দারুল আদালত বা পর্তুগিজ ভবন – চট্রগ্রাম

চট্রগ্রামের হাজি মোহাম্মদ মহসিন কলেজের পাহাড়ের চুড়ায় কালের সাক্ষী হয়ে অবস্থান করছে এই পর্তুগিজ ভবন। শুনাযায় প্রায় ৪০০ বছর আগে পর্তুগিজ বনিকেরা এটি নির্মান করে।পরবর্তিতে বৃটিশরা এখানে বিচারকার্য পরিচালনা করে। তাই বলা যায় এটি চট্রগ্রামের প্রথম আদালত ভবন। ১৭৮০ খৃস্টাব্দে এখানে বিচার কার্য চালু হয়। এখানকার প্রথম মামলা হচ্ছে পাহাড়ের রাজত্ব কে করবে তা নিয়ে রানি কালিন্দীর সাথে মির্যা হোসেন এর। 

জেনে অবাক হবেন, এখানকার বিচারককে পাখা দিয়ে বাতাস দিতেন শাহ আমানত শাহ রাঃ। ১৫১২ থেকে ১৬০০ সালের মধ্যে পর্তুগিজেরা চট্রগ্রামে আসে। তারা চট্রগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে দূর্গ বা আস্তানা গড়েতোলে এটি তার মধ্যে অন্যতম। মতান্তরে ১৬৬৬ বা ১৭৬১ সালে এই ভবন নির্মান করা হয়। শুনা যায় শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এই ভবন থেকে কর্নফুলি নদী পর্যন্ত সুরঙ্গ পথ ছিল, যা পরে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। পর্তুগিজদের মনোরঞ্জনের জন্য এখানে ছিল রংমহল বা প্রমোদশালা।  

কেউ কেউ বলেন পর্তুগিজদের বাসস্থান ছিল নদীর অন্য পারে যার নাম ছিল পর্তুগিজ কেল্লা। আর এটি চট্রগ্রামের নবাব উমেদ খাঁ এর জন্য নির্মান করা হয়, যেহেতু উনি এখান থেকে নবাবি কার্য পরিচালনা করবেন। দুইতলা বিশিষ্ট এই ভবনটিতে রয়েছে ২০ টি কক্ষ। উপড়ে উঠার জন্য রয়েছে ২ টি পেচানো গোল সিড়ি। দুই তলাতেই রয়েছে বারান্দা তার পরেই রুম। ভবনটিতে রয়েছে দুটি উঁচু স্তম্ভের উপর দুটি গম্বুজ। 

এই ভবনের দেয়ালগুলো ১০ ইঞ্চি প্রসস্থ। ভবনটি নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, বালি, ও সুরকি। ছাদে আরো আছে মোটা লোহার পাত। 

প্রত্নতত্ব বিভাগ থেকে এটি দেখে গেলেও অর্থাভাবে তারা এটিতে কোন কান করতে পারছেনা।বর্তমানে এটি ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও তারা বলেন সংস্কার করলে এটি ব্যবহার উপযোগী হবে। 

ভবনটির নির্মান শৈলীর সঙ্গে বৃটিশ, মোগল, কিংবা আধুনিক কনটির ই মিল না পাওয়ায় ধারনা করা হয় এটি পর্তুগিজদের দ্বারা নির্মিত। 

১৮৩৫ সালে হাজি মোহাম্মদ মহসিন এর ওয়াকফকৃত সম্পত্তি থেকে গঠন করা হয় মহসিন ফান্ড। সেই ফান্ড এর টাকায় ১৮৭৪ সালে ২০ জুলাই চট্রগ্রামের প্রথম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় যার নাম ছিল মুর্ষিনিয়া মাদ্রাসা। ১৮৭৯ সালে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ভবন সহ এই পাহাড়টি কিনে নেয় মাদ্রাসা কতৃপক্ষ এবং এই ভবনে পাঠদান হত। ১৯২৭ সালে এখানে কলেজ চালু করা হলে পর্তুগিজ ভবনকে ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  
এখানে বিভিন্ন সময় দেশি বিদেশি গবেষকরা গবেষণা করতে আসেন।রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কতৃপক্ষ ও বিশিষ্টজনদের দাবী এটিকে যেন সস্কার করা হয়। তাহলে এটিকে মানুষ দেখতে যাবে ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। 

আরও পরুনঃ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত – চট্রগ্রাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *