অনলাইনে আয়ের সেরা ১০ উপায় | ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং আল্টিমেট গাইডলাইন পার্ট ২

আবারো আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি বিডি আর্কাইভস এর নিয়মিত আয়োজন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং স্মার্ট ক্যারিয়ার আল্টিমেট গাইডলাইন এর দ্বিতীয় পর্বে। নতুনদের অনেকেই জানেন না কতভাবে অনলাইন থেকে আয় করা যায়। আজকের লেখাটি মূলত অনলাইনে আয়ের অনেক গুলো মাধ্যম এর মধ্য তুলনামুলক জনপ্রিয় অনলাইনে আয়ের সেরা ১০ উপায় নিয়ে। যেন নতুনরা এসব মাধ্যমগুলো সম্পর্কে মোটামুটি ধারনা পান। চলুন শুরু করা যাক-

অনলাইনে আয়ের সেরা ১০ উপায়

১. গ্রাফিক্স ডিজাইন

গ্রাফিক্স ডিজাইনারের দায়িত্ব হলো পণ্য বা সেবার ওভারঅল লুক ও ভাবমূর্তি ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা। এটি এমন একটি কাজ যার চাহিদা দিন দিন বারছেই। আপনার যদি আকাআকির হাত ভাল হয় আর আকাআকি ভালবাসেন তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইনকেই নিতেপারেন পেশা হিসেবে। নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করতে পারলে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজের শেষ নেই। গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজের ক্ষেত্র হিসেবে জার্নাল, কর্পোরেট রিপোর্টস, প্রমোশনাল ডিসপ্লে, মার্কেটিং ব্রোশিউর, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন ছারাও আরো অনেক বিষয় আছে। প্রতিনিয়ত গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজের পরিমাণ লোকাল মার্কেট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেস সব যায়গাতেই বেরে চলেছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে বেসিক জানতে পারেন অনলাইন থেকেই, তারপর ভাল কোন ইনিস্টিটিউট বা এক্সপার্ট ডিজাইনারের কাছথেকে শিখাটাই ভাল। শিখার পাশাপাশি প্রচুর প্রেক্টিস করতে হবে নিজেকে স্কিল্ড করার জন্য। ধারণা নিতে হবে ইন্টারন্যাশনাল বায়ারদের কেমন ডিজাইন পছন্দ সে বিষয়ে। তার জন্য ডিজাইন রিলেটেড ব্লগ পরতে হবে বেশি বেশি আর ডিজাইন দেখতে হবে। মনেরাখবেন অন্যদের ডিজাইন কপি না করে অন্যদের চেয়ে ভাল করার চেষ্টা করলে আপনার চাহিদা বারবে। আপনার করা মানসম্মত কাজের সেম্পল পোর্টফোলিওতে যুক্ত করলে কাজের অভাব হবেনা। 

ডিজাইনারদের জন্য কয়েকটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস এর লিংক দেয়া হল-

Graphicriver

99designs

CrowdSpring

DesignCrowd

Brand Crowd

Upwork

Fiverr

২. ফটো ইডিটিং 

এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে দিন দিন ফটোর চাহিদা কেমন বারছে। ফটো ইডিটিং করেও হাজার ডলার আয়ের সুজোগ রয়েছে। মানুষের ফটো ছারাও ইকমার্স সাইট এর প্রাডাক্ট ও আরো অনেক ক্ষেত্রেই বারছে ফটো ইডিটিং এর চাহিদা। এক্ষেত্রেও আপনাকে হতে হবে আর্ন্তজাতিক মানের ফটো ইডিটর। থাকতে হবে সুক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আর সেজন্য করতে হবে প্র্যাকটিস আর প্র্যাকটিস, যার কোন বিকল্প নাই। এটিও ভাল কোন ইনিস্টিটিউট বা এক্সপার্ট ডিজাইনারের কাছথেকে শিখাই শ্রেয়।

Upwork

Indeed

PeoplePerHour

Fiverr

Freelancer

Guru

৩. ওয়েব ডিজাইন

 ওয়েব ডিজাইন হচ্ছে আমরা অনলাইনে যাকিছু দেখি সগুলো কোন না কোন ওয়েব সাইট এর। আর এইযে একেকটা ওয়েব সাইট একেক রকম আমরা দেখি সেটার জন্য কাজ করে ওয়েব ডিজাইনার রা। একটি ওয়েবসাইট এর দৃশ্যমান অংশ তৈরি করাই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইনার এর কাজ। কোন ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে, ব্যাকগ্রাউন্ড এর কালার কি হবে, ব্যাকগ্রাউন্ড এ ছবি থাকবে কিনা, যদি থাকে তাহলে কি ছবি থাকবে। বিভিন্ন সাইট এ দেখবেন একেক জায়গায় একেক সাইজ এর লেখা থাকে কোথায় কোন সাইজ এর লেখা থাকবে, কেমন স্টাইল এর হবে, কি রঙের হবে ইত্যাদি নির্ধারণ করাই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইনার এর কাজ। আর এই কাজের চাহিদা দিন দিন শুধু বারছেই কারণ এখন শুধু অনলাইন এ যারা কাজ বা ব্যাবসা করে তারাই নয় ছোট বর সব কোম্পানি ই চাচ্ছে তাদের নিজস্ব একটা অনলাইন আইডিন্টিটি বা প্রাচার থাকুক আর সেটার জন্য সাবাই চায় তার একটা সাইট করতে। আর সাইট করতে হলে অবশ্যই তার জন্য ডিজাইন করতে হয়।

৪. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

 ওয়েব ডভেলপমেন্ট মানে হচ্ছে ওয়েব এপ ডেভেলপমেন্ট। অর্থাৎ কোন ওয়েব সাইট কিভাবে পরিচালিত হবে তা ঠিক করা। একজন ওয়েব ডেভেলপারের কাজ হচ্ছে  ডাটা প্রসেসিং, ডাটাবেস নিয়ন্ত্রন, সিকিউরিটি নির্মান, ইউজার ও এডমিনের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করা। যেমন আমরা ফেসবুকে লগইন করার পর যে অংশটুকু দেখতে পাই সেটি হল ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার বা ওয়েব ডিজাইনারের কাজ, সেখানে একটি ছবি আপলোড করলে ফ্রন্টএন্ড অ্যাপ্লিকেশন সেগুলোকে প্রসেসিং করে ব্যাকএন্ড এর কাছে পাঠিয়ে দেয়, সার্ভারের অ্যাপ্লিকেশন সেগুলোকে ডাটাবেজ এ জমা করে। তারমানে আপনার সকল ইনফরমেশন বা তথ্য সার্ভারের ডাটাবেজে সংরক্ষিত হচ্ছে। আর যখনি আপনি লগইন করছেন, সেই সংরক্ষিত তথ্যগুলোই প্রদর্শিত হয়। আর এই পুরো কাজটিই নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যাকএন্ড অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। যারা এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো তৈরী করে দেন তাদেরকেই বলা হয় ওয়েব ডেভেলপার।

এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো তৈরী করতে পিএইচপি, রুবি, পাইথন এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। প্রোগ্রামিংয়ের কাজটিকে আরো সোজা করতে “রুবি অন রেইল” বা “লারাভেল” এর মত ফ্রেমওয়ার্ক গুলো ব্যবহৃত হয়। এই কাজের চাহিদা ও আয় অন্য কাজের চেয়ে বেশীই বলা যায়।

৫. সার্চ ইনজিন অপটিমাইজেশনঃ

সার্চ ইনজিন অপটিমাইজেশন কি জানতে হলে আগে জানা দরকার সার্চ ইনজিন কি? সার্চ ইনজিন হল অনলাইন বা ওয়েবে আমরা যখন কিছু লিখে সার্চ করি তা কোথায় করি? আমরা সার্চ করি গুগল, বিং বা ইয়াহু, অপেরা, ইউসি ব্রাউজার ইত্যাদিতে এগুলাকে সার্চ ইনজিন বলে। এগুলা  ছারাও আরো অনেক সার্চ ইনজিন রয়েছে। সার্চ ইনজিন এ আমরা যখন কোন বিষয় সার্চ করি একি বিষয়ের উপর সার্চ ইনজিনের কাছে অসংখ্য সাইট বা পেজ এর ডাটা থাকে, কিন্তু সব গুলোতে কি আমরা গিয়ে দেখি? না আমরা সার্চ ইনজিন রেজাল্ট এর প্রথম পেজ থেকেই আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে থাকি। একি বিষয়ে হাজার হাজার সাইট থাকার পরও যাদেরকে সার্চ ইনজিন প্রথম পেজে দেখাচ্ছে তারা কিন্তু এমনি এমনি প্রথম পেজে আসেনা, তারা যেসব পক্রিয়া সাধনের মাধ্যমে এসেছে তাকে বলা হয় সার্চ ইনজিন অপটিমাইজেশন। সুতরাং ওয়েবে শুধু সাইট থাকলেই ভিজিটির আসবেনা বা ব্যাবসা হবেনা সাইট এ ভিজিটর আসতে হলে সার্চ ইনজিন এর প্রথম পেজে যেতে হবে আর তার জন্য সাইটকে সার্চ ইনজিন অপটিমাইজেশন করা জরুরি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বর্তমানে সার্চ ইনজিন অপটিমাইজার বা এসইও প্রফেশনাল এর চাহিদা কেমন।

৬. এফিলিয়েট মার্কেটিং

এক কথায় বলা যায় মার্কেটিং বা প্রচারের মাধ্যমে অন্য মানুষ বা কম্পানির কোন পন্য বিক্রয় করে দিয়ে, সেই বিক্রিত মূল্য থেকে একটা কমিশন নেওয়াই এফিলিয়েট মার্কেটিং। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস আছে যারা ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল প্রডাক্ট অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের প্রমোশনের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগ দিয়ে থাকে।  অন্যতম মার্কেট প্লেসগুলো হচ্ছে অ্যামাজন, ক্লিক ব্যাংক, কমিশন জাংশন, সিপিএ এম্পায়ার, শেয়ার এ সেল ইত্যাদি। একেক মার্কেট প্লেসর মার্কেটিং সিস্টেম একেক রকম। শিখা শুরু করার আগে অবশ্যই কোনটা কিভাবে করতে হয় তা জেনে নেয়া জরুরি।

৭. ব্লগিং

 ব্লগিং মানে লেখা-লিখি। বিশেষ করে এ কাজটি তাদের জন্য সহজ যারা লিখতে ও পরতে ভালবাসেন। পরার কথা বললাম এজন্য যে কারণ না পরলে আপনি জানবেন কিভাবে আর কোন বিষয়ে না জানলে লিখবেন ই বা কিভাবে। অনেক সময় দেখবেন আমরা যখন কোন সাইট বা ব্লগ ভিজিট করি সেখানে বিভিন্ন ধরনের এড আমরা দখতে পাই। বিভিন্ন এড মিডিয়ার মাধ্যমে সাইট বা ব্লগ এ এড দেয়া যায় যেমন google adsense, PropellarAds, http://Media.net, Infolinks, Bidvertiser ইত্যাদি। অথবা আপনার সাইট বা ব্লগ এ যদি হিউজ পরিমান ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি যেকোন কোম্পানিকে এড দেয়ার জন্য সরা সরি অফার করতে পারেন।  নিজে ব্লগ সাইট করে কিংবা অন্য কারো ব্লগে আপনি ব্লগিং করে আয় করার সুযোগ রয়েছে।

৮. অনলাইন কোর্স

আপনার যদি প্রোয়োজনিয় কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকে তবে অনলাইন কোর্স সেলের এর মাধ্যমে ও আয় করা সম্ভব। পেমেন্ট গ্রহন এর সুবিধার্থে অনেকেই বিভিন্ন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে থাকেন। যেমন Teachable.com এর মত সাইট এর মাধ্যমে অনলাইন কোর্স বিক্রি করে থাকেন।

৯. ভিডিও ইডিটিং

আপনি যদি ভাল ভাবে ভিডিও ইডিটিং জানেন তাহলে বিভিন্ন ভাবে আয়ের সুযোগ রয়েছে তার মধ্যে ইউটিউবিং অন্যতম। ইউটিউব এ আপনার নিজের চেনেল করে নিয়মিত ভিডিও অপলোডের মাধ্যমে গুগোল এডসেন্স দিয়ে আয় করতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন মার্কেট প্লেসেও ভিডিও ইডিটিং এর কাজ পাওয়া যায়।

১০. সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং

সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং বর্তামানে খুবি জনপ্রিয় একটি প্রফেশন। বর্তমানে আমরা সবাই ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি সোশাল মিডিয়া ফ্লাটফ্রম ব্যবহার করে থাকি। আর এই সোশাল মিডিয়া ইউজারদের কাছে কোন কোম্পানির পন্য বা সেবা বিক্রি করার জন্য প্রয়োজন হয় সোশাল মিডিয়া মার্কেটার এর।

উপরে উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও অরো অনেক উপায়ে অনলাইনে আয় করা যায়। দরকার শুধু দক্ষতা। দক্ষতা অর্জন করতে পারলে কাজের অভাব হবে না। তাই কাজ পেতে হলে আগে দক্ষতা অর্জন করা জরুরি।

পরবর্তি পার্ট থেকে আমরা প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে আলাদা আলাদা পোস্ট এ বিস্তারিত আলোচনা করব।

আপনি যদি মনে করেন আপনার মত অনেকের ই এই লেখাগুলো পরে উপকৃত হবে তাহলে শেয়ার করে আপনিও কারো অনলাইন ক্যারিয়ার গড়ার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেন।

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং স্মার্ট ক্যারিয়ার আল্টিমেট গাইডলাইন পার্ট ১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *