গ্রিন টি এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

আমরা সবাই কম বেশি গ্রিন টি সম্পর্কে জানি। পৃথিবীব্যপি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয় গ্রিন টি। গ্রিন টি এর উপকারিতা অনেক, বিশেষ করে ওজন কোমাতে গ্রিন টি অত্যন্ত কার্যকর। তাছেড়া ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করতেও গ্রিন টি ভাল কাজ করে। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফ্লু ও কাশি থেকেও রক্ষা করে।

প্রতিদিন অন্তত এককাপ গ্রিন টি মানুষের শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে দেয়, যার ফলে আপনি দিনভর সতেজ ও সুস্থ থাকবেন । তবে অনেকেই নিয়ম না মেনে এটি পান করে থাকেন, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই আমরা আজকে আলোচনা করব গ্রিন টি এর নানা উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি এর নানা উপকারিতা রয়েছে যার কিছুটা সুচনায় জেনেছেন, আরো কিছু উপকারিতা নিচে বিস্তারি দেয়া হল।

ওজন কমাতে গ্রিন টি

সবচেয়ে বেশি মানুষ গ্রিন টি খেয়ে থাকেন ওজন কমানোর জন্য। গ্রিন টি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে বারতি ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায্য করে। গবেষনায় দেখা গেছে গ্রিন টি প্রতিদিন ৭০ ক্যালরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে থাকে। এ থেকেই বুঝা যায় নিয়মিত গ্রিন টি খেলে বারতি ওজন কমানো ও ওজন নিয়ন্ত্রন এ রাখা সম্ভব। 

সুসাস্থের জন্য গ্রিন টি

গ্রিন টিতে রয়েছে এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে এবং আয়ু বাড়ায়। নিয়মিত এক কাপ গ্রিন টি পান করলে হার্ট এর রোগের ঝুঁকি ৪৪% কমিয়ে দেয় এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, ওরাল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ডেন্টাল ক্যাভিটিস প্রতিরোধ করে। এছাড়া গ্রিন টি মাউথওয়াশ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এতে আছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস ফলে এতে কোনো রেগুলার মাউথওয়াশের মত এলকোহল নেই। 

ত্বকের যত্নে গ্রিন টি

মধুর সাথে ড্রাই গ্রিন টির পাতা মিক্স করে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করলে লোমকুপের ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে ত্বককে নরম ও মসৃণ করে।

১ চা চামচ গ্রিন টির সাথে, অর্ধেক কলা, ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ টক দই ভালো মতো মিশিয়ে মুখে লাগান এবং শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক হিসেবে কাজ করে।

১ লিটার পানিতে ৩-৪ টি গ্রিন টি ব্যাগ এক ঘণ্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে এরপর চুল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনিং করার পর সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল শক্ত ও মজবুত হবে, এবং চুল পড়া কমাতেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন গ্রিন টি। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং হেয়ার ফলিকল উদ্দীপিত করে যা নতুন চুল গজাতে সহায়ক।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে গ্রিন টি ব্রণের সমস্যার জন্য খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকে কোন রকম ইরিটেশন বা ড্রাইনেস তৈরী ছাড়াই ব্রণ নির্মূল করে।

গ্রিন টি এর আরো কিছু উপকারিতা

মশা মাছির উপদ্রব থেকে বাঁচতে শুকনো চা পাতা ঘরের কোনায় পোড়ালে মশা মাছি কমবে।

ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রিন টি এর শুকনো পাতা একটি পাতলা কাপড়ে বেঁধে ফ্রিজের এক কোনায় রেখে দিলে ফ্রিজের দূর্গন্ধ দূর হবে।

গ্রিন টি পানিতে কয়েকদিন ভিজিয়ে রেখে গাছের গোড়ায় সেই পানি দিলে তা ফারটিলাইজার হিসেবে কাজ করে।

নিয়ম না মেনে গ্রিন টি খেলে কি হয়

অনেকেই নানা উপকারের জন্য গ্রিন টি সেবন করে থাকেন। তবে নিয়ম না মেনে গ্রিন টি সেবনের ফলে হতে পারে নানা স্বাস্থ ঝুকি। কেউ খালি পেটে, আবার কেউ দিনে ছয়-সাত বার গ্রিন টি পান করছেন যা মোটেও উচিৎ নয়। কিন্তু গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে বেশকিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। 

ভোরে খালি পেটে গ্রিন টি পান করা উচিৎ নয়। এতে বদহজম, অ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মানুষ প্রায়ই ফিট থাকার জন্য সকালে ব্যায়ামের পরে খালি পেটে গ্রিন টি পান করেন, যা খুবই ক্ষতিকর। 

খালি পেটে গ্রিন টি খেলে পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বমিভাব হতে পারে। গ্রিন টিতে ট্যানিন রয়েছে,  যা পেটে অ্যাসিড বাড়িয়ে তুলতে পারে। ফলে পেট ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড হওয়ায় বমিভাবও হতে পারে। এসবের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও বাড়ে।

পেপটিক আলসার বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে আক্রান্ত রোগীদের খালি পেটে গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। এতে তাদের অবস্থার অবনতি হতে পারে।

খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে তা সরাসরি রক্তকে প্রভাবিত করে। এতে রক্ত জমাট বাধায় কাজ করে যেসব প্রোটিন, সেগুলোর পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

শরীরে আয়রনের পরিমাণও কমিয়ে দেয় গ্রিন টি। এজন্য রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উচিত গ্রিন টি পান না করা। তবে কেউ যদি পান করতে চান, তবে অবশ্যই খালি পেটে নয়।

হার্ট রেট ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় গ্রিন টি। এতে থাকা ক্যাফেইন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপিত করে। যা কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়।

গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

সকালে গ্রিন টি পান করা ভালো, তবে নাস্তার পর। শরীরচর্চার আগে পান করতে পারেন। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন এক কাপ হলেও গ্রিন টি জরুরি। অবশ্যই খালি পেটে গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আরো পড়ুনঃ
চুল পড়ার কারণ ও করণীয়
গরমে সুস্থ থাকতে কি খাবেন আর কি খাবেন না
ডায়াবেটিস কি, লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *