শহরে বাগান করার জন্য খালি জায়গা খুজে পাওয়া দুষ্কর। তাই অনেকে সখে বা পরিবারের চাহিদা মেটাতে ছাদে বাগান করে। মাটিতে আর ছাদে বাগান করার মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। মাটিতে অনেক সময় যত্ন বা পরিচর্যা ছাড়াও অনেক গাছ বেড়ে উঠে কিন্তু ছাদে দরকার অনেক যত্ন এবং পরিচর্যা। ছাদে ফুল, শাক সবজি এগুলোর পাশাপাশি ফলের চাষ করে নিজের পরিবারের ফালের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব। এবং ছাদ বাগান থেকে পাবেন একদমই ফরমালিন মুক্ত ফল। যা বাজার থেকে সম্ভব নয়। তাহলে চলুন জেনে নেই কীভাবে খুব সহজেই ছাদে ফল চাষ করা যায়।
গাছ কিসে লাগাবেন?
ছাদে অনেক গাছ লাগানো সম্ভব হলেও তুলনামূলক ভাবে আকারে ছোট হবে এমন গাছ নির্বাচন করাই উত্তম। গাছের আকারের উপর পাত্র নির্ভর করে। আকার অনুযায়ী টব বা হাফড্রাম বা স্থায়ী বেড ব্যবহার করা যায়।
টব
বিভিন্ন আকারের টব থাকলেও ফল চাষের জন্য সব টব ব্যবহার করা যায় না। এজন্য বড় আকারের টব প্রয়োজন। বাজারের সবচেয়ে বড় মাপের টব পাওয়া যায় অথবা নিজেই সিমেন্ট দিয়ে তৈরী করে নিতে পারেন টব। এক্ষেত্রে প্রতিটি ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি টবের জন্য জৈব সারের সাথে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে ২-৩ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে৷ এর পর টবে ভরাট করে নিতে হবে। টবের উপর থেকে ১-১.৫ ইঞ্চি জায়গা খালি রাখতে হবে। অর্থাৎ টব মাটি দিয়ে একদম পরিপূর্ণ করা যাবে না।
হাফড্রাম
ফুল ও শাকসবজির জন্য যে কোন আকারের পাত্র ব্যবহার করা গেলেও ফল চাষে পাত্র যত বড় হবে তো ভালো ফলন পাওয়া যাবে। সেই প্রেক্ষিতে বর্তমানে হাফড্রাম পদ্ধতি খুবই জনপ্রিয়। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি ড্রামে জৈব সারের সাথে ২০০-২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০-১৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
স্থায়ী বেড
এটি একটি স্থায়ী পদ্ধতি। নীচে প্রথমে ইটের কণা, তারপর ১-১.৫ ইঞ্চি পরিমাণ পচা গোবর দিতে হবে। তারপর উপরের অংশের ২ ভাগ মাটি এবং ১ ভাগ পচা গোবর দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে স্থায়ী বেড তৈরী করতে হবে।
ছাদে কিধরণের ফল গাছ লাগাবেন
গাছের আকার ছাদ বাগানের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। গাছটি যেন আকারে খুব বেশী বড় না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এজন্য হাইব্রিড জাতের চারা অথবা কলম করা চারা গাছ লাগানো ই উত্তম। অতি দ্রুত ফল প্রদান করে এমন গাছ ছাদ বাগানের জন্য বাছাই করা উচিত।
ছাদে লাগানো উপযোগী গাছগুলোর নাম নীচে উল্লেখ করা হলো-
আপেল কুল, পেয়ারা কুল,পেঁপে, জলপাই, মল্লিকা ও আম্রুপালি জাতের আম, আমড়া, শরিফা, আতা, করমচা, ডালিম, কলমের জলপাই, কলমের কদবেল, স্ট্রবেরি, লিচু, নারিকেলকুল, থাই পেয়ারা, আংগুর পেয়ারা, খুদে জাম, আঁশফল, ড্রাগন ফল, কামরাংগা ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিদেশি অনেক প্রজাতির ফলের চারা এখন দেশের নার্সারি গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো সংগ্রহ করতে পারেন।
কীভাবে গাছ লাগাবেন?
আপনি যেই পদ্ধতি ই ব্যবহার করেন না কেন চারা রোপন করতে হবে খুব সাবধানে। ঠিক মাঝামাঝি এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ নিচে চারা রোপন করতে হবে। নার্সারি থেকে চারা আনা হলে চারার সাথের মাটি যেন পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ করার নিয়ম
৭-১০ দিন অন্তর অন্তর খোল দেওয়া উত্তম। সার দিয়ে খোল ভিজিয়ে পাতলা করে অন্তত ৭-৮ দিন খোল পচিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা
আগেই বলেছি মাটিতে এবং ছাদে গাছ লাগানো এক কথা নয়। তাই ছাদের গাছের যত্ন অনেক বেশী হতে হবে। সার প্রয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কম বা বেশী হওয়া যাবে না। নিয়মিত সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ২-৩ সপ্তাহ পর পর মাটি খুচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। আগাছা জন্মালে খুব সাবধানে সেগুলো উপড়ে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ার কোন ধরনের ক্ষতি না হয়। রোগাক্রান্ত ডালপালা কেটে দিয়ে গাছকে রোগমুক্ত করতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর পর কিছু ডালপালা কেটে দিলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। রোগাক্রান্ত হলে উপযুক্ত বালাইনাশক প্রয়োজন মতো প্রয়োগ করতে হবে।
ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ১০ টি ফল গাছ
ছাদ বাগানের টবের মাটি তৈরির পদ্ধতি
ছাদ বাগান করার সহজ পদ্ধতি