মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়

আমরা সকলেই চাই দাগ্মুক্ত উজ্জ্বল সুন্দর মুখের ত্বক। আর তার জন্য আমাদের ত্বকের যত্নে কোন অবহেলা করলে হবেনা। কিন্তু ব্রন মেছতা সহ আরো নানা কারণে যেমন প্রচণ্ড গরম, হরমোনের পরিবর্তন, বার্ধক্যর কারণে, ঘুমের সমস্যার কারণে, বিভিন্ন অসুস্থতা সহ অনেক কারণে ত্বকে অনেক সময় কালো দাগ দেখা দেয়। এগুলো হাইপারপিগমেন্টেশন নামে পরিচিত। মুখের কালো দাগ দূর করতে নিয়মিত ত্বক ক্লিনজিং, টোনিং, ময়াশ্চারাইজিং করা উচিত। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকছে কি না তা দেখে নেয়া ভাল।

এছাড়াও সার্বিকভাবে সুন্দর ত্বকের অধিকারী হতে চাইলে খাওয়া-দাওয়ার দিকে বিষেষ নজর দিতে হবে এবং সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আজকে আমরা আলোচনা করব যাদের ইতমধ্য মুখে দাগ হয়েগেছে তাদের মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায় নিয়ে।

মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

১। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা ও যত্ন নেয়া

আমরা যারা প্রতিদিন বাইরে যাই গরমে আমাদের ঘাম হয় তার সাথে ত্বকে প্রচুর ধুলা ময়লা লাগে। আর  এই ঘামের সাথে ধুলা জমে ত্বকের রঙ ও ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জলতা নষ্ট করে এবং তা লোমকূপে জমা হয়ে ত্বকে অক্সিজেন প্রবেশে বাধা দেয়। যার ফলে ত্বক স্বাভাবিক উজ্জলতা হারিয়ে ফেলে। এর জন্য আমাদের উচিত বাইরে থেকে এসে ভাল কোন ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেয়া। এছাড়া প্রতিদিন অন্তত দুবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত।

২। কমলার খোশা

কমলার খোশা পেস্ট করে ত্বকে লাগালে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল হয় এবং আস্তে আস্তে ত্বকের কালো দাগ দূর হয়। এটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর উঠিয়ে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ২/৩ দি পর পর ব্যবহার করতে পারেন। 

৩। শসা

শসাতে খাবার হিসেবে পুষ্টিগুনের পাশাপাশি এটি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এটি ত্বকের ট্যান দূর করার পাশাপাশি ত্বকের কালো দাগ ছোপের সমস্যাও দুর করে। ত্বকের কালো দাগ দূর করতে শসার রসে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর তুলোর সাহায্যে কপালসহ সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ২-৩ দিন পর পর নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ হওয়ার পাশাপাশি কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। 

৪। চালের পানি

অল্প কিছু চাল ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সেই পানি একটি কাচের পাত্রে ২-৩ দিনের জন্য রেখে দিন। তারপর নিয়মিত এটি ব্যবহার করুন। চালের পানি কালো দাগ, ত্বকের ট্যানিং এবং পিগমেন্টেশন হ্রাস করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাল ভেজানো পানিতে থাকা খনিজগুলো ত্বকের কোষের টাইরোসিনেজ ক্রিয়াকলাপকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে যা ত্বকের বিবর্ণতার জন্য দায়ী। ত্বকে চাল এর পানি ব্যবহারের ফলে ত্বকে মেলানিন উৎপাদন ভারসাম্য বজায় থাকে।

৫। চন্দনগুড়া, হলুদ ও দুধ

বয়সের ছাপ, বিসন্নতা, অনিদ্রা সহ নানা কারণে হওয়া মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করতে চন্দনের প্যাক খুব কার্যকর। চন্দন গুড়ার সাথে হলুদ আর দুধ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে কয়েকদিন পর পর লাগালে ত্বক উজ্জ্বল আর সতেজ করে। যেকোন কারণে হওয়া ত্বকের কালো দাগ দূর করে।

৬। লেবুর রস

লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসাবে কাজ করে। ত্বকে লেবুর রস প্রয়োগ করার মাধ্যমে ত্বকের যেকোন কালো দাগ দূর করা সম্ভব। কারণ লেবুর রস পিগমেন্টেশন হ্রাস করতে সহায়তা করে। তবে সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে লেবুর রস ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ এটি অনেক সময় ত্বকে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। ভাল ফলাফলের জন্য লেবুর রসের সাথে মধু এবং টমেটোর রস মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রন বা মাস্ক ত্বকে ১৫-২০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৭। মৌরি বা জিরা

মসলা হিসেবে মৌরি বা জিরার গুনাগুন কমবেশি সবাই জানলেও এর ঔষুধী গুন হয়তো অনেকের ই অজানা। নিয়মিত মৌরি খেলে রক্ত ​​বিশুদ্ধ হয়। মৌরিতে রয়েছে ত্বকের ডি-ট্যানিংয়ের জন্য উপকারী গুনাগুন। মৌরির ফেসপ্যাক লাগালে ত্বকের কালো ভাব দূর হয়। মৌরি ভালো করে গুঁড়ো বা পেস্ট করে সাথে দই ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হবে। এটি পুরো মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে এক দুই বার ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পরুনঃ ব্রণ দূর করার উপায় ও ব্রন এর দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

৮। অ্যালোভেরা জেল

আদিকাল থেকেই ঔষুধি বৃক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো নানা উপকারী যৌগ যা ত্বক ও চুলের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করার একটি সহজ প্রতিকার হল অ্যালোভেরা প্রয়োগ করা। 

অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে অ্যালোইন নামক একটি উপাদান থাকে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা ব্যবহারে চোখের চারপাশের কালো দাগ, ব্রণের দাগ, বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর হয় এবং লোমকূপও সংকুচিত হয়। ত্বক ভালভাবে পরিষ্কার করে অ্যালোভেরা জেল লাগাতে হবে। এটি মিনিমাম ৩০ মিনিট বা সারা রাত লাগিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে ফেলবেন।

৯। হলুদ

প্রাচীন কাল থেকে রান্নায় স্বাদ ও সুন্দর রঙয়ের জন্য হলুদ ব্যবহার এর পাশাপাশি ঔষুধী গুন থাকায় আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন চিকিৎসাতেও এর ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বক এর পরিচর্যাতেও কাঁচা-হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে।

প্রাচীনকাল থেকে হলুদ পিগমেন্টেশন কমাতে ব্যবহার হয়ে আসছে। ভাল ফলাফলের জন্য হলুদ গুঁড়া বা কাচা হলুদের পেস্ট এর সাথে দুধ ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপরে কালো দাগের উপর বা চাইলে সারা মুখেও এটি লাগাতে পারেন। অন্তত ২০ মিনিট এই মাস্কটি মুখে রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করুন।

১০। টমেটো

টমেটোতে খাদ্য পুষ্টিগুণ ছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং লাইকোপিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সহায়তা করে। টমেটোর রসে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান। যা কালো দাগ কমাতে সহায়তা করে। টমেটো টুকরো করে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে ঘষুন। ১০-১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য টমেটোর পাল্প, ময়দা এবং লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। টমেটো স্পা দিয়েই আপনি ত্বকের ট্যান বা সানবার্ন অনায়াসেই তুলে ফেলতে পারবেন। আবার একই সঙ্গে মুক্তি পাবেন ব্রন এবং ত্বকের অন্যান্য সকল কালো দাগ ছোপের হাত থেকেও।

উপরে উল্লেখিত ১০ টি প্রাকৃতিক উপায় ছাড়াও মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করার আরো নানা উপায় রয়েছে। পরিশেষে বলতে চাই ত্বক এর ক্ষতি হওয়ার পর ঠিক করার চেয়ে ত্বক নস্ট হওয়ার আগেই সঠিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিন যেন ত্বকের কোন ক্ষতি না হয়।

সোর্সঃ https://www.shajgoj.com/tips-for-scar-free-skin
https://www.ntvbd.com/lifestyle/news-1244069

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *