মোগল শাসনামলে বাংলার রাজধানী ঢাকাকে দস্যু ও মগদের হাত থেকে রক্ষা করতে যেই ৩ টি জলদূর্গ তৈরি করা হয় ইদ্রাকপুর কেল্লা তার মধ্যে অন্যতম। আগে নদীপথেই মানুষের যাতায়াত ও পন্য আনা-নেয়া হত বেশি। দস্যু ও শত্রুপক্ষ অক্রমন ও করত নদীপথে। তাই কেল্লা বা দূর্গগুলো নদীর মোহনার কাছে নির্মান করা হয়েছিল এটি বর্তমান মুন্সিগঞ্জ সদরে অবস্থিত। এই জায়টিতে ইছামতি, ধলেশ্বরি, ব্রম্মপুত্র, মেঘনা ও শিতলক্ষার মোহনা ছিল বিধায় এখানে কেল্লাটি নির্মান করা হয়। এই কেল্লাকে ঘিরেই ধীরে ধীরে মুন্সীগঞ্জ গরে উঠে। এখানকার তৎকালীন নাম ছিল বিক্রমপুরের অন্তর্গত ইদ্রাকপুর। তাই জায়গার নামানুশারে কেল্লাটি ইদ্রাকপুর কেল্লা নামে পরিচতি পায়। অপর দুইটি জল দূর্গ বা কেল্লা নারায়ণগঞ্জ এ অবস্থিত একটি হাজীগঞ্জ দূর্গ এবং অপরটি বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা দূর্গ। এই কেল্লাগুলোর সঠিক নির্মানকাল ও নির্মাতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে ধারনা করাহয় মির জুমলা বাংলার সুবেদার নিজুক্ত হওয়ার পর ১৬৬০ সালে এই কেল্লা নির্মান করেন।
অন্য দুইটি জলদূর্গে ভিতরে বসবাসের কোন স্থাপনা না থাকলেও ইদ্রাকপুর দূর্গে ছিল। এটির দৈর্ঘ ২৪০ ফুট ও প্রস্থ ২১০ ফুট। বর্তমানে এলাকাটি ভরাট হতে হতে দূর্গের প্রায় ২০ ফুট উচু সিমানা প্রাচীর তিন চতুর্থাংশ মাটির নিচে চলে গেছে। সিমানা প্রাচীরগুলো ছিল প্রায় ৩ ফিট চওড়া যাতে ছিল গোলা বারুদ, তীর ও বন্দুক চালানোর জন্য অসংখ্য ছিদ্র। সিমানা প্রাচীরের চারকোনায় চারটি বুরুজ রয়েছে।
প্রাচিরের ভিতরে মধ্যখানে রয়েছে গোলাকৃতির মূল দূর্গটি। এটির উত্তরপাশে উপরে উঠার জন্য রয়েছে একটি বিশাল আকৃতির সীড়ি। উপরেও রয়েছে শ্ত্রুদের পর্যবেক্ষন ও আক্রমন করার জন্য নানান ব্যবস্থা। মূল দূর্গে প্রবেশ বা উঠার সিড়ির পাশেই একটি সুরঙ্গ রয়েছে যা এখন অনেকটা বন্ধ অবস্থায় আছে। লোকমুখে শোনাযায় এই সুরঙ্গ দিয়ে নাকি ঢাকার লালবাগ কেল্লায় যাওয়া যেত। শত্রুদের ঘায়েল করতে মূল কেল্লার উপর থেকে নিচে যাওয়ার জন্য দেয়াল ঘেসে একটি সরু সিড়ি ও গলি আছে।
কেল্লায় আবুলহোসেন নামে একজন সেনাপতি ছিলেন জিনি নৌবাহিনির ও প্রধান ছিলেন। যার নেত্রিত্বে আশেপাশের নদীগুলোতে ২০০ নৌজান প্রস্তুত থাকত।
এই দূর্গটি থেকে আবদুল্লাপুরের মঙ্গত রায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল বলে জানাযায়। সেই যুদ্ধে মীর জুমলার সেনাপতি সদলি খান ও মগ রাজা মঙ্গত রায় মারা যান। ধারনা করাহয় মঙ্গত রায় শাহ সুজার সেনাপতি ছিলেন।
১৯০৯ সালে কেল্লাটিকে পুরাকৃত্তি ঘোষনা করা হয়। প্রত্নতত্ববিভাগ কতৃক সস্কার ও খননকালে এখানে অস্ত্রাগার, মেঝে, পানি নিস্কাসন এর নালা পাওয়া যায়। তাছাড়া এটির মেঝেতে পাওয়া যায় বিশেষ নির্মান কৌশল যা ছিল পোড়া মাটির কোলসি উল্টো করে দিয়ে তার উপর বর্গাকার টালি ইট বসিয়ে নির্মিত। এটি বের হওয়ার পর দূর্গটি বেশ আলোচনায় আসে। কারন অনেকেই ধারনা করেছিল এই কলসিগুলোতে ধন দৌলত এ ভরা। আসলে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল আদ্রতা রক্ষার জন্য।
মূল কেল্লার উপর টালির চালার একটি পাকা ভবন রয়েছে যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ভবনটি ১৮৪৫-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহাকুমা প্রশাসনের বাসভবন ছিল। পরে ব্রিটিশরা এটিকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
ইদ্রাকপুর কেল্লা কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট ও দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট, ও নয়ন পরিবহন এর বাস মুক্তারপুর যায়। মুক্তারপুর নেমে লোকাল অটো রিক্সায় ১০ টাকা (জন প্রতি) বা রিক্সা যোগে ২০-২৫ টাকায় ইদ্রাকপুরের কেল্লায় যাওয়া যায়।
টঙ্গি, আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, কুড়িল, রামপুরা থেকে আসমানি বাসে মদনপুর এসে রাস্তা পার হয়ে সিএনজিতে ইদ্রাকপুর কেল্লায় যেতে পারেন।
অথবা গুলিস্তান থেকে বাসে নারায়ণগঞ্জ এসে সিএনজিতে ইদ্রাকপুর কেল্লায় যেতে পারেন।
কোথায় খাবেন?
ইদ্রাকপুর কেল্লার আশেপাশে বেশকিছু খাবার হোটেল ও রেস্তোরা আছে পছন্দমত যেকোনটিতে খেতে পারেন।
ইন্দ্রাকপুর কেল্লাটি মুন্সিগঞ্জ তথা দেশের মধ্যে একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান। দেশি বিদেশি অনেক পর্যটক এটি দেখতে আসেন। এটি ছাড়াও মুন্সিগঞ্জে আরো বেশকিছু দর্শনিয় স্থান রয়েছে। তার মধ্যে বাবা আদম মসজিদ ও ডিসি পার্ক অন্যতম সাথে নদীতো আছেই দেখার মত। সময় করে একদিন আপনিও চলে আসুন মুন্সিগঞ্জ ভ্রমনে।