টবে জবা ফুলের চাষ

 জবা ফুলের ইংরেজি নাম “Chinese Hobiscus“. এটিকে চীনা গোলাপ নামেও অনেকে চিনে। এই গাছের পাতা গুলো চকচকে এবং গাড় সবুজ। আর এর ফুল গুলো উজ্জল লাল রংয়ের হয়ে থাকে। এই ফুলের সৌন্ধর্যে প্রভাবিত হয়ে অনেক কবি লিখে গেছেন হ্রদয় ছোয়া অসংখ্য কবিতা। তন্মধ্যেঃ

এক কাননে ফুটেছিলো রক্তজবা ফুল
জীবন নদীর তরী বেয়ে পায়নি জবা কূল।
প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় সকল ফুলের মাঝে
চুপটিমেরে দেখে জবা থাকে ভীষণ লাজে।
ফুলের মালি পানি ঢালে সকল গাছে রোজ,
এই জবাটি কেমন আছে নেইনি কোন খোঁজ।
ঢেউয়ের মত রক্তনদী বইছে জবার বুকে,
অভিমানে কষ্টগুলো সইছে ধুঁকে ধুঁকে।

জয়নব জোনাকি

জবা ফুলের ঝুমকা দোলে স্মৃতির কানে,
প্রেমের মাদল বাজলো বুঝি আমার মনে।

 এস.এম. মোস্তাফিজুর রহমান 

জবা ফুলের বৈশিষ্ট্য

এই ফুলটির সাধারণত চার ইঞ্চির হয়। এর পাঁচটি পাপড়ি থাকে। লাল, সাদা, কমলা, হলুদ,  গোলাপি,  বেগুনি,  এবং রক্ত রংয়ের হয়ে থাকে এই জবা ফুল।

এটি একটি চিরসবুজ গুল্ম। এই গাছের উচ্চতা ৭-১৫ ফিট এবং প্রস্থ ৫-১০ ফিট হয়ে থাকে। পাতাগুলো চকচকে সবুজ এবং ফুল গুলো বিভিন্ন রংয়ের হয়ে থাকে। এর ফুলগুলো সাধারণত ২-৩ দিন সতেজ থাকে।

জবা ফুল কোথায় কখন হয়

এই ফুলের উৎপত্তি পূর্ব এশিয়ায়। এজন্য একে চীনা রোজ ও বলা হয়। এটি প্রায় সব সময় ই চাষ করা যায়। তবে ফুল সাধারণত গ্রীষ্ম এবং শরত কালে বেশী ফুটে।

জবা ফুলের ব্যবহার ও গুরুত্ব

সৌন্ধর্য বৃদ্ধির কাজে জবা ফুল ব্যবহার করা যায়। পুজোতে এটি ব্যবহার হয়। বিভিন্ন রোগের নিরাময়ের জন্য জবা ফুলের গুরুত্ব অনেক।

চিকিৎসায় জবা ফুলের ব্যবহার

দীর্ঘ, উজ্জল এবং স্বাস্থকর করার জন্য জবা ফুলের নির্যাস উপকারী।  জবা ফুলের নির্যাস রক্ত চাপ হ্রাস করতে সহায়তা করে। এটি ক্ষত নিরাময়ে বেশ উপকারী।  স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা কমাতে ভূমিকা রাখে। অনিয়মিত মাসিকে এর উপকারীতা অনেক। চোখ ওঠার রোগে এটি ব্যবহার করা হয়। হাতের তালুতে চামড়া উঠলে অথবা বমনের সম্ভাবনায় এটি খুব উপকারী। 

টবে জবা ফুল চাষের পদ্ধতি

জবা ফুলের জন্য টব

জবা ফুল চাষের জন্য ১৪-১৮ মিটার এর টবের প্রয়োজন হয়। বীজ থেকে চারা সংগ্রহ করে চাষ করা যায়। এছাড়াও কন্দ এবং শাখা কলম থেকেও চারা সংগ্রহ করা যায়।

জবা ফুলের জন্য মাটি ও সার

সব মাটিতেই জবা গাছ জন্মালেও দোঁ আশ ও বেলে মাটিতে এর ভালো  ফলন পাওয়া যায়। মাটির সাথে অল্প সিলেকশন বালি, হাড়ের গুড়া, ছাই ভালোভাবে মিশিয়ে মাটি তৈরী করতে হবে।  এছাড়া কম্পোস্ট সার, গোবর, টিএসপি সার মেশানো উত্তম। চাপান সার এবং তরল সার ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বর্ষাকালে চাপান সার ও তরল সার প্রয়োগ করা উত্তম।

জবা ফুল গাছের পরিচর্চা

পাইপ, লাঠি অথবা বাশের কঞ্চি দিয়ে গাছকে বেধে দিতে হবে। যেন নুয়ে না পড়ে। গাছে পানি দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুই  সপ্তাহ পর পর মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। গাছ বড় হলে ডাল ছেটে দিতে হবে।

পোকামাকড়ঃ  জবা গাছে ছত্রাক আক্রমণ করতে পারে। এতে ফুলের বোটা নরম হয়ে যায়। আবার থ্রিপস ভাইরাস আক্রমণ করলে জবার কুঁড়ি বাড়িয়ে দেয়।

প্রতিকারঃ  এক দেড় মাস পর পর নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করলে ছত্রাক থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আর থ্রিপস আক্রমণ করলে মনোফিল, নিকোটিন,  সালফেট প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়।

আরো পরুনঃ

টবে গাঁদা ফুল চাষের পদ্ধতি
টবে শিউলি ফুল চাষ
টবে কৃষ্ণচূড়া ফুল চাষ
টবে কামিনী ফুল এর চাষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *