মানসিক  চাপের ক্ষতিকর প্রভাব ও পরিত্রানের উপায়

কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক, পরালেখা, অসুস্থতা, আর্থিক কিংবা প্রেম ঘটিত কারণ সহ আরো নানান কারণে মানুষ মানসিক চাপে থাকেন। বর্তমান সময়ে কোন না কোন কারণে মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ১ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কেউ মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে তখন এটি শরীরেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এমন বিষয় বা পরিস্থিতী এড়িয়ে চলা বা যেভাবে চিন্তা ভাবনা করলে প্রতিকুল পরিস্থিতীতেও মানসিক চাপ সৃষ্টি না হয় তা শিখে নেয়া উচিত। 

মানসিক  চাপ  শরীরে যেসব সমস্যা সৃষ্টি করে

মানসিক চাপের কারনে মানু্ষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় কিছু নিচে আলোচনা করা হল।

টাইপ-২ ডায়বেটিসঃ 

এই রোগের উৎপত্তি হতে পারে বিশেষ চিন্তা এবং মানসিক চাপের প্রভাবে, যা ডায়বেটিসের মতো একটি রোগ সৃষ্টি করতে পারে। যখন মানসিক চাপ অত্যন্ত বেড়ে যায়, তখন লিভার অত্যন্ত বেশি চিনি উৎপাদন করে শরীরের আবশ্যক শক্তি পূর্ণ করতে, যা মৌলিকভাবে প্রয়োজন পরে না। এ অতিরিক্ত চিনি বেশিরভাগ সময় অব্যবহৃত থাকে এবং রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়াতে বিশেস ভূমিকা পালন করে, এবং এই কারণে দ্বিধায়ী মানসিক চাপ থেকে টাইপ-২ ডায়বেটিস হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপঃ  

আমাদের মানসিক চাপ যখন অত্যন্ত পরিমান হয়, তখন আমাদের হার্টবিট অত্যন্ত বাড়ে এবং রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়। এই বেসি পরিমান মানসিক  চাপের কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাপের থেকে তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়, যা সাধারণভাবে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার সূত্রপাতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এতে অনির্দিষ্ট ভাবে রক্তনালী গুলি  শক্তিশালী হয় এবং অযত্নে অধিক চাপের দাবি সহায় করতে পারে। সাথে সাথে, এই অস্বস্তিকর রক্ত চাপের  ফলে রক্তনালীর ক্ষতি সম্ভব এবং হার্ট আটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

শ্বাসকষ্টঃ

হেল্থডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, যাদের হাঁপানি রয়েছে মানসিক চাপ থেকে তাদের এই সমস্যা আরও বাড়ে। আর যাদের নেই, তাদের মধ্যেও অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। কারণ মানসিক চাপে মাংস পেশিতে টান পড়ে। ফলে শ্বাস নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।

মাথাব্যথাঃ  

মানসিক চিন্তা থেকে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেইন হতে পারে। মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেইনের লক্ষণ। মাইগ্রেইন হল ‘টেনশন’ মাথাব্যথা হিসেবে পরিচিত। মাথায় আপনি কিছু পেঁচিয়ে ধরছেন বলে মনে হয়। মাথা, কপাল ও নাকের চারপাশে এই ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা মিটানোর জন্য ওষুধ, গরম বা ঠাণ্ডা ভাপ নেওয়া। তবে, ওষুধ নির্দিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ মাত্র খেতে হবে।

ঘুম কমে যাওয়াঃ

মানসিক চাপের সময়, অনেকে রাতে গুমাতে পারে না, এটা পরবর্তী হাইপারঅ্যারাউজিয়া হতে পারে। এছাড়া ‘ইনসমনিয়া’ বা ঘুম না পাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়।

অনিয়মিত পিরিয়ডঃ

যে সকল নারীরা খুব বেশি মানসিক চাপের মুখে থাকেন, তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার সমস্যা শুরু হয়। এছাড়াও সাথে আরও রক্তপাত, পিরিয়ড সময়ে পেটে ব্যাথা, এবং শিরাসে চাপের মতো লক্ষণ দেখা যায়। মানসিক চাপ শরীরের উপর বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ডাকে এবং পিরিয়ড-সম্বন্ধিত সমস্যাগুলি উত্থান করতে পারে।

মানসিক চাপ এড়ানোর উপায়ঃ 

যদি ইতোমধ্যে আপনি মানসিক চাপে ভুগে থাকেন তবে জেনে নিন কীভাবে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদিকে সহজেই জীবন থেকে দূরে রাখা যায়। মানসিক সমস্যা সমাধানে মনোবিজ্ঞানীদের কয়েকটি উপায় প্রদান করা হল যেমন – 

নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেশন বা ধ্যান, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পরিবার ও প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, খেলা-খুলা করা, কায়িক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করা, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলাফেরা করা ইত্যাদি। 

যদি সমস্যা বা চাপ বেড়ে যায় তাহলে সাইকেট্রিস্ট বা মনসিক রোগের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *