প্রায় ৯ হাজার বছর আগে থেকে বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে পালন করে আসা হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীতে বিড়াল সবচেয়ে জনপ্রিয় পোষা প্রানি বিশেষ করে শহর অঞ্চলে। কারণ বিড়াল এর জন্য খুব বেশি জায়গা প্রয়োজন হয় না, খাবার খায় অল্প, মল-মূত্র ও ত্যাগ করে খুব কম তাই পরিষ্কার রাখা সহজ। বিড়াল খুব আদুরে প্রাণী এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। আমাদের অনেকের ই দৈনন্দিন জীবনে বিড়াল একটি ভাল লাগার মাধ্যম। তাই অনেকের ঘরেই এক বা একাধিক বিড়াল পালন করে থাকেন।
আবার অনেকে বিড়াল না পুষলেও বাইরের বিড়ালকে খাবার দিয়ে থাকেন, খাবার দিতে দিতে একসময় পোষা বিড়ালের মতই হয়ে যায়। বিড়াল খুব সহজেই আপন হয়ে যায়। ছোট বড় অনেকেই বিড়াল নিয়ে খেলতে ও সময় কাটাতে পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে বিড়ালে কামড় দিলে বা বিড়ালের আঁচড় লাগলে কি করবেন। বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলে অনেকেই আতংকিত হয়ে যান, ভেক্সিন দেন। আবার অনেকে কোন কিছুই করেন না। আজকে আপনাদের জানাব বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কি করবেন।
বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কি হয়?
বিড়াল কামড়ালে বার্টোনেলা ইনফেকশন বা ক্যাট স্ক্র্যাচ ফিভার হতে পারে। বার্টোনেলা হেনসিলে নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই ইনফেকশন হয়। এটি সাধারণত বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এই ইনফেকশনের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হল ক্ষতস্থানে শুষ্ক রক্তের শক্ত আবরণ বা পুঁজ এবং ব্যাথাযুক্ত ফোলা লিম্ফনোড বা লসিকাগ্রন্থি। এছাড়াও আরো অনেক মারাত্মক উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, বিশেষ করে বাচ্চাদের মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন- এটি রক্তপ্রবাহ বা পরিপাকতন্ত্র বা হৃদপিণ্ডে ছড়াতে পারে। বিড়ালছানার মধ্যে বার্টোনেলা সবচেয়ে কমন। যদিও অধিকাংশ বিড়ালের আঁচড় ইনফেকশনে রূপ নেয় না কিন্তু যদি হয় তবে এর চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে অ্যান্টিবায়োটিকের একটি সাধারণ কোর্স নিতে হবে।
এছাড়া আক্রমনকারি বিড়াল যদি রেবিজ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত থাকে তাহলে আক্রান্তের মরনঘাতি জ্বলাতংক রোগ হতে পারে। জলাতঙ্ক (ইংরেজি: Rabies) হল ভাইরাস জনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ (অর্থাৎ যে রোগ টি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়)। রেবিজ ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়। এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে।
বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কি করবেন?
বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কিছু পদক্ষেপ নিলে খারাপ কিছু হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিচে তা আলোচনা করা হল।
ক্ষত স্থানের গভিরতা দেখা
বিড়াল কামড় দিলে প্রথমেই দেখতে হবে আক্রান্ত স্থানের গভীরতা দেখা। ক্ষত যদি খুব গভির না হয়, খুব বেশি রক্ত না বেরোয় তাহলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আর ক্ষত যিদি গভির হয় অনেক রক্তপাত হয় য়ার যেই বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিয়েছে তাকে যদি রেবিজ ভাইরাসের ভেকসিন দেয়া না থাকে তাহলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া জড়ুরি।
সাবান পানি দিয়ে ক্ষত স্থান ধোয়া
র্যাবিস ভাইরাস বা জলাতঙ্কের জীবাণু দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর সাবান পানি। জলাতঙ্কের জীবাণু বা রেবিজ ভাইরাসের চারদিকে স্নেহ-জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে যা সাবানের মাধ্যমে খুব সহজেই ধ্বংস করা যায়। ক্ষত যত গভির ই হোক না কেন ক্ষতস্থানে ভালভাবে সাবান লাগিয়ে ফেনা করে ধুতে হবে সময় নিয়ে। ক্ষত যদি গভির না হয় ভালভাবে ধোয়ার ফলে জলাতঙ্কের জীবাণু দূর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
অ্যাান্টিবায়োটিক ব্যবহার ও রক্তপাত বন্ধ করা
কুকুর – বিড়াল এর কামড় বা আঁচড় দ্বারা আক্রান্ত হলে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমন ঠেকাতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে তরল অ্যান্টিবায়োটিক যেমন স্যাভলন, ডেটল ইত্যাদি ব্যবহার করাই সবচেয়ে উত্তম। কিন্তু হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সলিশন বা পভিসেপ (আয়োডিন সলিউশন) ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
এর মধ্যে যদি ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত বন্ধ না হয় তাহলে রক্তপাত ঠেকাতে ব্যান্ড এইড বা গজ কাপড় দিয়ে বেধে দিতে পারেন রক্তপাত বন্ধের জন্য। লক্ষ রাখতে হবে রক্তপাত বন্ধ হলেই আলো বাতাস লাগার জন্য বেন্ডেজ খুলে দিতে হবে, কারণ আলো বাতাস লাগলে ক্ষত স্থানে টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার এর জীবানু বাসা বাঁধতে পারে না।
ক্ষতস্থান লক্ষ রাখতে হবে
ক্ষতস্থান গভির না হলেও অনেক সময় ভাইরাস ও ব্যেক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। তাই আক্রান্তের পর ক্ষতস্থানের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। সংক্রমন বা ইনফেকশন এর লক্ষন হল ক্ষতস্থান ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, তীব্র ব্যথা করা বা ওই স্থান থেকে সারাক্ষন চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পড়া। এমন হলে বুঝবেন আপনার ক্ষতে ইনফেকশন হয়েছে বিধায় দেরি না করে ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে।
জ্বর আসলে
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার পর জ্বর আসতে পারে, এটি বয়স্কদের কম হলেও বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। জিবানুঘটিত এই রোগকে বলে কেটস্ক্রেচ ডিজিস। এটির লক্ষন হল জ্বর, আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট ফোসকা পড়া, পেট ও পিঠে ব্যাথা ইত্যাদি। এটি আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে না হলেও ১৪ দিনের মধ্যে এমন লক্ষন দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হবেন।
বারতি সতর্কতা
সমস্যা হওয়ার আগে সতর্ক হওয়া ভাল, যেমন পোষা কুকুর বিড়ালকে প্রয়োজনীয় ভেকসিন দেয়া। তাহলে পোষা কুকুর বিড়াল দ্বরা আক্রান্ত হলে বারতি ঝুকি থাকে না।
কারো বিড়ালে এলার্জি থাকলে বিড়াল থেকে দূরে থাকা, এবং বিড়ালকে পরিষ্কার রাখা যেন কোথাও বিড়ালের লোম বা বিষ্ঠা না থাকে। বিড়ালের লোম নাকে মুখে গেলে এটা থেকে শ্বাসকস্ট হতে পারে।
এছাড়া বাইরের কুকুর বিড়াল এর দ্বারা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ভেকসিন নেয়া উচিৎ।
আরো পড়ুনঃ বিয়ের আগে যেসব বিষয় জানা উচিত।
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কারণ ও করণীয়