চুল আমাদের সৌন্দর্যের প্রতীক। চুল মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে যেমন বৃদ্ধি করে ঠিক তেমনিভাবে আত্মবিশ্বাসকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। লম্বা ঘন কালো চুল কে না চায়। সব মেয়েরাই চান লম্বা, কালো ও ঘন চুল। কিন্তু চুল পড়া নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকে। একজন সাধারণ মানুষের দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক। সাধারণত মানুষের প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পরে তা আবার গজায়। কিন্তু চুল পড়া যদি অতিরিক্ত হয় এবং নতুন চুল না গজায় তাহলে বিষয়টি চিন্তার। তবে চিন্তার কোন কারন নাই, ঠিকমত চুলের যত্ন নিলে এবং কার্যকরি কিছু প্রাকৃতিক বা কিত্রিম জিনিস ব্যবহার করলে চুল পরা কমবে আর নতুন চুল গজাবে। আজকে আমরা আলোচনা করব অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও করণীয় নিয়ে।
চুল পড়ার কারণ
একজন মানুষের চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। বিভিন্ন বয়সে চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সাধারণত চুল পড়ার পিছনে কিছু হরমোনাল কারণ থাকতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সির কারণেও চুল পড়েতে পারে। শরীরের বিভিন্ন রোগের কারণেও চুল পড়তে পারে। অতিরিক্ত কাজের চাপ, রক্তশূন্যতা এবং পুষ্টিহীনতার কারণেও চুল পড়ে। চুল নিয়মিত পরিষ্কার না করা এবং অতিরিক্ত খুশকির কারণেও চুল পড়ে। ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে তাই ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ালেও চুল পড়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ও ভিটামিনের অভাবেও চুল পড়ে।
কয়েকটি রোগের কারণেও চুল পড়তে পারে
অনেক সময় বিভিন্ন রোগের কারণে চুল পরতে পারে এই সব রোগ থাকলে বুঝতে হবে এইসব রোগের কারণেই আপনার চুল পড়ছে। সবার প্রথমে যেই রোগটার কথা বলতেই হচ্ছে তা হল জন্ডিস। জন্ডিস হলে বেশির ভাগ সময় ই চুল পড়ে। জন্ডিস ধরা পরার পর বা এর ১-২ বছর পর চুল পড়লে বুঝতে হবে জন্ডিসের কারণেই চুল পড়ছে। এই রোগটা হওয়ার ৬-৭ বছর পরে থেকে চুল পড়া ধিরে ধিরে কমে যায়। টাইফয়েড মারাত্বক একটি রোগ এই রোগের কারণেও চুল পড়তে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা হলেও চুল পড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে থাইরয়েডের সমস্যা বেশি হলে চুল বেশি পড়ে। পিসিওডি বা পিসিওএস রোগটির কারণেও অনেকের চুল পড়ে থাকে। মহিলাদের এই সমস্যার কারণে অত্যাধিক চুল পড়তে পারে।
কিশোর বয়সে চুল পড়ার কারন
চুলের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন (এ, বি, সি, ডি এবং ই) এবং বিশেষ করে প্রয়োজন বায়োটিনের। এছাড়াও বেশকিছু খনিজ যেমন: আয়রন ও জিন্ক। কিশোর বয়সে চুল পড়ার কারন হতে পারে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব। কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েরা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাবার কম গ্রহণ করে, ফলে তাদের সুষম খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে অনেক কিশোর-কিশোরীর চুল পড়া শুরু হয়।
চুল পড়ায় করণীয়
অনেকের চুল জেনেটিক কারণে পড়ে থাকে। জেনেটিক কারণে চুল পড়লে এতে কিছু করার থাকে না। তবে অতিরিক্ত পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। নিয়মিত চুল আঁচড়াতে হবে, তবে ভেজা চুল আঁচড়ানো যাবে না। সাপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু করতে হবে। দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। নিয়মিত চুলে তেল দিতে হবে।
মাথার ত্বক ভালো রাখতে মসুর ডাল বেটে মাথায় লাগাতে পারেন। পেঁয়াজের রস চুলের জন্য অনেক উপকারী। পেঁয়াজের রস মাথায় মেখে ৩০ মিনিট পর ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে ভালো ভাবে চুল ধুয়ে ফেলবেন। মেহেদি পাতা বেটে চুলে দিতে পারেন। মেহেদি পাতা চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। চুলের জন্য অ্যালোভেরা অনেক উপকারী। ১৫-২০ মিনিট জন্য চুলে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
চুল পড়ায় ঘরোয়া সমাধান
চুল পড়া রোধ করার জন্য আপনি ঘরে বিভিন্ন হেয়ার পেক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ঘরে হেয়ার ওয়েল বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হল :
মেথি দানা ও কালোজিরা
মেথি দানা ও কালোজিরা চুলের জন্য অনেক উপকারী। মেথি দানায় আছে ভিটামিন-এ , ভিটামিন-কে , ভিটামিন-সি যা আমদের চুল পড়া বন্ধ করে। কালোজিরা ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়, খুসকি ধুর করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ২-৩ চামচ মেথি দানা এবং ২-৩ চামচ কালোজিরা সারা রাত ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিবেন। সকালে একটি ছাকনীর সাহায্যে ছেকে নিবেন। তারপর এই পানি হেয়ার সিরাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
চুল পড়া রোধে আমলকীর ব্যবহার
চুল পড়া বন্ধ করতে আমলকী ব্যবহার করতে পারেন। ২০০ গ্রাম আমলকী নিয়ে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে ফেলবেন। তারপর একটি ফ্রাইপ্যানে আমলকীর পেস্ট , পেস্টের পরিমাণ থেকে ২ গুন বেশি নারিকেল তেল , ১ টেবিল চামচ মেথি , মিডিয়াম সাইজের দারুচিনি দিয়ে চুলায় নরমাল আচে নেড়ে-চেড়ে জাল করে নিবেন। তারপর ছাকনীর সাহায্যে ছেকে নিলে তৈরী হয়ে যাবে আমলকীর তেল। সপ্তাহে ২-৩ দিন রাতে চুলে ব্যবহার করে সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
চুল পড়া রোধে অ্যালোভেরার ব্যবহার
অ্যালোভেরা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারি। অ্যালোভেরার ভিতরের অংশ ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিবেন। তারপর একটি ফ্রাইপ্যানে অ্যালোভেরা পেস্ট, নারিকেল তেল, ২ টি দারুচিনি এবং কয়েকটি গোলমরিচ দিয়ে চুলায় নরমাল আচে ভালো ভাবে জাল দিবেন। জাল দেয়া পানি অর্থাৎ অ্যালোভেরা তেল ভালো ভাবে ছাকনী দিয়ে ছেকে নিবেন৷ এই তেলটি চুল পড়া রোধে অনেক সাহায্যকারী। এছাড়াও এটি চুল ঘন হবে, বৃদ্ধি হবে, অকালে পেকে যাবে না। কাচের বোয়ামে তেলটি সংরক্ষণ করতে পারেন।
চুল পড়া রোধে আরও কিছু করণীয়
চুল পড়া কমাতে আরও কিছু করণীয় রয়েছে। রাতে ঘুমানোর জন্য সুতির বালিশের কভারের জন্য চুল টান খেয়ে ছিড়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই বালিশে সুতি কাপড়ের জায়গায় সিল্কের কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল ছিড়ার ভয় থাকে না। গোসলের পর পানির জন্য চুলের গোড়া নরম থাকে, তাই তখন চুল জোড়ে মুছা বা আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে, এতে চুল পড়া আনেকাংশ কমে আসবে। চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা উচিত, কারণ হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাসে চুলের ক্ষতি হয় এবং চুল পড়া বেড়ে যায়।
চুল পড়া রোধ করতে চুলে প্রতিদিন তেল ব্যবহার করেন। তেল চুলকে সতেজ এবং স্বাস্থ্যবান করে তুলে। চুল পড়া রোধ করতে হলে প্রতিদিনের খাদ্যভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এছাড়াও অপরিষ্কার মাথাও চুল পড়ার একটি কারণ। তাই সব সময় মাথা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন। চুল পড়া রোধ করতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। তাই সব সময় সুষম খাদ্য গ্রহণ করা চেষ্টা করবেন। বেশি বেশি করে ভিটামিন-বি খাবেন। চুলে যে তেল ব্যবহার করেন তাতে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন-ই ক্যাপসুল চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।
আরো পরুনঃ
মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়
ব্রন কি? কেন হয়? ব্রন দূর করার উপায়।
ব্রণ দূর করার উপায় ও ব্রন এর দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়