রোজ গার্ডেন ঢাকার টিকাটুলিতে অবস্থিত একটি নান্দনিক প্রাচীন জমিদার বাড়ি। তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস ১৯৩১ সালে এই বাগান বাড়ি নির্মান করেন। এটির বাগানে গোলাপ গাছের আধিক্যের কারণে পরবর্তিতে এর নাম হয়ে রোজ গার্ডেন। তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ যা বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠা হয় এই রোজ গার্ডেন পেলেস এ।
২২ বিঘা জমির উপর সাত হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে নির্মান করা হয়েছিল এ ভবনটি। ছয়টি সুদৃঢ় থামের উপর স্থাপিত এই প্রাসাদটির উচ্চতা পঁয়তাল্লিশ ফুট। করিন্থীয়-গ্রীক শৈলীর অনুসরণে নির্মান করা হয়েছে প্রাসাদটি। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে পাঁচটি কামরা ও একটি বড় নাচঘর। নিচতলায় আছে ৮ টি কক্ষ। পশ্চিম ও উত্তর দিকের দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে দুটি মূল ফটক। পশ্চিম দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই আছে একটি বিস্তীর্ণ খোলা প্রাঙ্গণ। এখানে রয়েছে মঞ্চের ওপর দণ্ডায়মান নারী মূর্তি। পূর্বাংশে মধ্যবর্তী স্থানে আছে একটি পুকুর যার পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মাঝখানে আছে একটি বাধানো পাকা ঘাট। এর পূর্ব দিকে আছে পশ্চিমমুখী একটি দোতলা ইমারত যার বর্তমান নাম ‘রশিদ মঞ্জিল’। রশিদ মঞ্জিলের প্রবেশপথের সামনের চত্বরে ইট ও সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত একটি সুন্দর ফোয়ারা আছে। এর সামনের দিকের মাঝামাঝি অংশের প্রতি কোঠার পাশাপাশি তিনটি খিলান দরজা আছে। ওপরের তলায় প্রতিটি খিলানের ওপর একটি করে পডিয়াম আছে। এর সামনে আছে বাইরের দিকে উপবৃত্তাকার ঝুল বারান্দা। প্রতি তলায় মোট ১৩টি ছোট ও বড় আকারের কোঠা আছে। প্রথম তলায় প্রবেশের পর পশ্চিমাংশের বাম দিকে আছে ওপরের তলায় যাওয়ার জন্য বৃত্তাকার সিঁড়ি।
এটি নির্মানের পিছনে রয়েছে এক বৈষম্যের ইতিহাস। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসায় ঢাকার খানদানি পরিবারগুলো পাত্তা দিত্না ঋষিকেশ দাসকে। একবার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর বাগানবাড়ি বলধা গার্ডেনের এক জলসায় অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন ঋষিকেশ দাস। তারপরই ঋষিকেশ দাস রোজ গার্ডেন প্যালেস তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভবনটির সাজ সজ্জার কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঋষিকেশ দাস এর আর্থিক অবসস্থা দূর্বল হয়ে পরে। তাই ১৯৩৭ সালে ঋষিকেশ দাস বাগান বাড়িটি খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছে বিক্রয় করে দেন। খান বাহাদুর আবদুর রশীদ ভবনটির নাম পালটে ‘রশীদ মঞ্জিল’ হিসেবে নামকরণ করেন।
১৯৪৪ সালে মৌলভী কাজী আবদুর রশীদ মারা যাবার পর তার বড় ছেলে কাজী মোহাম্মদ বশীর (হুমায়ূন সাহেব) রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান। তখন থেকে ভবনটি “হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি” হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে ১৯৭০-এ বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয়।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু কাজী আবদুর রশীদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব এটার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১৯৯৩ সালে আদালতের মাধ্যমে কাজী আবদুর রকীব রোজ গার্ডেনের মালিকানা স্বত্ব ফিরে পান।
১৯৯৫ সালে কাজী আবদুর রকীব এর মৃত্যুর পর থেকে এখন পর্যন্ত তার স্ত্রী লায়লা রকীবের মালিকানায় রয়েছে ভবনটি।
২০১৮ এ বাংলাদেশ সরকার ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ দুই হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে রোজ গার্ডেন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
রোজ গার্ডেন এর সময় সূচিঃ
সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বিনা মূল্যে পরিদর্শন করা যায়। তবে ভবনের ভিতরে পরিদর্শনের জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়।
রোজ গার্ডেন যাওয়ার উপায়ঃ
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, গুলিস্তান, ও আশেপাশের জায়গা থেকে রিক্সায় টিকাটুলি কে এম দাশ লেন এর রোজ গার্ডেন বা হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি বললেই নিয়ে যাবে। অথবা যাকোন জায়গা থেকে উবার, পাঠাও বা সিএনজি তে সরাসরি রোজ গার্ডেন এ যাওয়া যায়।
আরো কিছু দর্শনিয় স্থানঃ