আমরা সবাই চাই নিজেকে অকর্ষনীয় হিসেবে উপস্থাপন করতে। কেউই চায়না অতিরিক্ত চিকন বা মোটা হতে। আজকাল সবাই স্লিম বা ফিট থাকতে পছন্দ করেন। কেননা অতিরিক্ত মোটা শরীর যেমন ভাল দেখায়না আবার মোটা লোকদের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ জটিলতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত মোটা হওয়ার ফলে শরীরে জমে চর্বি, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তাই অনেক তাদের মোটা শরীরের ওজন কমিয়ে ফিট হতে চান। সাধারণত মানুষ ওজন কমানোর জন্য় ডায়েট কন্ট্রোল করে থাকেন। আবার অনেকেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বেশিরভাগ মানুষ সঠিক নিয়ম না মানার কারণে ওজন কমাতে গিয়ে নানারকম স্বাস্থ্য জটিলতায় পরেন। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব ওজন কমানোর উপায় ও খাবার তালিকা নিয়ে।
ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে মানুষের ওজন বৃদ্ধী হয়ে থাকে। তার মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবন যাপন, বংশীয় বা জিনগত কারণ, হরমোন জনিত সমস্যা ও শরীরের অভ্যন্তরিন কোন রোগের কারন অন্যতম।
আমরা বেশিরভাগ বাঙ্গালীরাই আসলে পুস্টিগুন বিবেচনা করে খাবার গ্রহন করিনা। কোন খাবারে কতটুকু ভিটামিন, শর্করা, আয়রন, ক্যলরি, খনিজ ইত্যাদি উপাদান আছে বা কোনটা কতটুকু খেতে হবে তা বিবেচনা করে আমরা খাই না। বেশিরভাগ ই আমরা খাই ক্ষুদা নিবাড়নের জন্য আর খেতে স্বাদ লাগার ব্যাপারতো আছেই। এর ফলে আমাদের ওজন বাড়লেও অনেক সময় পুস্টিঘাটতি রয়েযায় এবং ক্ষতিকর উপাদানে তৈরি খাবার খেয়ে শরীরে রোগ বাধাই।
আমরা এখনকার জেনারেশন বেশিরভাগ ই মোবাইলফোন এ বুদ থাকি। অনেকের খেলাধুলার ইচ্ছা থাকলেও মাঠ পান না। এখন আমরা সামান্য পরিমানও হাটাতে চাইনা, শরীরচর্চাও করিনা। তাই এখন আমাদের মধ্যে মোটা হওয়ার সংখ্যা বেশি, হৃদরোগের সংখ্যা বারছে, অন্যান্য রোগব্যাধিও বেশি হচ্ছে।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের বাবা-দাদারা যখন তরুন-যুবক ছিলেন উনাদের তখনকার ছবি থাকলে দেখবেন অথবা পুরোনো চলচিত্র দেখবেন ১৯৮০ সালের আগের তখনকার মানুষের শারীরিক গঠন কেমন ছিল, একদম স্লিম-হেংলা পাতলা। তখন মানুষ এত জাংক ফুড খেত না আর এখনকার মত এত অলস ছিলনা তারা। তারা অনেক দূর হেটে যেতেন, খেলাধুলা করতেন। তাই তাদের শরীর স্লিম ছিল আর তখন মানষের এত রোগ ব্যাধি ছিল না।
আর হরমোনজনিত কারন বা রোগের কারণে মোটা হলে সেটার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেই উনারা সাজেস্ট করবেন কি করতে হবে।
ওজন কমানোর উপায়
ওজন কমানোর জন্য দৈনন্দিন জীবনকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। ওজন কমানোর জন্য অনেকে অনেক ধরনের উপায় অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু আমাদের উচিত সঠিক নিয়ম মেনে ওজন কমানোর চেস্টা করা। ওজন কমানোর জন্য নিম্নের উপায়গুলো মেনে চলতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
মানুষের ওজন বৃদ্ধি বা ওজন কমাতে খাদ্যভ্যাসের পরিবর্তন আনা জরুরি। অতিরিক্ত মোটা শরীর এবং অতিরিক্ত চিকন শরীরে পিছনে খাদ্যভ্যাস মূখ্য ভুমিকা পালন করে। তাই ওজন কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা অনন্ত্য জরুরী। খ্যাদ্য তালিকায় কম পরিমানের কার্বোহাইড্রেট শরীরের বিপাকের উপর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত চর্বি ও তেল যুক্ত খাবার শরীরে মেদ বৃদ্ধি করে। তাই অতিরিক্ত চর্বি ও তেল যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
প্রতিদিন সকালে যদি চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সেগুলো চিনি ছাড়া খাওয়া উত্তম। কারণ চিনি থেকে খুব সহজে বাড়তি ক্যালোরি শরীরে প্রবেশ করে, যা ওজন বৃদ্ধি করে। তাই ওজন কমাতে চিনি এড়িয়ে চলা ভালো।
আমরা অনেকেই নাস্তা হিসেবে চায়ের সাথে বিস্কিট খাই, কিন্তু অধিকাংশ বিস্কিটেই থাকে প্রচুর পরিমানে চিনি আর চিনিতে থাকে ক্যালোরি। তাই ওজন কমানোর সময় চিনিযুক্ত বিস্কিট ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। ওজন কমানোর সময় খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিন, ফাস্ট-ফুড, ক্যান্ডি, আঁশ – এসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এসব খাবার শরীরে মেদ বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস যেন নিয়ম মেনে হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিনের খাবার সময় একই রাখবেন।
ওজন কমানোর সময় একসাথে বেশি খাওয়া উচিত নয়, অল্প অল্প করে খেতে হবে। ভাত, রুটি ও অন্যান্য ভারি খাবার কম খেয়ে নাস্তার সময়ে এমন খাবার খাওয়া যা খেলে ভিটামিন ও পুস্টি পাওয়া যাবে ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়া। যেমন বিভিন্ন ফল, খেজুর, বাদাম, চিয়াসিড, দুধ, ডিম, সবজি ইত্যাদি।
প্রতিদিনের জন্য ছোট্ট একটি খাদ্যাভ্যাস :
- সকালের খাবারে ভারী নাশতা রাখতে পারেন।
- দুপুরের খাবারে ভাত খাবেন।
- রাতে রুটি অথবা হালকা খাবার খাবেন।
কার্বোহাইড্রেট খাবার কম খাবেন?
চিকন থাকতে কম-বেশ সবাই চায়। কিন্তু অতিরিক্ত চিকন না। অতিরিক্ত মোটা শরীর বয়ে আনে অসুস্থতা। অতিরিক্ত পরিমানের কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ শরীরের জন্য অস্বাস্থ্যকর। তাই ওজন কমাতে খাবারে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান কমিয়ে আনেন। যত বেশি ওজন তত কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত। অস্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট খাবার তালিকা থেকে বাদ দেন। ওজন কমানোর জন্য নুডুলস , পাস্তা , সাদা আটা – ময়দা , সাদা চিনি প্রসেসড বা প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে যাবেন। খাবার তালিকায় যেসব কার্বোহাইড্রেট রাখতে পারেন তা হল : সব ধরনের সবজি , প্রতিদিন কয়েক টুকরো ফল , অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর স্টার্চ।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। সারা দিনের নানান ব্যস্ততায় ব্যায়ামের সময় নাও পেতে পারেন। তাই সকাল সকাল উঠে ব্যায়াম করতে পারেন। সকালের সময় আমাদের সবার মন ভালো থাকে তাই এ সময় ব্যায়াম করতে ভালো লাগবে। ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন দেড় – দুই ঘন্টা ব্যায়াম করতে পারেন । সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিয়মিত হাটাহাটি এবং জোরে জোরে দৌঁড়ানোর মাধ্যমে ওজন কমানো যায়। ক্যালরি বার্ণ করে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারেন। সিঁড়ি উঠা-নামা, সাইকেল চালানোর মাধ্যমে ক্যালরি বার্ণ করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়ামের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ব্যায়ামের পাশাপাশি ডায়েট কন্ট্রোলও করতে হবে।
ওজন কমানোর খাবার তালিকা
অতিরিক্ত ওজন সবাইকে অনেক চিন্তিত করে থাকে। ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট একটি খাবার তালিকা মেনে চলা যেতে পারে। একটি খাবার তালিকা তৈরি করে প্রতিদিনের খাবার সেই তালিকা অনুযায়ী খেতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য খাবারে নিয়ম মেনে চলা বা খাবার তালিকা অনুসরণ করা অন্তত্য প্রয়োজন। নিম্নের খাবার তালিকাটি মেনে চলতে পারেন :
চিয়াসিড
চিয়াসিডে প্রচুর পরিমানের ওমেগা-৩, প্রোটিন, ফসফরাস ও এনিমো-এসিড থাকে। চিয়াসিড খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত খিদে লাগার অনুভূব দূর হয়। এই চিয়াসিডে রয়েছে অনেক ধরনের উপকারিতা। চিয়াসিড ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১ চা-চামচ চিয়াসিড গরম দুধের সাথে বা নরমাল পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও পানিতে চিয়াসিড, টক দই ও লেবুর রস এক সাথে মিশিয়ে ৪০ মিনিট পর খেয়ে নিতে পারেন। চাইলে সাথে পুদিনা পাতাও যুক্ত করতে পারেন। এভাবে চিয়াসিড খেলে অনেক সহজে ওজন নিয়ন্তণ করা যায়।
গ্রিন টি
গ্রিন টি একটি উপকারী পানীয়। যা শরীরের অনেক ধরনের উপকার করে। রক্তের গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে গ্রিন টি। গ্রিন টি তে থাকে পাওয়ারফুল এন্টি-অক্রিডেন্ট থাকে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। একজন মানুষ দৈনিক ২ থেকে ৩ কাপ বা সর্বোচ্চ ৪ কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। গ্রিন টির উপকারিতা পেতে হলে খাবার খাওয়ার ৪৫ মিনিট বা ১ ঘন্টা পর গ্রিন টি পান করতে পারেন। ব্যায়াম করার আগে গ্রিন টি পান করলে পর্যাপ্ত পরিমান শক্তি পাওয়া যায়। মেদ কমাতে গ্িন টি অনেক উপকারি। তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে গ্রিন টি পান করা উত্তম।
জাম্বুরা
ওজন কমাতে জাম্বুরা অনেক সহায়ক। খাবার আগে জাম্বুরা খেতে পারেন এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। জাম্বুরা খেলে পেট ভরপুর মনে হয়। জাম্বুরা ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ জাম্বুরায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। জাম্বুরার ফাইবার ও পানি পেট ভরার অনুভূতি দেয়। জাম্বুরায় এক ধরনের এনজাইম রয়েছে , যা চর্বি পড়াতে সাহায্য করে। ফলে ওজন কমাতে থাকে। তাই প্রতিদিন ৩ বেলা খাবার ২০ মিনিট আগে জাম্বুরার জুস পান করতে পারেন।
ডিম
ডিম খেয়েও ওজন কমানো সম্ভব। ডিম হল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ডিম খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরপুর মনে হয়। খিদা কম লাগে ফলে অতিরিক্ত খাবার চাহিদা কমে। তাই ওজনও কম থাকে। ডিমে থাকে মাত্র ৭৫ গ্রাম ক্যালোরি। এতে ফাইবারও নেই। তাই ডিম খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে না। নারিকেল তেলে ডিম বেজে খেলে ওজন কমে। গোলমরিচে ‘ পাইপারিন যৌগ ’ থাকে যা কোমর ও পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই ডিমে সাথে গোলমরিচ গুঁড়ো ছিটিয়ে খেতে পারেন। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি ওজন কমানোর জন্যও উপকারী। ডায়েটের ফলে দেহের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ডিমে অনেক পুষ্টি রয়েছে তাই ডায়েটে রাখুন ডিম।
পানি
কিছু পানীয় পান করলে শরীরের ওজন কমে। শরীরের ওজন কমানোর জন্য সহজলভ্য জিনিস মিশ্রিত পানি পান করতে পারেন। এইসব সহজলভ্য পানি হল : পাতিলেবুর রস , দারুচিনি ভিজানো পানি , আদা ভিজানো পানি , মৌরি ভিজানো পানি , জিরা ভিজানো পানি , ডাবের পানি , গ্রিন টি , কালো কফি , দইয়ের স্মুদি শসা ও পার্সলের স্মুদি , মেথি চা , সবজির জুস ইত্যাদি। এসব পানি পান করলে সহজে ওজন কমানো সম্ভব। তাই এসব পানি বেশি বেশি পান করতে পারেন শরীরের ওজন তারাতারি কমানোর জন্য।
বাদাম
ওজন কমাতে বাদামও কার্যকরি। বাদাম খুব দ্রুত ওজন কমায়। বাদামে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও ফাইবার। চিনাবাদাম খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, ফলে বার বার খিদা লাগে না। ফলে খাবার কম খাওয়া হয়। তাই বাদাম খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অনেক ধরনের বাদাম রয়েছে, ওজন কমাতে কাঠবাদাম, চিনাবাদাম ও আখরোট খেতে পারবেন।
ব্রকলি
ব্রকলি ওজন কমানোর জন্য অনেক উপকারী। ব্রকলি খেলে দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা থাকে যার ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়। ব্রকলিতে ফ্যাট ও ক্যালোরি খুবই অল্প থাকে। তাই খুদা দূর করার জন্য ব্রকলি খেতে পারবেন। ব্রকলি খাওয়ার ফলে আপনার খুদা দূর হবে এবং আপনার ওজনও বাড়বে না। ব্রকলিতে রয়েছে উপকারী ক্যারোটিনয়েড। ক্যারোটিনয়েডস ফ্যাটের ভার কমানোর কাজে সহযোগিতা করে। এছাড়াও ব্রকলির এই উপাদানটি পেটের মেদ বা ভুঁড়ি কমানোর কাজে অতুলনীয়।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট অলিভ অয়েলে থাকার কারনে খিদে নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ভয় থাকে না।অলিভ অয়েলে রয়েছে : অ্যান্টি-অক্রিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ ও ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান অলিভ অয়েলে থাকার কারনে অলিভ অয়েল শারীরিক প্রদাহ কমায় সাথে ওজনও বাড়তে দেয় না।
যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চান বা মোটা হতে চান তারা এটি পরুনঃ সাত দিনে মোটা হওয়ার উপায়
আরো পড়ুনঃ বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কি করবেন?