বিয়ের আগে যেসব বিষয় জানা উচিত।

যেসব নারী পুরুষ বিয়ে করবেন বলে ভাবছেন তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু বিষয়ে জেনে নেয়া উচিত। এমন কিছু রোগ আছে যা এই অসতর্কতার কারণে স্বামী থেকে স্ত্রী, স্ত্রী থেকে স্বামী বা তাদের কাছ থেকে জন্ম নেয়া সন্তানের হতে পারে। একারণেই এসব বিষয়ে জেনে নিলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগগুলো সারিয়ে তোলা বা প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।এসব রোগ বা রোগ হতে পারেকিনা তা জানার জন্য কিছু টেস্ট করতে হয়। 

বিয়ের আগে যেসব টেস্ট বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার

এমন কিছু টেস্ট আছে যার রেজাল্ট এর উপর ভিত্তি করে বিবাহ পরবর্তি কঠিন কিছু রোগ থেকে দুরে থাকা যায়। চলুন দেখে নি কি কি। 

থ্যালাসেমিয়া টেস্ট

বাবা মা দুজনের যদি থ্যালাসেমিয়া মাইনর থাকে তাহলে তারা সুস্থ জীবন যাপন করলে তাদের কাছে থেকে জন্ম নেয়া সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পরে যখন সন্তানের থ্যালেসেমিইয়া ধরা পরে তখন জানতে পারেন বাবা মা থ্যালাসেমিয়া মাইনার ছিলেন। যখন জানতে পারেন তখন অনেক দেরি হয়ে যায় কারণ ততদিনে তাদের আদরের সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এমনকি মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে অনেক সময়। তাই অবশ্যই বিয়ের আগে নারী পুরুষের Hb Electrophoresis নামে এই রক্ত পরিখ্যাটি করে দেখা উচিত তাহলে বুঝা যাবে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা। 

যদি বাবা মা কারোর ই থ্যালাসেমিয়া না থাকে তাহলে কোন ঝুঁকি থাকেনা। আর যদি বাবা কিংবা মায়ের থ্যালাসেমিয়া মাইনার থাকে তাহলে ঝুঁকি নাই তবে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া মাইনার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি বাবা মা দুজনের ই থ্যালাসেমিয়া থাকে সেক্ষেত্রে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই পরীক্ষার ফলাফল দেখে কাউকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। 

হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা  

হেপাটাইটিস বি এর কারণে মানুষের লিভারে ক্যন্সার সহ নানা রকম জটিল রোগ হতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই জানেন না যে তাদের হেপাটাইটিস বি আছে। না জানার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস একজনের কাছ থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। অরক্ষিত যৌন মিলনের ফলে স্বামী থেকে স্ত্রী কিংবা স্ত্রী থেকে স্বামীর শরীরে সহজেই এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। তাই বিয়ের আগে নারী পুরুষ সবারই হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। 

শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আছে কিনা তা জানার জন্য HBsAg ও Anti-HBc টেস্ট করতে হয়। স্বামী স্ত্রী দুজনের নেগেটিগ হলেতো কোন সমস্যাই নেই, তবে বারটি সতর্কতার জন্য হেপাটাইটিস বি এর টিকা নিয়ে নিতে পারেন। যদি স্বামী বা স্ত্রী যেকোন একজনের হেপাটাইটিস বি পজেটিভ হয় তাহলে চিকিৎসক আরো কিছু টেস্ট করতে বলতে পারেন চিকিতস্যা দেয়ার সুবিধার্থে। তারপর চিকিৎসক পরবর্তিতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা জানিয়ে দিবেন। 

উল্লেখ্য যৌন মিলন ছাড়াও নানা ভাবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ছড়াতে পারে। যেমন আক্রান্ত ব্যক্তির থুথু, রক্ত, বির্য, মহিলাদের মাসিক স্রাব ইত্যাদির মাধ্যমে। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির সন্তান এই ভাইরাস নিয়ে জন্মাতে পারে।  তাই রক্ত দেয়া বা নেয়ার সময়, ইনজেকশন দেয়ার সময়, সহবাসের সময়, সেলুনের বা রক্ত লাগতে পারে এমন জিনিস ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

হেপাটাইটিস সি পরীক্ষা 

হেপাটাইটিস সি ও হেপাটাইটিস বি এর মত লিভারকে আক্রান্ত করে। এটি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে ও যৌন মিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। তাছাড়া আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে জন্ম নেয়া সন্তান এই ভাইরাস নিয়ে জন্মাতে পারে। হেপাটাইটিস সি নির্নয়ের জন্য Anti-HCV টেস্ট করাতে হবে। 

হেপাটাইটিস সি পজেটিভ হলে চিকিৎসক আর কিছু টেস্ট দিতে পারেন চিকিৎসা দেয়ার জন্য। চিকিৎসার মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। 

এইচ আই ভি পরীক্ষা 

এইচ আই ভি একটি মরনঘাতি ভাইরাস। তাই বিয়ের আগে অবশ্যই এইচ আই ভি টেস্ট করে নেয়া দরকার। অনেক সময় এইচ আইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও মনুষ প্রথমে সুস্থ থাকে। অনেকেই এইচ আই ভি আক্রান্তদের ঘৃণা করেন, কারণ তারা মনে করে এটি শুধুমাত্র যৌন মিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। এইচ আইভি রক্ত, মুখের লালা, কনডম ছাড়া যৌন মিলন, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে জন্ম নেয়া সন্তান, কিংবা আক্রান্ত কারো দুগ্ধ পান এর মাধ্যমে এইচ আই ভি ভাইরাস ছড়ায়। 

এইচ আই ভি আক্রান্ত কিনা দেখার জন্য HIV Ag/Ab টেস্ট করেতে হয়। এইচ আইভি পজেটিভ আসলে চিকিৎসক ঔষুধ দিবেন যা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এইচ আই ভি ভাইরাস এর পরিমাণ কমিয়ে দিবে। অনেক সময় চিকিৎসার ফলে এইচ আইভি ভাইরাস এতটা কমে যায় যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে আর এই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকেনা। 

যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা

অনেকেই সুস্থ জীবনযাপন করলেও পরে দেখা যায় নানান রকম যৌন রোগে আক্রান্ত থাকেন। যা বিয়ের পরে সন্তান জন্মদানে ব্যঘাত সহ নানা রকম জটিলায় রূপ নেয়। কিন্তু বিয়ের আগে টেস্ট করিয়ে যার চিকিৎসা নিলে সুস্থ হতে খুব বেশি সময় লাগত না। তাই বিয়ের আগে Syphilis, Gonorrhoea, Chlamydia, Trichomoniasis এই টেস্টগুলো করিয়ে দেখুন। যদি কোন রোগ ধরা পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যেতে পারবেন।

ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা

আসলে বিষয়টা এমন না যে বিয়ের আগে ব্লাড গ্রুপ জানতেই হবে। অনেকেই বলেন স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একি রকম হলে সমস্যা তা কিন্তু ঠিক না। বিয়ের পর সন্তান জন্ম নিলে তার রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় আর মায়ের রক্তের গ্রুম যদি নেগেটিভটিভ হয় তাহলে সন্তান জন্মের পর একটি ইনজেকশন দিতে হয় যা চিকিৎসক বলে দিবন।

পুরো লেখাটা যদি পরে থাকেন তাহলে আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন বিয়ের আগে উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো করানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এমন নয় যে কোন টেস্ট এর রেজাল্ট পজেটিভ হলে তাকে বিয়ে করা যাবেনা, অনেক রোগ আছে যাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে পরবর্তিতে কোন ঝুঁকি থাকেনা। আমরা এখানে শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে এই লেখাটি প্রকাশ করেছি। দিন শেষে কাকে বিয়ে করবেন বা করবেন না তা একান্ত আপনাদের ব্যক্তিগত বিষয়। 
ক্রেডিটঃ ডাক্তার তাসনিম জারা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *