিক তা জানা থাকা উচিত। এটা জানা থাকলে ওজন বারা বা কমায় অস্বাভাবিকতা দেখলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তা বুঝা যায়।

চরম ক্লান্তি বোধ হওয়া: গর্ভাবস্থায় অনেক সময় ক্লান্তি বা অবসাদে ভুগে থাকেন, সাধারনত প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। তবে এটার জন্য গর্ভের সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না। তবে খুব বেশি সমস্যা মনে হলে এই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

মাথাব্যথা করা: প্রেগনেন্সির সময়ে শরিরের হরমোন সহ নানা রকম পরিবর্তনের কারণে গর্ভবতী মায়েদের প্রায়ই মাথা ব্যাথা হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের মাথা ব্যাথা অনাগত সন্তানের জন্য ক্ষতিকর না হলেও মায়ের জন্য বিরক্তি ও অস্বস্তিকর। বিশেষ করে প্রেগনেন্সির প্রথম মাসে এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যাথা এড়িয়ে চলতে কিছু বিষয় অনুসরণ করতে পারেন যেমন – কাপরে বরফ পেচিয়ে কপালে ঠান্ডা সেঁক দিতেপারেন অথবা কোল্ড প্যাক কপালে লাগিয়ে রাখতে পারেন। বেশিক্ষন খাবার না খেয়ে থাকবেন না এবং প্রর্যপ্ত পরিমান পানী পান করতে হবে। ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা ও প্রর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নেয়া ও ঘুমানো।

বুকজ্বালা ও বদ হজম: অধিকাংশ গর্ভবতি নারীর বুকজ্বলা ও বদ হজমের সমস্যা হয়ে থাকে, এর জন্য ঘাবড়ানোর দরকার নেই। প্রগনেন্সির যেকোনো সময়ই বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে তবে দিন যত বাড়তে থাকে এসিডিটি বা বুক জ্বালাপোড়া ও বাড়তে থাকে। কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে বুক জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে যেমন- একসাথে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বার বার খাওয়া, খাবার সোজা হয়ে বসে সময় নিয়ে ভাল করে চিবিয়ে খাওয়া, ঘুমানোর অন্তত ২ ঘন্টা আগে খাবার খাবেন বা খাবার খেয়েই ঘুমাবেন না। ভাজা-পোড়া বা বাইরের খাবার খাবেন না। লেবু, টমেটো, চা, কফি ও কোমল পানীয় খাওয়া যাবে না। অ্যান্টাসিড, অ্যালজিনেট ও ওমিপ্রাজল ইত্যাদি ঔষুধগুলো নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করতে পারেন।

পায়ে খিল ধরা: গর্ভবতী মায়েদের মাঝে মধ্যে পায়ে বেথা, খিল ধরা বা টান লাগতে পারে। এটির জন্য গর্ভবতী মায়ের কিংবা গর্ভের সন্তানের কোন ক্ষতি হয়না। সাধারণত গর্ভকালের ২০তম সপ্তাহের পর থেকে পা কামড়ানো বা খিল ধরার সমস্যা দেখা দেয়। যখনি পায়ের রগে টান ধরবে মনে হবে তখনি কিছুটা হেঁটে অথবা পা ঝাঁকিয়ে এরপর পা উঁচু করলে এই অনুভূতি উপশম হতে পারে। অথবা দাড়িয়ে পায়ের পাতা দুটিকে কিছুটা ভেতরের দিকে নিবেন। এরপর পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হতে চেষ্টা করবেন, যেন আপনি উঁচুতে থাকা কোনো কিছুর নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এভাবে পায়ের পেছনের পেশি টানটান করার চেষ্টা করবেন। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় যে ৭টি খাবার খাবেন না
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার ব্যাবস্থাপনা ও করণীয়
ডায়াবেটিস কি, লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা
বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কি করবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *