ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় যেই ৪টি উপাদান অবশ্যই জেনে রাখা উচিত

ডায়াবেটিস একটি মরন ব্যাধি হলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এটা নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় চারটি বিষয় জানা খুবই জরুরী। এই চারটি বিষয়ের সমন্বয়ের জন্য নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখার উপাদান ৪ টি হলঃ

১। শিক্ষা    ২। সঠিক খাদ্যাভ্যাস    ৩। ব্যায়াম    ৪। প্রয়োজনীয় ঔষধ

শিক্ষা

ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। সঠিক বেবস্থা নিলে এই রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ব্যবস্থা গুলি রোগীকেই নিজ দায়িত্বে মেনে চলতে হবে। রোগীর পরিবারের নিকট সদস্যদের সহযোগিতা এ ব্যাপারে অনেক সাহায্য করতে পারে। তাই রোগীর সুচিকিৎসার জন্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে রোগীর যেমন শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি রোগীর নিকট আত্মীয়দেরও এই রোগ সম্পর্কে কিছু জ্ঞান থাকা দরকার।

প্রয়োজনীয় শিক্ষা পেলে রোগী –

-নিজেই নিজের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা অর্জন করবেন।

-পরিবর্তিত জীবন প্রণালী সহজ ভাবে গ্রহন করতে পারবেন।

-জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করার ক্ষমতা অর্জন করবেন।

শৃঙ্খলা

  • নিয়মিত ও পরিমান মতো সুষম খাবার খেতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম করতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র সুষ্ঠুভাবে মেনে চলতে হবে।
  • শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
  • চিনি, মিষ্টি, গুড়, মধু যুক্ত খাবার সম্পূর্ণ ছাড়তে হবে।
  • শারীরিক কোন অসুবিধা দেখা দিলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন কারণে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা বন্ধ রাখা যাবে।
  • তাৎক্ষণিক রক্তে শর্করা পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে নিজেই নিজের রক্তের শর্করা পরিমাপ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে সবচেয়ে ভাল।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস

ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা র অন্যতম একটি উপাদান সঠিক খাদ্যাভ্যাস। ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা ডায়াবেটিস হওয়ার আগে যে রকম থাকে পরেও একি থাকে। পুষ্টির চাহিদার কোন তারতম্য হয় না। খাদ্যের নিয়ম মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা, স্বাস্থ্য ভাল রাখা।

খাদ্য গ্রহনের নীতি

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের  গুরুত্ব
  • শরীরের ওজন বাঞ্ছিত অজনের বেশী থাকলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা। কম থাকলে বাড়িয়ে স্বাভাবিক করা এবং ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে সেটা বজায় রাখা একান্ত আবশ্যক।
  • চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে।
  • শর্করাবহুল খাবার গুলো (চাল, আটার তৈরি খাবার, মিষ্টি ফল ইত্যাদি) হিসেব করে খেতে হবে।
  • আঁশবহুল খাবার (ডাল, শাক, সবজি, টক ফল ইত্যাদি) বেশী করে খেতে হবে।
  • সম্পৃক্ত ফ্যাট (স্যাচুরেটেড ফ্যাট) যেমন- ঘি, মাখন, চর্বি, ডালডা, মাংস ইত্যাদি কম খাওয়া। পরিবর্তে অসম্পৃক্ত ফ্যাট (আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট) যেমন- উদ্ভিজ তেল, অর্থাৎ সয়াবিন তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি এবং সব ধরণের মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • নির্দেশিত খাদ্য তালিকা শিখে নিতে হবে।
  • গাইড বইয়ে উল্লেখিত খাদ্য-বিনিময় তালিকা শিখে নিতে হবে।
  • ক্যালরি বহুল খাবার নির্দেশিত পরিমানে খেতে হবে।
  • নির্দিষ্ট সময় খাবার খেতে হবে।
  • কোন বেলায় খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া ঠিক নয়।
  • আজ কম কাল বেশী-এভাবে খাবের খাওয়া ঠিক নয়।
  • অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে অর্থাৎ অসুস্থ অবস্থায় বিশেষ খাদ্য-ব্যবস্থা জেনে নিতে হবে।

ব্যায়াম

physical exercise

ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা ও রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যায়াম বা শরীর চর্চার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম মাংসপেশীর জড়তা দূর করে এবং রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও নিঃসরণের পরিমান বেড়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটলে শরীর যথেষ্ট সুস্থ থাকেবে। হাঁটা নিয়মিত একই সময় করলে ভাল হয়। শারীরিক অসুবিধা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মত সাধ্যমত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।

ডায়াবেটিস ঔষধ

ডায়াবেটিসের ঔষধ ২ প্রকার খাবার বড়ি ও ইনসুলিন। ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় সকল ডায়াবেটিস রোগীকে খাদ্য ব্যবস্থা, ব্যায়াম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে, এই তিনটি যথাযথ ভাবে পালন করতে পারলে রোগ নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। কিন্তু টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ইন্সুলিন ইনজেকশন দরকার হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসক শর্করা কমানোর জন্য খাবার বড়ি দিতে পারে।

সব শেষে বলা যায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে হলে জানার ও মানার বিকল্প নাই। প্রথমত এটি সম্পর্কে জানতে হবে। এটি কেমন রোগ, কেন হয়, হলে করনীয় কি ইত্যাদি। সুস্থ লোকের ও উচিত যেভাবে চললে ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলা। আর যারা ইতমধ্যে এই রোগে আক্রান্ত তাদের উচিত অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *