জরায়ু প্রলাপ্স: প্রকার, লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা

জরায়ু প্রলাপ্স বা জরায়ুর নিচে নেমে আসা একটি সাধারণ গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা, যা মহিলাদের জীবনে বিভিন্ন সময়ে দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় জরায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিচের দিকে সরে আসে এবং কখনও কখনও যোনির বাইরে পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই নিবন্ধে আমরা জরায়ু প্রলাপ্সের প্রকার, লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

জরায়ু প্রলাপ্সের প্রকারভেদ

জরায়ু প্রলাপ্সকে সাধারণত চারটি ধাপে ভাগ করা হয়:

  1. প্রথম ধাপ (প্রাথমিক প্রলাপ্স): জরায়ু সামান্য নিচে নেমে আসে, কিন্তু যোনির ভেতরেই থাকে।
  2. দ্বিতীয় ধাপ (মধ্যম প্রলাপ্স): জরায়ু যোনির প্রবেশদ্বার পর্যন্ত নেমে আসে, কিন্তু বাইরে বের হয় না।
  3. তৃতীয় ধাপ (উন্নত প্রলাপ্স): জরায়ু যোনির বাইরে বেরিয়ে আসে।
  4. চতুর্থ ধাপ (সম্পূর্ণ প্রলাপ্স): জরায়ু সম্পূর্ণভাবে যোনির বাইরে চলে আসে।

জরায়ু প্রলাপ্সের লক্ষণসমূহ

জরায়ু প্রলাপ্সের লক্ষণগুলি প্রলাপ্সের মাত্রা এবং ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। সাধারণ লক্ষণসমূহ হলো:

  • বুকে ব্যথা ও চাপ অনুভব করা: বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময়।
  • শ্বাসকষ্ট: হালকা থেকে মাঝারি শারীরিক কার্যকলাপের সময় শ্বাসকষ্ট অনুভব করা।
  • কোমর ও তলপেটে ব্যথা: দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা ভারী বস্তু তুললে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
  • মূত্রত্যাগে সমস্যা: মূত্র ঝরা, ঘন ঘন মূত্রত্যাগ বা মূত্র ধরে রাখতে না পারা।
  • মলত্যাগে সমস্যা: কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগে অসুবিধা।
  • যোনিতে ভারীভাব বা টান অনুভব করা: বিশেষ করে দিনের শেষে বা শারীরিক পরিশ্রমের পর।

জরায়ু প্রলাপ্সের কারণসমূহ

জরায়ু প্রলাপ্সের প্রধান কারণসমূহ হলো:

  • গর্ভধারণ ও প্রসব: বিশেষ করে বহুবার গর্ভধারণ বা বড় শিশুর জন্ম দেওয়া।
  • বয়স বৃদ্ধি: বয়সের সাথে সাথে পেশী ও লিগামেন্টের শক্তি কমে যায়।
  • ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি: মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়, যা পেশী দুর্বল করে।
  • ভারী বস্তু তোলা: নিয়মিত ভারী বস্তু তোলার ফলে পেলভিক পেশীর উপর চাপ বৃদ্ধি পায়।
  • স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন পেলভিক পেশীর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা কোষ্ঠকাঠিন্য: নিয়মিত কাশি বা কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে পেশীর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

জরায়ু প্রলাপ্সের চিকিৎসা

জরায়ু প্রলাপ্সের চিকিৎসা প্রলাপ্সের মাত্রা, রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং ভবিষ্যতে গর্ভধারণের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়:

1. জীবনধারা পরিবর্তন

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং প্রচুর পানি পান করা।
  • কাশি নিয়ন্ত্রণ: ধূমপান পরিহার এবং কাশির উপযুক্ত চিকিৎসা করা।

2. পেলভিক পেশী ব্যায়াম (কেগেল এক্সারসাইজ)

নিয়মিত পেলভিক পেশীর ব্যায়াম পেশী শক্তিশালী করে এবং প্রলাপ্সের লক্ষণ হ্রাস করে।

3. পেসারি ব্যবহার

পেসারি একটি ডিভাইস, যা যোনির মধ্যে স্থাপন করে জরায়ুকে সঠিক অবস্থানে ধরে রাখতে সহায়তা করে। এটি বিশেষ করে যারা সার্জারি করতে চান না বা সার্জারির ঝুঁকি বেশি তাদের জন্য উপযুক্ত।

4. সার্জারি

প্রলাপ্সের মাত্রা বেশি হলে বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর না হলে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারির মাধ্যমে জরায়ুকে সঠিক অবস্থানে স্থাপন করা হয় বা প্রয়োজনে জরায়ু অপসারণ করা হয়।

জরায়ু প্রলাপ্স প্রতিরোধে করণীয়

  • নিয়মিত ব্যায়াম: বিশেষ করে পেলভিক পেশীর ব্যায়াম।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস: কোষ্ঠকাঠিন্য পরিহার করতে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলা।
  • ভারী বস্তু তোলা পরিহার: প্রয়োজন হলে সঠিক পদ্ধতিতে তোলা।
  • ধূমপান পরিহার: ধূমপান কাশি সৃষ্টি করে, যা প্রলাপ্সের ঝুঁকি বাড়ায়।

উপরের চিত্রে জরায়ু প্রলাপ্সের বিভিন্ন স্তর দেখানো হয়েছে, যা প্রলাপ্সের মাত্রা নির্ধারণে সহায়তা করে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনলে জরায়ু প্রলাপ্সের ঝুঁকি হ্রাস করা যায় এবং সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ

কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *