৫৪০ বছরেরও বেশি পুরনো এই বাবা আদম মসজিদটি মুন্সিগঞ্জ এর সদর উপজেলার দরগাবাড়ি গ্রামে অবস্থিত। মালিক কাফুর কর্তৃক ১৪৮৩ সালে এই জামে মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদের সাথেই রয়েছে বাবা আদম শহীদের মাজার। ১৯৪৮ সাল থেকে মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
স্থানীয় হিন্দু অত্যাচারী রাজার সঙ্গে যুদ্ধে বাবা আদম শহীদ হন। বিক্রমপুরের শাসক মহান মালিক কাফুরশাহ বাবা আদমের নামে চমৎকার দৃস্টিনন্দন এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
৬টি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটির আয়তন দৈর্ঘ্যে ৪৩ ফুট এবং প্রস্থে ৩৬ ফুট। মসজিদটি নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছে চুন শুরুকি আর পোরামাটির ৫ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি,
৭ ইঞ্চি ও ১০ ইঞ্চি আকারের ইট। মসজিদটির দেয়াল সাড়ে ছয় ফিট পুরু। ছাদের ভার বহনের জন্য ভিতরে ২ টি কালো পাথরের পিলার রয়েছে।
মসজিদে প্রবেশের জন্য সামনের দিকে রয়েছে খিলানাকৃতির ৩ টি দরজা যার মধ্যে মাঝখানেরটা এখন ব্যবহার করা হয়। মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দিকের দেয়ালে তিনটি মেহরাব আর পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে আরবি লিপিতে উৎকীর্ণ একটি শিলাফলক। মসজিদটিতে কোন জানালা নেই।
বর্তমানে যারা মসজিদটিতে যারা নামাজ আদায় করেন তাদের কাছথেকে জানা যায় মসজিদটিতে কোন জানালা না থাকলেও গ্রীস্মকালে গরম লাগেনা বরং শান্তি অনুভব করেন। আবার শীতকালেও নাকি ঠান্ডা লাগেনা বরং উষ্ণতা অনুভব হয়।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে আসেন। প্রত্নতত্ব অধিদফতরের নিশেধাঙ্গা থাকায় মসজিদের দক্ষিন পশ্চিম দেয়ালে ফাটল ও কিছু যায়গায় ইট খুলে গেলেও স্থানীয়রা এর সস্কার করতে পারছেন না। প্রাচীন ঐতিহাসিক এই মসজিদটি টিকিয়ে রাখার জন্য সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
স্থানীয়দের মতে ১০৯৯ সালে মক্কার তায়েফে জন্ম নেয়া বাবা আদম ইসলাম প্রচারে ১১৪২ সালে বাংলায় আসেন। পরে হিন্দু রাজা কতৃক শহিদ হন বাবা আদম।
বাবা আদম মসজিদে কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট ও দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট, ও নয়ন পরিবহন এর বাস মুক্তারপুর যায়। মুক্তারপুর নেমে সিএনজি বা অটোরিক্সায় দরগাবাড়ি বাবা আদমের মসজিদে যেতে পারবেন।
অথবা গুলিস্তান থেকে বাসে নারায়ণগঞ্জ এসে সিএনজিতে বাবা আদমের মসজিদে যেতে পারবেন।
আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, কুড়িল, রামপুরা থেকে আসমানি বাসে মদনপুর এসে রাস্তা পার হয়ে সিএনজিতে দরগাবাড়ি বাবা আদমের মসজিদে যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
মুন্সিগঞ্জ সদরে ভালমানের অনেক হোটেল রেস্তরা আছে পছন্দমত যেকোনটি থেকে খাবার পর্ব সেরে নিতে পারেন। বিশেষ করে মুন্সিগঞ্জের খুদের বৌউয়া বা খুদের খিচুরড়ি, ভাগ্যকুলের মিস্টি, চিত্তর দই বহুল পরিচিত এসব খাবারের স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন।
বাবা আদম মসজিদ ছাড়াও মুন্সিগঞ্জে আরো বেশকিছু দর্শনিয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে ইন্দ্রাকপুর কেল্লা অন্যতম। হাতে সময় থাকলে অন্যান্য স্থানগুলোও দেখে আসতে পারেন।