হাসনাহেনা ফুল অত্যন্ত চমৎকার গ্রানযুক্ত ফুল এর বৈজ্ঞানিক নাম “Cestrum Nocturnum“। এবং ইংরেজিতে এই ফুলকে অনেক নামে ডাকা হয়ে থাকে যেমন “Cestrum nocturnum, Night Blooming Jasmine, Queen of the night, Night Blooming cesturm” ইত্যাদি। এই ফুল এতো বেশী সুগন্ধি যুক্ত যে অনেক দূর থেকেও এর গন্ধ পাওয়া যায়।
হাসনাহেনা ফুলের বৈশিষ্ট্য
হাসনাহেনা ফুলের গাছ একটি গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ। এই গাছে থোকায় থোকইয়্য ফুল ফোটে। এই ফুল রাতে ফোটে এবং একটি গাছে অনেক গুলো করে ফুল ফুটে। এই ফুল আকারে ছোট হলেও খুব বেশী সুগন্ধি যুক্ত। এই ফুলের সুবাস সকলের মনে আনন্দের জোয়ার এনে দেয়। হাসনাহেনা গাছের শাখা প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ফুটে। এই ফুল গুলো প্রায় ৪-৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। বছরে কয়েকবার হাসনাহেনা ফুল ফুটে। এই গাছের পাতা লম্বা এবং মসৃণ হয়। কিছু কিছু প্রজাতির গাছে দিনের বেলায় ও ফুল ফোটে কিন্তু সেগুলোতে সুগন্ধি কম হয়।
হাসনাহেনা ফুলে সাধারণত পাঁচটি পাপড়ি হয়। যেগুলো সাদা বা ঘিয়ে রংয়ের হয়ে থাকে। ফুলগুলো হয় নলাকার। এর পাপড়ি সাধারণত ১.৫-২ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল গুলো গোল এবং সাদা হয়।
হাসনাহেনা ফুল নিয়েও হয়েছে অনবদ্য কিছু কাব্য। তন্মধ্যেঃ
প্রতি রাতেই দেখি আমি হাসনাহেনার সৃষ্টি,
রাত পোহাতেই ঝড়ে পড়ার কষ্টের বৃষ্টি
তোমরা শুধু কুঁড়ায়ে নাও দেখ না তার কষ্ট,
দেখেছি আমি কেমন করে ফুল ঝড়ে হয় নষ্ট,
কষ্ট গুলো বুকে নিয়ে পড়ে মাটির বুকে,
কুঁড়ায়ে আমি সুভাশ নিয়ে দেখি তারি কৃষ্টি,
তোমরা কভু দেখলে না হৃদয়ে অনাবৃষ্টি৷৷
হাসনাহেনা ফুলের গুরুত্ব ও ব্যবহার
টবে, বাড়ির উঠানে, ছাদে, বারান্দায় সৌন্ধর্য বর্ধনের কাজে হাসনাহেনা গাছ রোপন করা হয়। এর সুগন্ধি মানুষকে এতো বেশী আকৃষ্ট করে যে সুগন্ধি প্রদান কারী ফুল হিসেবে এই ফুলের গুরুত্ব অনেক বেশী। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এই গাছের পাতা, মূল, ফুল ব্যবহার করা হয়।
হাসনাহেনা ফুল গাছের ঔষুধী গুন
এই গাছের পাতার রস নারিকেলের দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে স্তন্যদাত্রী মায়েদের উপকার হয়। এই গাছের মূলের রস সেবনে জ্বর ভালো হয়। পাতার রস গরম করে সেবন করলে ক্রিমিতে উপকার হয়। পাতার রস সেবনে প্রসাব পরিষ্কার হয় এবং যন্ত্রণা দূর হয়। পাতার রস দুধের সাথে গরম করে খেলে রক্ত আমাশয়ে উপকার হয়।
হাসনাহেনা ফুল কোথায় কখন ফুটে
এর আদি নিবাস ওয়েষ্ট ইন্ডিজ এ হলেও বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, চীন ও ইউরোপ এর অনেক অঞ্চলে এই ফুলের চাষ হয়। প্রায় সারা বছর ই এই ফুল দেখা যায় শুধু মাত্র শীতকাল ছাড়া। কিন্তু বর্ষাকাল ও গ্রীষ্ম কালে এই ফুল খুব বেশী ফোটে।
টবে হাসনাহেনা ফুল চাষের পদ্ধতি
হাসনাহেনা ফুল চাষ করার জন্য নূন্যতম ২৫ সেমি উচ্চতার টব প্রয়োজন। বীজ থেকে চারা সংগ্রহ করে অথবা গুটি কলম করে এই ফুলের চাষ করা যায়।
খুব বেশী আদ্র নয় এমন মাটি নির্বাচন করতে হবে৷ নিয়মিত পানি দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে টবে। মাটি যেন কাদা কাদা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাটি স্যাঁতস্যাঁতে হলে পানি দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
যে কোন ধরনের মাটিতেই এই গাছ জন্মায় তবে দোঁআশ মাটি ই সবচেয়ে বেশী উত্তম। টবে চাষ করতে হলে মাটির সাথে হাঁড়ের গুড়ো, সুপার ফাসফেট, ছাই মিশ্রণ করে নিতে হবে। গোবর, খৈল, টিএসপি সার, পঁচা সার মিশালে মাটি ভালো থাকবে।
চাপান সার , তরল সার ও গোবর সার ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বর্ষা কাল থেকে হেমন্ত কাল পর্যন্ত তরল সার প্রয়োগ করতে হবে।
পানি দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুই সপ্তাহ পর পর মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। গাছ বড় হলে ডাল ছেটে দিতে হবে।
আরো পরুনঃ
টবে বেলি ফুল চাষ এর পদ্ধতি
টবে শিউলি ফুল চাষ
টবে কৃষ্ণচূড়া ফুল চাষ
টবে কামিনী ফুল এর চাষ
টবে জবা ফুলের চাষ