ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ১০ টি ফল গাছ

ছাদ বাগানে ফল চাষ করে একদিকে পরিবারের চাহিদা পূরন করা যায় অপরদিকে ফরমালিন মুক্ত ফলমূল খাওয়া যায়। ছাদে অনেক ধরনের ফল গাছ রোপন করা গেলেও আজ সবচেয়ে উপযোগী ১০ টি ফল গাছ নিয়ে আলোচনা করবো।

১. পেয়ারা

পেয়ারা ভিটামিন সি এর একটি অন্যতম উৎস হলেও এতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, প্রোটিন,  ক্যালরি, ভিটামিন এ, ও বি পাওয়া যায়। পেয়ারা উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এটি ওজন কমাতেও সহায়তা করে।  ছাদে পেয়ারা চাষের জন্য বড় সাইজের টব হলে ভালো হয়। দোঁ আশ মাটি এবং বেলে মাটিতে পেয়ারার ফলন ভালো হয়। সার হিসেবে চাপান সার বা কম্পোস্ট সার ও তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ডাল ছাটাই এর ব্যবস্থা করতে হবে।

২. আম

বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের আম বাসার ছাদেই রোপন করা যায়। ছাদে প্রায় সব জাতের আম করা গেলেও সবচেয়ে ভালো হয় আম্রুপালি। সিমেন্ট দিয়ে একটু বড় আকারের টব তৈরী করে বা বড় ড্রামের পাত্রে আমের চারা লাগানো উত্তম। মাটি কিছুটা ঝুরঝুরে করে মে থেকে জুন মাসে কলমের চারা লাগালে ভাল হয়। আম গাছে বছরে প্রায় দু বার সার প্রয়োগ করতে হয়। এক্ষেত্রে রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে জৈব সার প্রয়োগ করা উত্তম। আস্তে আস্তে পানি সেচের পরিমান বাড়াতে হয় তুলনামূলক ভাবে। 

৩. লিচু

লিচুতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি। লিচু গাছ লাগানোর ক্ষেত্রেও বেলে দোঁআশ মাটি উত্তম। কাটিং ও গুটি কলমের মাধ্যমে লিচুর চারা তৈরী করা যায়। চায়না -৩,  কদমী, মাদ্রাজী, বোম্বাই ইত্যাদি জাতের লিচু সবচেয়ে ভালো। জৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসে কলমের চারা রোপনের উত্তম সময়। অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাটাই এবং ঘন ঘন সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৪. কমলা

কমলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। কমলা চাষের জন্য কমপক্ষে ১৮ ইঞ্চির টব বা ড্রাম ব্যবহার  করতে হবে। প্রতিটি টবে মাটির সাথে কম্পোস্ট, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিংক সালফেট সার মিশাতে হবে। ভালো ফলন পেতে অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাটাই করতে হবে। ফল ভালোভাবে পাকার পর সংগ্রহ করতে হবে।

৫. আপেল কুল

এই গাছের চারা বর্ষার পর লাগানো উচিত। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চারা বোনা যাবে। প্রতিটি গাছের দুরত্বে ৬-৮ ফুট হওয়া ভালো।  গাছে ফুল ধরার পর প্রতি লিটার পানির সাথে ০.৩ মিলি অনুপাতে ফাইটোনাল এম আই মিশ্রণ করে স্প্রে করতে হবে। আশে পাশে কিছুটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নয়তো মাছি আক্রমণ করতে পারে।

৬.  স্ট্রবেরি

শীত বেশী পড়ে এরকম অঞ্চলে স্ট্রবেরির ফলন ভালো হয়। অক্টোবর আর নভেম্বর মাস স্ট্রবেরির চারা লাগানোর জন্য উত্তম সময়। এই গাছের চারা সংগ্রহে অবশ্য সচেতন হতে হবে।  ভালো মানের চারা সংগ্রহ করতে হবে। মিডিয়াম মাপের টবে স্ট্রবেরি চাষ করা যায়। এতে মাটির সাথে গোবর আর ড্যাপ সার প্রয়োগ করা যায়। মরা পাতা কেটে ফেলতে হবে। খুচিয়ে মাটি কিছুটা আলগা করে দিতে হবে এবং নিয়মিত সেচ দিতে হবে। 

৭. ড্রাগন ফল

ড্রাগন ফলের চারা সবসময় রোপণ এর সুযোগ থাকলেও এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা অধিক উত্তম। ১৮-২০ ইঞ্চির  সিমেন্টের টব অথবা ড্রামে এ চারা রোপণ করতে হবে। বেলে দোঁ আশ মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে মাটি তৈরী করতে হবে। নিয়মিত রোদ পড়ার জায়গায় রাখা উচিত এবং খুব বেশী পানি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে গাছ যেন হেলে না পরে তার জন্য খুঁটির সাথে বেধে দিতে হবে।

৮. সফেদা ফল

সফেদা ক্যালসিয়াম,  খনিজ, লবন ও শ্বেতসার সমৃদ্ধ একটি মিষ্টি ফল। এটি ছাদের টবে বেলে দোঁ আশ মাটি তে রোপন করতে হয়। এজন্য প্রায় ১০-১২ ইঞ্চির টব প্রয়োজন। খুঁটির সাথে বেধে গাছকে সোজা করে রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. লেবু

২০-২২ ইঞ্চি আকারের সিমেন্টের টব বা ড্রামে লেবু চাষ করা উত্তম। উন্নত জাতের লেবুর চারা নির্বাচন করতে হবে যেমন কাগজি লেবু ১,  বাউ কাগজি লেবু ২। বছরের যেকোন সময় লেবু চারা রোপন করা গেলেও বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস এ করা উত্তম। লেবু গাছে প্রচুর নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে। লেবু গাছ লাগানোর ক্ষেত্রেও বেলে দো আশ মাটি ই উত্তম। ২ সপ্তাহ পর পর খুচিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। মাটি গাছের গোড়ায় ভালোভাবে চেপে দিয়ে গাছকে সোজা করে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে খুঁটিও ব্যবহার  করা যায়।

১০. ডালিম / আনার / বেদানা

এক্ষেত্রে ২০-২২ ইঞ্চির টব বা ড্রাম ব্যবহার করতে হবে। এই ফল চাষেও বেলে দোঁআশ মাটি উত্তম। এর সাথে গোবর, টিএসপি, হাড়ের গুড়া, পটাশ মিশাতে হবে। চারা লাগানোর ৫-৬ মাস পর থেকে প্রতি এক মাসের মাথায় সরিষার খৈল পচা পানি দিতে হবে। প্রতি বছর গাছে নিয়মিত পরিমান মতো সার প্রয়োগ করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ছাদে সবজি চাষ করার সহজ পদ্ধতি
ছাদ বাগানের টবে গাছ লাগানোর পদ্ধতি
ছাদ বাগানের টবের মাটি তৈরির পদ্ধতি
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
থ্যালাসেমিয়া কি? কেন হয় | লক্ষন ও প্রতিকার
মাইগ্রেন কি? কেন হয় | চিকিৎসা ও প্রতিকার

3 Replies to “ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ১০ টি ফল গাছ”

  1. খুবই সুন্দর করে বিষয় গুলো বর্ণনা করেছেন এই পোস্ট এর মাধ্যমে। এই পোস্ট পড়ার পর অনেক বিসয় জানতে পেরেছি খুবি উপকারি পোস্ট ।সহজ ও সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করেছান। আমার অনেক ভাল লেগেছে।

  2. তাহলে আমি স্টেপ নিচ্ছি, পরে বলবেন না আমি ওয়ার্নিং দিইনি। আপনার সাইট আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না, সেই ব্যাবস্থা করছি।

    1. আপনার মত বলদ অথরের সাইটের লিংক আমি রিমুভ করে দিচ্ছি। তবে আপনি থ্রেড দিলেন তো দেখি কি করবেন করেন। ওসব টুকটাক আমরাও পারি সেটা মনে রাইখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *