হৃদয় দেখতে খুব সুন্দর হওয়ায় তার পরিবার মনেকরেছিল তাকে জীন-পরি নিয়ে গেছে, সেই হিসেবে ধর্না দেন বিভিন্ন কবিরাজের কাছে। তাদের ধারণাতেও ছিল যে ছেলেকে কেউ হত্যা করতে পারে। খোজাখুজির একপর্যায়ে তার মায়ের কাছে ফোন কল আসে হৃদয়ের। তার মাকে সে বলে তাকে ২৮ তারিখ রাত ১২ টায় ৮-৯ জন মানুষ ধরেনিয়ে হাইয়েস গারিতে করে প্রায় ৯-১০ ঘন্টা গারি চালিয়ে কোন এক যায়গায় নিয়ে গেছে যা সে চিনতে পারছেনা। তারপর কথা বলে হৃদয়কে অপহরনকারি ব্যক্তিরা মুক্তিপন দাবী করে ১৫ লক্ষ টাকা। অনেক দর কসাকসির পর হৃদয়ের পরিবার বোঝাতে সক্ষম হন তাদের পক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা দেয়া কোনভাবেই সম্ভব না। পরে পুলিশকে না জানানোর শর্তে ২ লক্ষ টাকা দিলে হৃদয়কে ছেরে দিবে বলে।
এদিকে কল করা নাম্বারটি হৃদয়ের কর্মস্থল বা পরিচিত অন্য কারো কিনা সেই খোজ করে হৃদয়ের পরিবার, কিন্তু তার খোজ মিলেনি। কোন খোজ না পেয়ে ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করে অপহরণকারীদের দেয়া ঠিকানা বান্দরবানের উনাইছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন হৃদয়ের বাবা মোহাম্মদ শফি। তাদের দাবী তখন বান্দরবানের প্রশাসন হৃদয়ের বাবার সঙ্গে নির্দিস্ট জায়গা পর্যন্ত গিয়ে আর গহিনে যেতে পারবেনা বলেন। উপায় না পেয়ে হৃদয়ের বাবা ছেলের জীবন বাচাতে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে একাই টাকা নিয়ে জান দূর্গম পাহাড়ে। কিন্তু টাকা দিলেও ছেলেকে পান না হৃদয়ের বাবা। অপহরণকারীরা বলে ২ ঘন্টার মধ্যে হৃদয় ঘরে ফিরে যাবে। উপায় না পেয়ে ছেলেকে ছাড়াই ফিরতে হয় হৃদয়ের বাবাকে।
অন্যদিকে অপহরনকারীদের টাকা দেয়ার পরি হৃদয়ের কর্মস্থলের উপজাতি কর্মচারিরা পালিয়ে যায়। তারপর ই ঘটনার মোড় ঘুরেযায় অন্যদিকে। পরে তাদের ও ধরার জন্য খুজতে থাকে সবাই।
হৃদয়ের বাবা যেখানে টাকা দিয়ে আসেন তার আশেপাশে ছেলেকে এক সপ্তাহ ধরে খুজতে থাকেন। পরে জানতে পারেন কিছুদিন আগে একটা যায়গায় এক ইটভাটার ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ড্রোনে কেমেরা দিয়ে তাকে খুজে বের করে উদ্ধার করা হয়। হৃদয়ের বাবা ওখানকার স্থানীয়দের হাতে-পায়ে ধরে ঐ জায়গায় যেতে রাজি করান। সবাই মিলে পাহাড়ের চারপাশ থেকে ঘীরে ঐ জায়গা থেকে ২ জনকে আটক করেন যাদেরকাছে ছিল ২ টা আগ্নেয়াস্ত্র ও দুটি ওয়াকিটকি। হৃদয়ের বাবা শফি বলেন এই দুজনের একজন মুক্তিপনের টাকা নেয়ার সময় তাকে চেক করেছিলো।
মোহাম্মদ শফি আটককৃতদের হৃদয়ের সাথের উপজাতী করমচারীদের ছবি দেখিয়ে তাদের চিনে কিনা এবং কোথায় থাকে তা জানতে চাইলে তারা বলে ৩ জনকে তারা চিনে এবং তারা চট্রগ্রাম শহরের পুরোনো চাঁদগাও থানা এলাকায় থাকে সাথে নিলে তারা চিনিয়ে দিতে পারবে। তখন সেখানে বাদন্দরবানের এসপি ও নাকি ঘটনা স্থলে ছিলেন।
ঐদিকে উপায় না পেয়ে তখন হৃদয়ের মা নাহিদা আক্তার পালিয়ে যাওয়া ৫ উপজাতি কর্মচারি ও মুক্তিপনের টাকা নেওয়া সেই ব্যক্তির নামে রাউজান থানায় মামলা দায়ের করেন। তারপর অভিযানে নামে পুলিশ ও কয়েকটি সংস্থা। প্রযুক্তির সাহায্যে পুলিশ তাদের পরিচয় শনাক্ত করেন এবং আটকও করেফেলেন। পরে জানাযায় তাদের নামে আগেও আরো বেশকয়েকটি মামলা রয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি উমংসিং মারমাকে আটক করার পর খোজ মিলে হৃদয়ের। আসামি উমংসিং মারমার কাছ থেকে পাওয়াযায় ভয়ংকর তথ্য। সে স্বিকার করে যে হৃদয়কে তারা হত্যা করেছে। সে জানায় হৃদয়কে অপহরণ করতে বান্দরবান থেকে ৬ জনকে ভাড়া করাহয়, এবং সে কৌশলে হৃদয়কে ঘুমথেকে ডেকে সেই ৬ জনের হাতে তুলে দেয়। তারপর তারা চট্রগ্রাম ও রাঙ্গামাটির মাঝামাঝী এলাকার একটি দূর্গম পাহাড়ে আটকে রাখা হয় যেখানে যেতে পুলিশের ও অনেক বেগ পেতে হয়। জনবসতি থেকে ৪ ঘন্টা হাটার পর আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে পুলিশ।
পুলিশের সাথে থাকা প্রধান আসামী উমংসিং হৃদয়কে জবাই করার স্থান ও তার পরনে থাকা জামা-পেন্ট এবং যেই রশি দিয়ে হৃদয়কে বেধে নেয়া হয়েছিল সেটি খুজে বের করে দেয়। তারপর একটি মাথারখুলি ও কিছু হাড় দেখিয়ে বলে এগুলো হৃদয়ের। লোমহর্সক সেই অভিজানে সাথে ছিলেন হৃদয়ের চাচা। তিনি জানান সেখানে হৃদয় ছাড়াও ছিল আরো বেশকিছু মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ।
সেই অভিযান শেষে ফেরার পর হৃদয়ের বীভৎস পরিণতি দেখে রাউজানের স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনগন প্রধান আসামী উমংসিং মারমাকে গনপিটুনি দিয়ে হত্যা করেফেলে। তখন তাকে বাচানোর চেস্টা করতে গিয়ে আহত হন কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
সেই অভিযানে উমংসিং জানিয়েছিল হৃদয়কে হত্যা করাহয় ১২ দিন আগে। এখন প্রশ্ন জাগে মাত্র ১২ দিনে কি মানুষের শরির পচে হাড় ও খুলি এভাবে বেরিয়ে আসে? ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার বলেন আমাদের দেশের পরিবেশ অনুযায়ী মৃতদেহের এই অবস্থা হতে অন্তত এক থেকে দের মাস সময় লাগার কথা। তাই অনেকে বলছেন হৃদয়কে মেরে তার মাংষ খেয়েফেলেছে অপহরণকারীরা।
পরে পুলিশ অভিজান চালিয়ে বাকি চার আসামীকেও আটক করেন। প্রধান আসামী গনপিটুনিতে মারা গেলেও আর একজন আছেন যাকে মুক্তিপন এর টাকা দিয়েছিল হৃদয়ের বাবা। পুলিশ আটককৃতদের পরিবার ও তাদের সাথে আরো যোগসাযোশ আছে কিনা তা জানার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো কোন তথ্য আদায় করতে পারেন নি।
পুলিশের ধারনা পার্বত্য এলাকায় যেসব সন্ত্রাসী বাহিনী আছে তাদের খরচের যোগান দিতেই তারা এধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে থাকে।
অন্যদিকে এই ঘটনাকে ঘীরে উপজাতি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে বিরুপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রতিনিধীদের উদ্যোগে ঘটনার এলাকায় রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন উপজাতিরা। আবার ঐদিকে ভয়ে ভয়ে চলাফেরা করছেন বাঙ্গালীরা। আমাদের আশা সন্ত্রাসীরা শাস্তি পাক, সমপ্রিতি বজায় থাক।
এই অপহরণকারীদের ধরার পিছনে মূল ভুমিকা পালন করেন হৃদয়ের বাবা মোহাম্মদ শফি। তিনি ছেলেকে ফিরে পেতে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে যেভাবে খুজে গেছেন তা আসলে বিরল ঘটনা। এখন তাদের দাবী এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের যেন দৃস্টান্তমুলক শাস্তি হয়।
ভালো লাগলো।।।।