আমাদের প্রায় সবারই পছন্দ ফর্সা সুন্দর ত্বক। শরীরের অংশের মধ্যে চেহারা অন্তত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সবার আগে আমাদের চোখ পরে চেহারায়। তাই সবাই চায় ফর্সা মুখ এবং লাবণ্যময় ত্বক। বিশেষ করে মেয়েরা সবসময়ই তাদের ত্বকের প্রতি অনেক যত্নশীল হন। অনেক সময় ফর্সা ত্বকও মলিন হয়ে যায় সঠিক পরিচর্যার অভাবে। এই ফর্সা ত্বক ফর্সা রাখতে অনেক যত্নের প্রয়োজন হয়। রোদের কারণে ত্বক মলিন হয়ে যেতে পারে তাছাড়া ধুলোবালি তো আছেই। ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে অনেকে অনেক উপায় অবলম্বন করে থাকে। আজকে আমরা আলোচনা করব মুখ ফর্সা ও লাবণ্যময় করার উপায় নিয়ে।
মুখ ফর্সা ও লাবণ্যময় করার পাকৃতিক উপায়
বর্তমান সময়ে ফর্সা সুন্দর ও উজ্জ্বল মুখ যেন প্রতিযোগিতা হয়ে দারিয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই কালো ত্বক নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগেন। কালো ত্বকের জন্য অনেক সময় অনেক মেয়েদের অবহেলার শিকার হতে হয়। তাই মুখ ফর্সা ও লাবণ্যময় করতে নিম্নের দেয়া পাকৃতিক উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারেন।
মুখ ফর্সা করতে পানি
ত্বকের লাবন্যতা ধরে রাখতে প্রতিদিন প্রর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা উচিত। পানি ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে, ত্বককে সতেজ রাখতে প্রতিদিন ১০-১২ গ্লাস পানি পান করা শ্রেয়। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা উচিত। ঘরের বাহিরের ধুলোবালি উজ্জ্বল ত্বকও মলিন করে দেয়। তাই মুখে যে সমস্ত ময়লা লেগে থাকে বাহিরে থেকে ঘরে প্রবেশ করার পর তা ফেইস-ওয়াস ও পানির সাহায্যে পরিষ্কার করে নেয়া উত্তম।
মুখ ফর্সা করতে শসার ব্যবহার
শসাতে পুস্টিগুনের পাশাপাশি রয়েছে মুখ ফর্সা করার নানা উপাদান যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারি। ৩-৪ টেবিল চামচ শসার রসের সাথে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং আধা চা চামচ কাছা হলুদ এর পেস্ট বা হলুদ গুঁড়া ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।
অথবা,
শসা কুচি কুচি করে এর রস মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিবেন। নিয়মিত এর ব্যবহারের ফলে মুখের ত্বকের কোষগুলো সতেজ হয়ে ত্বক ফর্সা হবে।
তাছাড়া,
শসার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। শুকিয়ে গেলে ভালো ভাবে ধুয়ে নিবেন। এটিও মুখ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।
মুখ ফর্সা করতে চন্দনের ব্যবহার
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চন্দন অনেক উপকারী, মুখ ফর্সা করতে অনেকে চন্দন ব্যবহার করে থাকেন। চন্দনের সাথে হলুদ, দই বা দুধ এবং পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার পর ফেইসওয়াস দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে।
মুখ ফর্সা করতে আলু
আলু ত্বকের কালচে ভাব দূর করে, আলুর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের ত্বক ফর্সা করে। । আলুর সাথে মধু মিশিয়ে ফেইশপ্যাক তৈরি করতে পারেন। মধু ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। আলু ভালো ভাবে ধুয়ে পেস্ট করে ৩ টেবিল চামচ রস নিবেন। এই রসের সাথে ২ টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন। এই মিশ্রণটি মুখে এবং গলায় লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখার পর শুকিয়ে গেলে ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
মুখ ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে অ্যালোভেরা
মুখ ফর্সা ও লাবণ্যময় করতে অ্যালোভেরা অতন্ত্য উপকারী একটি উপাদান। অ্যালোভেরার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন ফেসপ্যাক। লেবুতে আছে ভিটামিন-সি এবং অ্যাসিডিক উপাদান যা ত্বককে উজ্জ্বল করে। ২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১/৪ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর এই প্যাকটি নিয়ে ৪-৫ মিনিট মুখে ম্যাসাজ করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।
মুখ ফর্সা করতে টমেটোর ব্যবহার
আপনার ত্বকে যদি এলার্জি না থাকে তাহলে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে টমেটো ব্যবহার করতে পারেন। একটি টমেটো পেস্ট করে তার সাথে ১ টেবিল চামচ বেসন ও ৩-৪ ফোঁটা মধু ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাকটি তৈরি করে নিন। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে নিবেন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৪ দিন ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
অথবা,
১ টি টমেটো , ৬ টি জাফরান এবং ১ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার এক সাথে পেস্ট করে নিবেন। এই পেস্টটি নিয়ে মুখে ম্যাসাজ করবেন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে নিবেন। মুখের পানি মুছে ময়শ্চরাইজার লাগিয়ে নিবেন। এই পেস্টটি মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
মুখ ফর্সা করতে মধুর উপকারিতা :
মুখ ফর্সা করতে মধুও চমৎকার কাজে দেয়, মধু তৈলাক্ত ও শুষ্ক উভয় ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপ্টিক, যা মুখের ব্রণও দূর করে। এছাড়াও মধুতে রয়েছে এনজাইম, যা মানুষের ত্বক এবং লোমকূপের গভীরের ময়লা পরিষ্কার করে থাকে। প্রতিদিন মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে মুছে নিবেন, তারপর ১ চা-চামচ মধু শুষ্ক মুখে ভালো ভাবে মাখিয়ে নিবেন। এভাবে ১০-১৫ মিনিট রাখার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এতে মুখ হয়ে উঠবে উজ্জ্বল এবং কোমল। মধু ব্লাকহেডস দূর করতেও সাহায্য করে।
অথবা,
উজ্জ্বল ত্বক পেতে ২ চা-চামচ মধুর সাথে ২ চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি মুখে ভালো ভাবে লাগিয়ে নিবেন। ২০-৩০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে নিন।
নয়তো,
মুখের কালো দাগ দূর করতে একটি পাত্রে ১ চা-চামচ মধু নিবেন। এবং এতে সামান্য পরিমাণ হলুদ দিন। হলুদ মুখের পিম্পল দূর করতে সাহায্য করে। তারপর এতে মাল্টার রস বা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগাবেন।
মুখ ফর্সা করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস
মটরশুঁটি , বাদাম ও নাশপাতি ত্বক উজ্জ্বল করে, এগুলো নিয়মিত খেলে ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল হবে। ত্বক ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পরিমানে সবজি খাওয়া উচিত। সালাদ হিসেবেও কাঁচা সবজি খেতে পারেন। গ্রিন-টি তে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড , ভিটামিন-বি , অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও নানাবিধ এনজাইম, এই উপাদান গুলো ত্বকের জন্য উপকারি। গ্রিন-টি ত্বকের টক্সিন বের করে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে। তাই মুখ ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে গ্রিন-টি পান করতে পারেন। গাজর ত্বককে সজীব ও উজ্জ্বল করে, গাজর সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
মুখ ফর্সা করতে ফেইসওয়াস ও সানক্রিম
মুখের ময়লা দূর করতে উন্নতমানের ফেইসওয়াস ব্যবহার করতে পারেন। বাহিরে যাওয়ার পূর্বে সানক্রিম ব্যবহার করলে ভাল, সানক্রিম সূর্যের তাপ থেকে মুখ এবং ত্বককে রক্ষা করে। ফেইসওয়াস মুখের ময়লা দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে। সকালে এবং রাতে ২ বার ফেইসওয়াস ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়াও বাহিরে থেকে এসে ফেইসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে নেয়া উচিত। তারপর রুমাল বা কটন টাওয়াল দিয়ে আলতো করে মুখের পানি মুছে নিবেন। তারপর মুখে ময়শ্চরাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
ব্রন কি? কেন হয়? ব্রন দূর করার উপায়।
ব্রণ দূর করার উপায় ও ব্রন এর দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
চুল পড়ার কারণ ও করণীয়