নাদির অন দ্যা গো’ কিছুটা আন্ডারেটেড। পুরো নাম “নাদির নিবরাস” ভ্রমণপিপাসুরা তাঁকে ‘নাদির অন দ্যা গো’ নামেই চেনে বেশি। শুরুটা করেছিলেন শখের বশে। এখন পুরোদস্তুর পেশাদার ট্রাভেল ব্লগার। ফেইসবুক ইউটিউবে ছটিয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর ভিডিওগুলোর লাখ লাখ ভিউ।
নাদিরের জন্ম দিনাজপুরে। তাঁর দন্তচিকিৎসক বাবা এ কে এম ফজলুল করিমের সরকারি চাকরি। চাকরির সুবাদে উত্তরের জেলায় জেলায় কেটেছে নাদিরের ছোটবেলা।
২০০০ সালের পর পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন ঢাকা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ও এবং এ-লেভেল
২০১০ সালে স্নাতক করতে যান যুক্তরাষ্ট্র।
পড়াশোনার অবসরে খুঁজতেন বেড়ানোর অবকাশ। ভ্রমণের লোভে নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতেন। ভ্রমণের এই নেশাটা পরিবার থেকে পেয়েছেন নাদির, ‘ছোটবেলা থেকেই প্রায় প্রতিবছর একবার দেশের বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতেন মা-বাবা। আর দেশের মধ্যে তো দুই মাস পরপরই কোথাও না কোথাও যেতাম আমরা, বলেন নাদির।
যন্ত্রকৌশলে স্নাতক করেছেন নাদির। এরপর বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি শুরু করেন। পিএইচডির মধ্যেই একটা মাস্টার্স করেন ডেটা সায়েন্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।
এই সময় ডেটা সায়েন্স নিয়ে যেমন নানা রকম জার্নাল পড়তেন, লিখতেনও ডেটা সায়েন্স ম্যাগাজিনে। ছয়-সাত মাস আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পিএইচডিটা আর করবেন না। এখন শুধু ভ্রমণেই মনোযোগ দেবেন। সে থেকে শুরু তার যাত্রা।
ভ্রমণের নেশা থেকেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে চলেছেন বাংলাদেশি এই তরুণ। অথচ তিনি যে পুরোদস্তুর ট্রাভেল ব্লগার হবেন, সেটা কখনো ভাবেননি।
২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘নাদির অন দ্যা গো’ নামে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন নাদির। সেটা ছিল নিতান্তই নিজের জন্য। পরিবার ও বন্ধুদের নতুন জায়গা দেখানোও ছিল সেসব ভিডিও আপলোডের আরেকটি উদ্দেশ্য।
নাদির বলেন, ‘দুই বছরে ২৫টা ভিডিও আপলোড করেছিলাম। তখন আমার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ছিল মাত্র ১০০ জন। তা–ও পরিচিতজনেরা। পরের দুই বছরে সেই সংখ্যা পৌঁছায় ২০০ জনে।’
২০২০ সালে করোনার ঘরবন্দী দিনগুলোতে বাসায় বসে বসে ভ্রমণের ভিডিওগুলো দেখতেন নাদির। একসময় নিজের পুরোনো একটি ইংরেজি ভ্লগ দেখে বাংলায় একটি ভ্লগ বানালেন। আপলোড করতেই হু হু করে বাড়তে থাকল ভিউ। রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেল নাদিরের প্রথম বাংলা কনটেন্ট ‘বাংলাদেশ পাসপোর্টে ৪৮ দেশে ভিসা-ফ্রি ভ্রমণ’।
ইউটিউবে ২০ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে এই ভিডিও। ফেসবুকে নাদিরের পেজে দেখা হয়েছে আরও বেশিবার। এরপরই মূলত ভ্রমণ ভিডিও বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন নাদির।
বেরিয়ে পড়েন বিশ্বের নানা প্রান্তে। কখনো আমাজনের গহিন বনে, তো কখনো হাওয়াইয়ের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায়। আজ একগাদা জ্যান্ত সাপ হাতে তো কাল হাঙরের সঙ্গে। এসব ভিডিও তিনি আপলোড করেন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে। বাংলা ও ইংরেজিতে ভিডিও প্রকাশের জন্য নাদিরের আছে একাধিক চ্যানেল।
২০২১ সালে নাদির ব্লেন্ডার চয়েস-এ ভ্রমণ ভ্লগ বিভাগে সেরা বিষয়বস্তু নির্মাতার পুরস্কার জিতেছে, ডেইলি স্টার ওটিটি এবং ডিজিটাল কন্টেন্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২১ এছাড়াও বেশ কিছু পুরস্কার জিতেছে সে।
এত অর্জন, খ্যাতি, এতসব এর পরেও ছেলেটা অতোটা আলোচনায় আসে না, কেমন জানি আড়ালে থেকে যায়। অনান্য ইউটিউবারের মতো ন্যাকামি করে না, মানুষের আবেগ নিয়ে খেলে না বলেই বোধহয় অতোটা আলোচনায় আসে না। তবে নাদির নিবরাস নিজের কাজটায় মন দিয়ে করে। এটাই তাঁকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে।