চট্রগ্রাম সিটিতে বেরানোর জায়গা

পাহাড়, নদী, সমুদ্র সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সোন্দর্যের লীলাভূমি চট্রগ্রাম বিভাগ। চট্রগ্রামের মত এত দর্শনিয় স্থান দেশের আর কোন জেলায় নাই। প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে ভ্রমণের জন্য প্রথম পছন্দ চট্রগ্রাম। চট্রগ্রাম বিভাগ ও জেলায়তো অসংখ্য ভ্রমণের যায়গা আছেই, চট্রগ্রাম সিটিতেও রয়েছে অনেক বেড়ানোর জায়গা। আজকে আপনাদেরকে জানাব চট্রগ্রাম সিটিতে বেড়ানোর জায়গা সম্পর্কে। 

চট্রগ্রামের বাইরে থেকে এসব যায়াগায় যেতে হলে অবশ্যই আগে চট্রগ্রাম আসতে হবে। তারপর নিম্নলিখিত উপায়ে যাতে পারবেন। 

1. পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

চট্রগ্রাম সিটিতে বেড়ানোর জায়গা সম্পর্কে বলতে হলে প্রথমেই বলতে হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের নাম। চট্রগ্রাম শহরের একপাশ দিয়ে বয়েগেছে বঙ্গোপসাগর। চট্রগ্রামবাসি আসলেই ভাগ্যবান, কেননা তাদের মন খারাপ হোক বা ভাল, অথবা বন্ধু বা প্রিয়জনের সাথে চাইলেই সমুদ্রের পাড়ে চলেযেতে পারেন সময় কাটাতে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বীচের সাথে আছে ঝাউ বাগান,  সমুদ্রের পারে বাধ রক্ষার জন্য ফেলা কংক্রিটের ব্লক, বাধকে করা হয়েছে আরো নান্দনিক, রয়েছে বেশকিছু রেস্টুরেন্ট। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত যাওয়ার উপায় 

শহরের বিভিন্ন যায়গা থেকে বিভিন্ন উপায়ে পতেঙ্গা বীচে যাওয়া যায়। চট্রগ্রাম শহরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দার হাট বাস টার্মিনাল, বহদ্দার হাঁটা, মুরাদপুর, ২ নাম্বার গেইট, জি ই সির মোড়, লালখান বাজার, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ, এসব যায়গা থেকে ১০ নাম্বার বাস কিংবা হিউম্যানহলারে করে যেতে পারেন। তবে কেউ কেউ সিবিচ পর্যন্ত যায়না, সেক্ষেত্রে গাড়িতে উঠার আগে পতেঙ্গা যায় কিনা জিঙ্গেস করে নিলে ভাল। 

নিউমার্কেট, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ, ইপিজেড, বন্দরটিলা, সিমেন্ট ক্রসিং, কাটগড় এসব যায়গা থেকে ৬ নাম্বার বাসে যাওয়া যায়। 

ভাটিয়ারী, কর্ণেল হাট, একে খান, নয়া বাজার, বড়পোল, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, বন্দরটিলা, কাটগড় এসব জায়গা থেকে ১১ নাম্বার গাড়িতে আসতে পারেন। 

চট্রগ্রামের বাইরে থেকে আসতে চাইলে বাস, ট্রেন, কিংবা বিমানে আগে চট্রগ্রাম এসে তারপর যেতে হবে। 

আবার ব্যক্তিগত গাড়ি বা যেকোন গাড়ি রিজার্ব করেও সব যায়গা থেকে যেতে পারেন। 

2. ফয়েস লেক, কনকর্ড এমিউসমেন্ট ওয়ার্ল্ড

ফয়েসলেক চট্রগ্রাম শহরের খুলশি এলাকায় অবস্থিত। বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে সবুজ পানির কিত্রিম হ্রদ যার চতুর্পাশে সবুজে ঘেরা ছোট বড় পাহাড়। কনকর্ড গ্রুপ এটিকে যুক্ত করেছে অন্যমাত্রা, তারা এখানে নানা রকম রাইড ও ওয়াটার পার্ক যুক্ত করেছে। ফলে পকৃতি প্রেমী হোক বা হিপ হপ কিংবা ছোট কোন বাচ্চা কাউকেই হতাশ করবেনা কনকর্ড এমিউসমেন্ট পার্ক। এখানে রয়েছে খাবার জন্য অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আর থাকার জন্য হোটেল ও কটেজ। তবে সবকিছুর ই আগে মূল্য জিঙ্গেস করে নিলে ভাল, নয়তো বেশি চার্জ করতে পারে। 

ফয়েস লেক যাওয়ার উপায় 

চট্রগ্রামের কালুরঘাট, রাস্তার মাথা, বহদ্দার হাট, এসব জায়গা থেকে ২ নাম্বার ও ১০ নাম্বার গাড়িতে করে জি ই সির মোড় নেমে ওখান থেকে মাহিন্দ্রা অটতে বা ৪ নাম্বার নাম্বার বাসে ফয়েসলেক গেঁটে নামতে পারবেন। 

নতুন ব্রিজ, বহদ্দার হাট থেকে ৪ নাম্বার ছোট রাইডার বা রেইঞ্জার এ করে জি ই সির মোড়ে নেমে ওখান থেকে মাহিন্দ্রা অটতে বা ৪ নাম্বার বাসে ফয়েসলেক গেঁটে নামতে পারবেন। 

নিউ মার্কেট থেকে ৪ নাম্বার বাসে সরাসরি ও ৮ নাম্বার বাসে জি ই সি এসে ওখান থেকে মাহিন্দ্রা অটতে বা ৪ নাম্বার নাম্বার বাসে ফয়েসলেক আসা যায়। 

অক্সিজেন থেকে ৮ নাম্বার বাসে জি ই সির মোড় নেমে উপরের নিয়মে যেতে পারেন। 

ভাইয়ারি, কর্নেল হাট, এসব যায়গা থেকে ৪ নাম্বার বাসে ফয়েসলেক আসা যায়।

3. স্বাধীনতা কমপ্লেক্স – মিনি বাংলাদেশ

স্বাধীনতা কমপ্লেক্স তথা মিনি বাংলাদেশ এমন একটি জায়গা, যেন আর একটি বাংলাদেশ। দেশের প্রায় সব ঐতিহাসিক, নিদর্শন এবং গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা রয়েছে এর মধ্যে। এখানে গেলে আপনি বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দেখতে পাবেন। বন্দরনগরী চট্রগ্রামের বাহদ্দার হাট বাস টার্মিনালের বিপরিত পাশে স্বাধীনতা কমপ্লেক্স – মিনি বাংলাদেশ অবস্থিত। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছোট সংস্করণ ও বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে অনেক কিছু। এখানে রয়েছে লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, ষাট গম্বুজ মসজিদ, সংসদ ভবন, স্মৃতিসৌধ, সুপ্রিম কোর্ট, কার্জন হল সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় স্থাপনার আদলে নির্মিত নিদর্শন। পার্কটিতে নানা রকম রাইডের পাশাপাশি শৈল্পিকভাবে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে।

আর একটা বিশেষ জিনিস হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার যার উপরে রয়েছে সিটি ভিউ রিভল্বিং রেস্টুরেন্ট। এখান থেকে আপনি কর্ণফুলি নদী সহ পুরো চট্রগ্রাম শহর দেখতে পাবেন।

স্বাধীনতা কমপ্লেক্স এ কিভাবে যাবেন?

কালুরঘাট ও নিউমার্কেট থেকে ১ ও ২ নাম্বার গাড়িতে করে বহদ্দার হাট বাস টার্মিনাল নামলেই স্বাধীনতা কমপ্লেক্স। রাস্তার মাথা থেকে ১, ২, ও ১০ নাম্বার গারিতে মিনি বাংলাদেশ যাওয়া যায়। লালদীঘী, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, বহদ্দার হাট থেকে ১ নাম্বার রেঞ্জার বা রাইডার এ করে আসা যায়। পতেঙ্গা, কাটগর, আগ্রাবাদ, থেকে ১০ নাম্বার ও টাইগারপাস, জি ই সি, ২ নাম্বার গেট, মুরাদপুর, বহদ্দার হাট থেকে ১০ নাম্বার আর ২ নাম্বার গাড়িতে আসা যায়। নতুন ব্রিজ থেকে বহদ্দার হাট এসে রিকশা বা ১, ২, ১০ নাম্বার গারিতে আসতে পারেন। 

স্বাধীনতা কমপ্লেক্স এ খাবার জায়গা

স্বাধীনতা কমপ্লেক্স এ ওয়াচ টাওয়ার এর সিটি ভিউ রিভল্বিং রেস্টুরেন্ট এ খাবারের দাম ও মান দুইটাই ভাল এখানে যদি না খান পার্কের বাইরে আশেপাশে বেশকিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে বিভিন্ন দামের ও মানের খাবার পছন্দ মত খেতে পারবন। আরো ভাল হয় যদি রিক্সায় করে বহদ্দার হাট চলে যান ওখানে চট্রগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হোতেল জামান ছাড়াও বেশকিছু হোটেল রেস্টুরেন্ট আছে।

মিনি বাংলাদেশের কাছে থাকার জায়গা

মিনি বাংলাদেশের কাছে বহদ্দার হাটে বেশকয়েকটি হোটেল আছে যার মধ্যে হোটেল ডায়মন্ড পার্ক অন্যতম। তাছাড়া জি ই সির মোড়ে অনেকগুলো হোটেল রয়েছে যেখানে থাকতে পারেন।

আসলে চট্রগ্রাম শহর পুরোটাই ঘুরার জায়গা, উপরের উল্লেখিত জায়গা গুলো পুরোদিন সময় কাটানোর মত। এগুলো ছাড়াও সকাল বিকাল যেকোন সময় যাওয়ার মত অসংখ্য জায়গা আছে। যেমন – বাটালি পাহাড়, জিলাপি পাহাড়, ডিসি হিল, সি আর বি শিরিষ তলা, পাহাড়তলি রেল জাদুঘর, সাগরিকা বিচ, নেভাল একাডেমি, নেভাল টু ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ
লালবাগ কেল্লা / Lalbagh Fort
যমুনা ফিউচার পার্ক (Jamuna Future Park)
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত – চট্রগ্রাম
চট্রগ্রাম সিটিতে বেরানোর জায়গা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *