আমরা বেশিরভাগ ই ডিম খাওয়ার পর এর খোসা ফেলে দেই। কিন্তু এই ডিমের খোসাগুলোকে দিয়ে জৈব সার বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। ডিমের খোসার সার গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারি। কিন্তু অনেকেই জানেন না কিভাবে ডিমের খোসার সার তৈরি ও ব্যবহার করতে হয়, তাই আজ আমরা আলোচনা করবো বাগানের গাছে বা টবের গাছে ডিমের খোসা বা খোসার তৈরি সারের ব্যাবহার সম্পর্কে। আর এটি জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন গাছের খাদ্য বা পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে যা গাছ খাবার হিসেবে গ্রহন করে।
গাছের খাবার কে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়।
১। ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস ও
২। মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস
আজকে আমরা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস নিয়ে আলোচনা করবোনা।
এই ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস কে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়
১। প্রধান পুষ্টি মৌল ২। মাধ্যমিক পুষ্টি মৌল
গাছের প্রধান পুষ্টি মৌল তিনটি NPK নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ। কিন্তু আমরা নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ নিয়ে আলোচনা করবো না। আজ আমরা আলোচনা করবো মাধ্যমিক পুষ্টি মৌল উপাদান নিয়ে। মাধ্যমিক পুষ্টি মৌল এর মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার এই তিনটির মধ্যে আজ আমরা আলোচনা করবো ক্যালসিয়াম পুষ্টি উপাদান নিয়ে। আর ক্যালসিয়াম পুষ্টি উপাদান নিয়ে আলোচনার কারন হচ্ছে আমাদের আজকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ডিমের খোসা। আর এই ডিমের খোসার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম। আর এই ডিমের খোসার মাধ্যমে আমরা গাছকে ক্যালসিয়াম করতে পারি বা করে থাকি।
তো কিভাবে ব্যাবহার করা যায় তা আমরা জানবো তার আগে সংক্ষেপে জেনেনেই ক্যালসিয়াম গাছে কেন দিব বা ক্যালসিয়াম গাছে কি কাজে লাগে?
ক্যালসিয়াম এটি উৎসেচককে কার্যকর করে তোলে। এটি কোষ প্রাচীরের অন্যতম উপাদান।
কোষের মধ্যে জল সঞ্চালনে সহায়তা করে, কোষের বৃদ্ধি এবং কোষ বিভাজনের জন্যও এটি জরুরি।
নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য খনিজ আত্মীকরণ করার জন্য কিছু গাছে ক্যালসিয়াম আবশ্যক।
ক্যালসিয়াম সহজেই আলাদা হয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু উদ্ভিদ টিস্যুতে এক বার জমে গেলে ক্যালসিয়াম সেখান থেকে বেরোয় না। তাই গাছের বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ভাবে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করেতে হয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে ফুল, কাণ্ড ও শিকড়ের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর অভাবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিকৃতি, পাতা ও ফলে কালো দাগ দেখা দেয়। পাতার ধার ঘেঁষে হলুদ রঙ দেখা দিয়ে থাকে।
ডিমের খোসার সার তৈরির পদ্ধতি
এক্ষেত্রে আপনাকে ডিমের খোসাকে সংগ্রহ করতে হবে বা বাড়ীতে বেবহৃত ডিম থেকে খোসা সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহকৃত ডিমের খোসাকে ধুয়ে ভালভাবে শুঁকিয়ে নিতে হবে। শুকানো ডিমের খোসা গুলকে গুড়ো করে পাউডারে রূপান্তর করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্লেন্ডার, মিক্সচার ব্যাবহার করা যেতে পারে বা জাতুনিতে পিশেও তৈরি করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে খোসা গুলো জেন ভালভাবে মিহি হয়, দানা দানা যেন না থেকে যায়। দানা দানা থেকেগেলে এগুলো বেবহারে বা গাছে প্রয়োগের পর তাতে পিঁপড়ের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাই এমন পাউডার তৈরি করতে হবে যাতে পিঁপড়ে তাতে আক্রমণ করে সেগুলোকে বহন করে নিয়ে যেতে না পারে।
ডিমের খোসার সার ব্যাবহার ও প্রয়োগ
ডিমের খোসা থেকে তৈরিকৃত ডাস্ট বা সার যেকোনো ধরনের গাছে ব্যাবহার করা যায়।
টবের গাছে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে
৮ ইঞ্চি টবে ১ টেবিল চামচ
১০ ইঞ্চি টবে ১ টেবিল চামচ
১২ ইঞ্চি টবে ১.৫ টেবিল চামচ
টবের মাটিতে ডিমের খোসার সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে টবের মাটিকে নিরিয়ে বা আলগা করে দিন। তারপর পরিমান মত খোসার সার চারিদিকে ছিটিয়ে প্রয়োগ করুন। ডিমের খোসার সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে পিঁপড়ে আক্রমনের আশংকা থাকে তাই খোসার সারের সাথে নিম খৈল মিশিয়ে প্রয়োগ করা ভালো।
এই নিয়ম অনুসরন করে আপনি প্রতি সপ্তাহে ১ বার ডিমের খোসার সার প্রয়োগ করা যাবে।
আরো পড়ুনঃ Coco Peat কোকো পিট কি? উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়মাবলী
নিমের কীটনাশক তৈরি ও ব্যবহার
ছাদে সবজি চাষ করার সহজ পদ্ধতি
কলার খোসার সার তৈরির পদ্ধতি ও ব্যবহার