প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কারণ ও করণীয়

শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হল মূত্র নিষ্কাশন। মানুষের শরীর থেকে প্রস্রাব-পায়খানার মাধ্যমে যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষ দৈনিক ৫ থেকে ৬ বার প্রস্রাব করে থাকেন। “প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া” এই বাক্যের সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত আছি। নানা কারণে অনেকেরই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার  সমস্যা থাকে। প্রচন্ড গরমের সময় প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এটি কোনো ধরনের রোগ-ব্যাধি নয়, তবে এই সমস্যাটা কষ্টকর। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা কিছু উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ

বিভিন্ন কারণে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে, একেক জনের একেক কারণে হতে পারে। সাধারণত শরিরে পর্যাপ্ত পরিমান পানির অভাবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করা উচিত, দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান না করলে দেহে নানাবিধ রোগ দেখা দেয়। যারা প্রর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করে না তাদের প্রস্রা্বের সময় জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। 

এছাড়া গরম কালে গরমের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি ঘাম হয়ে বের হয়ে আসে, যার কারণে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। আর পানির পরিমাণ কমার ফলে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করে থাকে।

বেশির ভাগ নারীই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সাথে পরিচিত। মধ্য বয়সী ও বয়স্ক নারীরা এই সমস্যায় বেশি পড়ে থাকেন। নারীদের ক্ষেতে এই ইনফেকশনটি অনেক কস্টদায়ক। কারণ নারীদের পায়ুপথের অনেকটা পাশেই মূত্রনালী, পায়ুপথের মাধ্যমে অনেক সময় মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে থাকে যার ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। 

তাছাড়াও নারীদের মাসিক বা পিরিয়ডের সময়ও প্রস্রারাবে জ্বালাপেড়া হতে পারে। মাসিক বা পিরিয়ড এর সময় তারা ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহার করে। এই ন্যাপকিন বা কাপড়ের ব্যাকটেরিয়া বা জীবণু মূত্রনালীতে প্রবেশ করে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সাথে প্রস্রাবের রং হলুদ বা লালচে হয়ে যায়। প্রস্রাবে দুর্গন্ধ এবং প্রস্রাবের সাথে রক্তপাতও হয়ে থাকে। 

পুরুষদেরও পস্রাবের জ্বালাপোড়া সমস্যা হয়ে থাকে। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে প্রস্রাবের গোটা প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে জ্বালা-যন্ত্রণা করে থাকে। অনেক সময় পুরুষের মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমে থাকে, যার ফলে জীবানু তৈরী হয়ে থাকে। ফলে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া করে থাকে।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার রোধে করণীয়

প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে যাবতীয় দূষিত পদার্থ বের হয়ে থাকে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করলে দূষিত পদার্থ বের হতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কোনো রোগ না হলেও এর সমাধান দ্রুত করা উচিত। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া রোধের কিছু উপায় রয়েছে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ পানির অভাব, তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া রোধের জন্য বেশি বেশি করে পানি পান করতে হবে এবং বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে।

দেহে পানির পরিমাণ বজায় রাখতে হবে, পানির পরিবর্তে লেবুর সরবতও খেতে পরেন। লেবুর রসে আছে ভিটামিন-সি যা যেকোন সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ করে। হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন এতে তারাতাড়ি প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমে আসবে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে শসার জুসও পান করতে পারেন, এই জুসেএর সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। শসা শরীর ঠান্ডা রাখে, শসা দিয়ে সালাতও খেতে পারেন। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে ডাবের পানিও অনেক কার্যকর, ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা রাখে। তাই ডাবের পানি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। 

তাছাড়াও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে দই খেতে পারেন, দই এ আছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া যা দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। মিষ্টি এবং টক দই উভয় এ রয়েছে এমন স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। পানিশূন্যতা কমাতে পানি জাতীয় ফল খাবেন। যেমন : নাশপাতি , আপেল , ডাব , আম , আনার , তরমুজ , আঙ্গুর ইত্যাদি। স্যালাইন খেলেও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া অনেকটা কমে আসে। স্যুপও খেতে পারেন জ্বালাপোড়া কমবে। এসব ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টবায়োটিক সঠিক মাত্রায় ও মেয়াদে সেবন করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ
ওজন কমানোর উপায় ও খাবার তালিকা
বিয়ের আগে যেসব বিষয় জানা উচিত।
বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে কি করবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *