রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার ব্যাবস্থাপনা ও করণীয় – বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি

আমরা সকলেই মোটামুটি জানি খাদ্যাভ্যাস এর উপর ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ জড়িত। রমজানে যেহেতু সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয় আবার ইফতারের সময় ও পরে বেশি খাওয়া হয়। তাই রমজানে ডায়াবেটিক রোগীরা সঠিক নিয়মে খাবার না খেলে মারাত্বক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

অনেক ডায়াবেটিক রোগী আবার রোজা পালন করার সুযোগ থাকলেও কিভাবে কি করবেন তা না জানার কারণে রোজা পালন করেন না। টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীদের বিশেষ কোন জটিলতা না থাকলে বেশীর ভাগ রোগী রোজা পালন করতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীর রোজা পালনে করণীয়-

  • কখন কি পরিমান ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হবে বা টেবলেট খেতে হবে সেটা ভালভাবে আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগীর যদি প্রসাবে এসিটোন যাওয়ার প্রবণতা থাকে তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা পালন করা উচিৎ না।
  • রোজার সময়ের জন্য বিশেষ খাবারের নিয়ম জেনে নিন। সেহরির খাবার শেষ সময়ের অল্প কিছু আগে খাওয়া বাঞ্ছনীয়। সেহরির সময় নামমাত্র পরিমাণে খাবার খেয়ে রোয়া রাখা উচিৎ নয়।
  • রোজার দিনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই।
  • রোজার দিনে বিকেলে দৈহিক পরিশ্রমের কাজ না করে বিশ্রাম নেয়া ভাল।
  • রোয়া রেখে রক্ত পরীক্ষা করা যাবে।
  • রোয়া রেখে ইনসুলিন নেয়া যাবে।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা (ক্যালরি ১৮০০)

ডায়াবেটিস রোগীর ইফতার

বুট ভুনা ১ কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ অর্থাৎ ১২০ গ্রাম

পিঁয়াজু বড় মাপের ৩ টি

বেগুনী মাঝারী মাপের ২ টা 

মুড়ি ২ কাপ 

শশা, খিরা, আমড়া, কচি পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর সরবত চিনি ছাড়া ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছা মত খাওয়া যাবে। 

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর রাতের খাবার

আটার রুটি ছোট পাতলা ৩ টা অর্থাৎ ৯০ গ্রাম বা ভাত ১.৫ কাপ

মাছ বা মাংস ১ বা ২ টুকরা 

ডাল ১ কাপ মাঝারী ঘন

সবজি (ক)–  সব রকম শাক যেমন লাল শাক, পালং শক, পুঁই শাক, কলমি শাক, কচু শাক ইত্যাদি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, কাঁচা পেপে, কাঁচা টমেটো, শসা, করলা, ঝিংগা, চিচিংগা, পটল, চাল কুমড়া, লাউ, সাজনা, ধুন্দল, ইত্যাদি ইচ্ছেমত। 

সবজি (খ)– এছাড়া আলু ছোট ১ টা, মিষ্টি কুমড়া ৯০ গ্রাম, কচু ছোট ২ টুকরা, বিট ছোট ১ টুকরা, কাঁচা কলা ১ টার অর্ধেক, বরবটি লম্বা ৬ টা, সিম ৬০ গ্রাম বা ৬ টা, কলার মোচা ৭৫ গ্রাম, গাজর ৫০ গ্রাম বা মাঝারী ১ টা, কাঁকরোল ২৫ গ্রাম বা ছোট ১ টা, সিমের বিচি ১০ গ্রাম বা ২০ টা, কাঁঠালের বিচি ১৫ গ্রাম বা ৭/৮ টা, শাল্গম ৯০ গ্রাম বা ছোট ১ টা, ঢেঁড়স ৭৫ গ্রাম বা ৮ টা, বেগুন ১৩০ গ্রাম বা মাঝারী ১ টা, মটরশুঁটি ৩০ গ্রাম, কচুর মুখী ২০ গ্রাম ছোট ২ টা, পঞ্চমুখী ১ টা, পাকা টমেটো ১ টা, এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি।

ডায়াবেটিস রোগীর সেহরি

ভাত ৩০০ গ্রাম বা ২.৫ কাপ

মাছ বা মাংস ১ বা ২ টুকরা

ডাল ১ কাপ মাঝারী ঘন বা দুধ ১ কাপ

সবজি (ক)– রাতের খাবারের সবজি (ক) এর মত

সবজি (খ)– রাতের খাবারের সবজি (খ) এর মত

রমজানে ডায়াবেটিসের ঔষধ কিভাবে খাবেন

যেসব ডায়াবেটিস রোগী দিনে একবার ইনসুলিন বাড়ানোর ঔষুধ খান তারা ইফতারের শুরুতে তা খাবেন। তবে পরিমাণ সামান্য কম নিতে হতে পারে, পর্যবেক্ষন করে তা নির্ধারন করতে পারেন।

আর যারা দিনে একাধিকবার ইনসুলিন বাড়ানোর ঔষধ খান তারা দিনের প্রথমটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতেরটি মাত্রা কমিয়ে অর্ধেক পরিমাণ সেহেরির ৩০ মিনিট আগে খাবেন।

রমজানে ডায়াবেটিসের ইনসুলিন কিভাবে নিবেন

যেসব ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন নেন তাদের উচিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রমজানে কিভাবে ইনসুলিন নিবেন তা আগেই ঠিক করে নেয়া। যারা দিনে একাধিকবার ইনসুলিন নেন তাদের উচিত রমজানে দীর্ঘমেয়াদি বা দিনে একবার নিতে হয় এমন ইনসুলিন নেয়া। এগুলোতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা অনেকটা কম থাকে।

অন্যথায় যারা সকালে ও রাতে ইনসুলিন নিতেন তারা সকালেরটা ইফতারের আগে সমপরিমাণ এবং রাতের ডোজ সেহেরির আগে অর্ধেক পরিমাণ নিবেন।

আমাদের লেখাটি শুধুমাত্র রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার ব্যবস্থা, ঔষধ ও ইনসুলিন কিভাবে নিবে তা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য। সকল ডায়াবেটিস রোগীর উচিত রমজান শুরুর আগে অবশ্যই ডায়াবেটিস বিশেষঙ্গের সঙ্গে পরামর্শ করা বিশেষ করে ঔষধ ও ইনসুলিন কিভাবে নিবেন তা জানার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *