বাগান শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম বেশী পরিচিত। আমরা সবাই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে বাড়ির আশে পাশে বা অন্য কোন যায়গায় অন্তত একটি হলেও গাছ লাগিয়েছি। আর ছোটবেলায় তো প্রায় সবাই ইংরেজি অনুচ্ছেদে লিখে এসেছি, ” বাগান করা আমার প্রিয় সখ”। তখন হয়তো কেউ সেটা বুঝে লিখেছি অথবা না বুঝে। কিন্তু বাগান করা যে সবার পছন্দের একটা কাজ হতে পারে, সেখানে কারো দ্বিমত থাকার প্রশ্নই উঠে না। আমরা যারা গ্রামে থাকি তাদের বাড়ির আশে পাশে প্রচুর জায়গা থাকায় তারা সেখানে বাগান করতে পারে। কিন্তু যারা শহরে থাকি, তারা বাগান করার মতো খালি জায়গা পাই না বললেই চলে। তারা কিন্তু চাইলেই খুব সহজে বাড়ির ছাদে খুব সুন্দর একটি বাগান সাজিয়ে নিতে পারে। বাগান যে কতটুকু উপকারি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ আমি আপনাদের সাথে ছাদে বাগান করার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
১. অক্সিজেন বৃদ্ধিঃ
শহরের ইট কনক্রিটের পরিবেশে দূষনমুক্ত অক্সিজেন খুজে পাওয়া দিন দিন খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কলকারখানার ধোঁয়া এবং যানবাহনের ধোঁয়া আমাদের পরিবেশকে যেমন দূষিত করছে ঠিক তেমনি পরিবেশে কার্বণ ডাই অক্সাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি করছে। এমতাবস্থায়, ছাদ বাগান পরিবেশে অক্সিজেন বৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।
২. মানসিক প্রশান্তিঃ
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এবং সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে ছাদ বাগানে কিছু সময় কাটালে, পরিবারের ছোট বড় সকলের জন্য তা মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনবে। সারাদিনের ক্লান্তি এবং কর্মব্যস্ততা আমাদের মেজাজ কে করে দেয় খিটখিটে। ফলাফল পরিবারে ঝগড়া বিবাদ আর আশান্তি। ছাদ বাগান কিন্তু সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে। বিকেলে অথবা সন্ধায় ছাদ বাগানে কিছু সময় অতিবাহিত করলে আপনার মেজাজ হবে ফুরফুরে।
৩. বিশুদ্ধ শাকসবজি এবং ফলমূলঃ
বর্তমানে রাসায়নিক সার আর ফরমালিন মুক্ত ফলমূল এবং শাকসবজি খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যার ফলে বাজারে পাওয়া এসব ফরমালিন যুক্ত শাকসবজি এবং ফলমূল খেয়ে আমাদের স্বাস্থ দিন দিন খারাপ হচ্ছে এমনকি ভিতরে ভিতরে দানা বাধছে কঠিন থেকে কঠিনতর রোগ। ছাদ বাগান হতে পারে এর অন্যতম একটি সমাধান। মোটামুটি পরিসরের একটি ছাদ বাগান আপনার পরিবারের প্রায় ৮০% শাকসবজি এবং ফলমূলের চাহিদা পূরনে সক্ষম। ফলে এখান থেকে আপনি পাবেন ফ্রেশ ও রোগমুক্ত ফলমূল এবং শাকসবজি।
৪. সবুজ গাছ এবং চোখঃ
চোখের সাথে সবুজ গাছপালার যে একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তা আমাদের অনেকেরই অজানা। একটু লক্ষ করলেই দেখতে পাবেন, গ্রামে থাকা বয়স্ক মানুষও ঠিক ঠাক মতো চোখে দেখতে পারছে। কিন্তু শহরে থাকা ছোট ছোট বাচ্চাদের চোখেও থাকে অনেক সমস্যা। তাই চোখের ডাক্তাররা পরামর্শ দেন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় সবুজ গাছপালার দিকে তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু শহুরে পরিবেশে এই সুযোগ কোথায়? তাই ছাদ বাগানের সবুজ গাছপালা হতে পারে আপনার চোখ ভালো রাখার অন্যতম চিকিৎসা।
৫. তাপমাত্রা হ্রাসঃ
সারাদিনের সূর্যের তাপ ছাদ শোষন করে ফলে রাতের বেলা বাড়িতে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু ছাদে বাগান করা হলে গাছপালার কারনে সূর্যের তাপ সরাসরি ছাদে পড়বে না। ফলে রাতের বেলায় ও আপনার বাড়ির তাপমাত্রা বৃদ্ধির সুযোগ থাকছে না। এছাড়া ও সূর্যের আলো সরাসরি এসে ছাদ এবং বাড়ির স্থায়িত্বকাল হ্রাস করে। কিন্তু ছাদবাগানের ফলে সেই সুযোগ থাকছে না বিধায় বৃদ্ধি পাবে ছাদের স্থায়িত্বকাল।
৬. অর্থনৈতিক চাপ হ্রাসঃ
শাকসবজি এবং ফলমূল ক্রয় বাবদ একটি পরিবারের অনেক টাকা ব্যয় হয়। ছাদ বাগান থেকে প্রাপ্ত ফলমূল এবং শাকসবজি এই ব্যয় হ্রাস করতে সহায়তা করে। এবং বাজারে পাওয়া যায় না এমন অনেক ফলমূল খেতে ইচ্ছে করলে সেটা সহজেই ছাদবাগান পূরণ করতে পারে।
৭. প্রকৃতি এবং পাখিঃ
ছাদবাগান যেমন আপনাকে প্রকৃতির ছোয়া দিবে, নিয়ে যাবে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি। ঠিক তেমনি গাছপালায় আকৃষ্ট হয়ে সেখানে আসবে রংবেরঙের সুন্দর সুন্দর পাখি ও প্রজাপতি। সেগুলো দেখে এবং পাখির মিষ্টি সুর আপনার মনে নিয়ে আসবে এক সর্গীয় সুখ।
৮. শারিরীক সুস্থতাঃ
ছাদ বাগান যেমন মনে প্রশান্তি যোগায় ঠিক তেমনি ছাদ বাগানের পরিচর্যায় করা পরিশ্রম একটি অন্যতম শারীরিক ব্যায়াম। ফলে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে আপনি থাকবেন একদম ফিট।
৯. বিনোদনঃ
সবশেষে এই ছাদ বাগান আপনার পরিবারের জন্য বিনোদনের একটি বিরাট উপকরণ হয়ে উঠবে। আমরা বিভিন্ন পার্কে যাই প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে একটু বিনোদন পাওয়ার জন্য। ছাদ বাগান আপনার বিনোদনের সেই চাহিদা পুরোপুরি পূরনে সক্ষম।
এরকম অনেক অনেক উপকারিতায় ভরপুর ছাদ বাগান। ছাদবাগান করুন, নিজের এবং পরিবারের মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনুন।
আরও পরুনঃ ছাদ বাগান করার সহজ পদ্ধতি – সাজিয়ে নিন আপনার শখের বাগান
মাইগ্রেন কি? কেন হয় | চিকিৎসা ও প্রতিকার
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়