চিকুনগুনিয়া কি? কিভাবে হয়, লক্ষণ ও প্রতিকার

চিকুনগুনিয়া কি?

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি অনেকটা ডেঙ্গু জড়ের মতই। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ও ডেঙ্গু জরের ভাইরাসের মতই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাসটি মানুষের শরির থেকে মশা আবার মশা থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মানুষ ছারাও এটি বানর, পাখি এবং তীক্ষ্ণদন্ত বিশিষ্ট প্রানী যেমন ইদুরেও এ ভাইরাস বিদ্যমান বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস “টোগাভাইরিডি” পরিবারের “আলফাভাইরাস” গনের অর্ন্তভুক্ত RNA ভাইরাস। এবং এটি সেমলিকি ফরেস্ট ভাইরাস কমপ্লেক্স এর সদস্য এবং রস রিভার ভাইরাস ও নিয়ং নিয়ং ভাইরাসও সেমলিকি ফরেস্ট ভাইরাস এর সঙ্গে নিবিরভাবে সম্পর্কিত। যেহেতু এটি আর্থোপড যেমন মশার মাধ্যমে ছরায় তাই একে “আর্বোভাইরাস” ও বলে।

  • প্রশ্নঃ চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক কোন মশা বা চিকুনগুনিয়া হয় কোন মশার কামড়ে?

উত্তরঃ এডিস মশা

  • প্রশ্নঃ চিকুনগুনিয়া কি ছোঁয়াচে?

উত্তরঃ না

  • প্রশ্নঃ চিকুনগুনিয়া জ্বর কোন প্রকারের রোগ?

উত্তরঃ ভাইরাস জনিত রোগ

চিকুনগুনিয়ার লক্ষন

চিকুনগুনিয়ার মুল মুল উপসর্গ হল জ্বর ও অস্থিসন্ধির ব্যথা। এটি সাধারণ বা ডেঙ্গু জড়ের মত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণত মশা কামড়ানোর থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই জ্বরের লক্ষন দেখা দিতে শুরু করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোন উপসর্গই দেখা যায়না। এই রোগটি সাধারণত আকস্কিক জ্বর, অস্থিসন্ধির বেথার মাধ্যমে শুরু হয়। শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বেরে প্রায়ই ১০৪ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠেযেতে পারে। কিন্তু কাপুনি বা ঘাম হয়না। এছারাও মাথাব্যথা, চোখ জ্বালা, গায়ে লাল লাল দানার মত র‍্যাশ, অবসাদ, অনিদ্রা, বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে অস্থিসন্ধিতে প্রচন্ড বেথা অনুভুত হয়। শরীর ফুলেও যায় অনেক ক্ষেত্রে।

সাধারন জ্বরের মত চটকরে জ্বর চলে যায়না, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারন জ্বরের ঔষধে কোন কাজ ই হয়না। কিন্তু থেকে দিন পর জ্বর এমনিতেই সেরে যায়। এ রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট হল জ্বর চলে গেলেও শরীরে বেথা থেকে যায় কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত যার কারনে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজকর্ম করা কস্টকর হয়ে পরে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী বেথায় এতটাই কাতর হয়ে পরেন যে স্বাভাবিক ভাবে হাটতেও পারেন না, এমনকি বেথায় একটু সামনের দিকে ঝুকে হাটেন। সাধারণত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে রোগের তিব্রতা অনেক বেশি হয় আর উপসর্গগুলো বেশিদিন থাকে।

চিকুনগুনিয়া রোগ নির্নয় এর পরীক্ষা

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা বিশেষ করে ভাইরাস পৃথকীকরণ, RT-PCR অথবা সেরোলজির মাধ্যমে এ রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি দেখেও এ রোগ নির্নয় করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক সময় থেকে ১২ দিন সময় লাগতে পারে।

চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসা

এই রোগের চিকিৎসা সাধারণত রোগের উপসর্গ নিরাময়ের মাধ্যমে করতে হয়। এ রোগের কোন ঔষধ বা টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে আর প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার বা পানীয় খেতে হবে। জ্বরের জন্য পেরাসিটামল গ্রুপের ঔষধ ই যথেস্ট। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বেথার ঔষধ সেবন করা যেতে পারে।

চিকুনগুনিয়ার ব্যাথায় করনীয়

আগেই বলেছে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ভাল হলেও ব্যাথা থেকেযায় সপ্তাহ থেকে বছর পর্যন্ত। এই রোগটি প্রাণঘাতি না হলেও এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তিব্রতর অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট এর ব্যাথায় ভুগে থাকেন। চিকুনগুনিয়া ব্যাথা নিরাময়ে নিচের টিপসগুলো কাজে লাগতে পারে-

  • ব্যাথার যায়গায় বরফ এর সেক দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। সরাসরি বরফ লাগাবেন না তাতে কোল্ড বার্ণ হতে পারে। নরম তোয়ালে বা কাপরে বরফকুচি নিয়ে বেথার যায়গায় ৩-৫ মিনিট ধরে রাখুন এভাবে ৩/৪ বার দিলে প্রদাহ কমে ব্যাথা কমে যাবে।
  • ব্যাথার যায়গায় তিলের তেল দিয়ে হালকা মাসাজ করতে পারেন ফলে ব্যাথার স্থানে রক্ত চলাচল বেরে ব্যাথা কমে যাবে। তবে খুব বেশি মাসাজ করবেন না কারন এতে জয়েন্টের টিসু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • এক গ্লাস দুধ এ আধা চা চামচ হলুদ গুরা মিশিয়ে দিনে দুবার খেতে পারেন। এটি চিকুনগুনিয়া জনিত ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রদাহজনিত যকোন ব্যাথা নিরাময়ে ফিজিওথেরাপি বেথানাশক বা অন্য যেকোন কিছুর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। ইলেক্ট্রোথেরাপি ও ওয়াক্সথেরাপি এই ধরণের ব্যাথা কমাতে খুব কার্যকর। তবে চিকিৎসা নির্ভর করবে রোগীর বর্তমান অবস্থার ওপর। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

চিকুনগুনিয়া নিয়ে কিছু পরামর্শ

যেহেতু চিকুনগুনিয়া একটি মশাবাহিত রোগ তাই মশার কামর এরাতে ব্যক্তিগত সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

  • প্রথমত এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেন মশা কামরাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, এর জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশারীর মধ্যে রাখা উচিৎ। কেননা রোগিকে যদি মশা কামরায় এবং ঐ মশা যদি অন্য সুস্থ কাউকে কামরায় তাহলে সুস্থ ব্যক্তিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।
  • এই রোগের ভাইরাস বাহি মশা সাধারণত বদ্ধ পরিষ্কার বদ্ধ পানিতে জন্মায় যেমন এসি, টব বা অন্য যেকোন পাত্রে পরিষ্কার পানি জমানো থাকলে সেখানে এ মশা জন্মাতে পারে। তাই আবাসস্থলের আশেপাশে এরকম পানি জমতে দেয়া যাবেনা।
  • এ মশা সাধারণত দিনেরবেলা বিশেষ করে (সকালে ও সন্ধ্যায়) কামড়ায়।
  • চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরীতে নমুনা পরীক্ষার সময়ে অসাবধানতায় এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যাবহার করুণ।

সবশেষে বলাযায় মশার কামর থেকে বেচে চলুন। মশার মাধ্যমে অনেক রোগ ছড়ায়, এবং মশার কামরে শরীর দুর্বল হয়ে পরে। বাড়িঘর আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। মশার আবাসস্থল-প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করুণ প্রয়োজনে নিকটস্থ কমিশনার কার্যালয়ে যোগাযোগ করে মশা নিধনকারী স্প্রে করার বেবস্থা করুণ। আশাকরি লেখাটি আপনাদের জন্য উপকারি হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *