ঢাকার কাছে ১ দিনে ঘুরে আসার মত ৯ টি আকর্ষণীয় স্থান

অনেক সময় আমরা কাজ করতে করতে একঘেয়েমি চলে আসে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে কাজের প্রেশারে। কিন্তু সময়ের অভাবে দূরে কোথাও গিয়ে রিফ্রেশ হওয়ার সুযোগ পাইনা। কিংবা পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে সুন্দর কোন জায়গায় বেরাতে যেতে চাচ্ছেন কিন্তু দূরে কোথাও যাওয়ার সময় বা সুযোগ নাই। সেক্ষেত্রে আপনার অবস্থান যদি ঢাকা বা ঢাকার আশেপাশে হয় তাহলে আমাদের আজকের এই লেখাটি আপনাদের জন্য। এখানে আমরা আলোচনা করেছি ঢাকার কাছে একদিনেই ঘুরে আসার মত ৯ টি আকর্ষণীয় স্থান নিয়ে। 

1.গোলাপ গ্রাম

এই গ্রামের পরিবেশ আর রাস্তার দুপাশের বিস্তির্ন নানা রকমের গোলাপ বাগান আপনাকে নিশ্চিত বিমোহিত করবে। গোলাপ গ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেলেও এখানে জারভারা, গ্লাডিওলাস এবং রজনীগন্ধা ফুলের চাষও করা হয়। গোলাপ গ্রামের অবস্থান সাভার  এর বিরুলিয়া ইউনিয়ন এর আন্তর্গত সাদুল্লাহপুর গ্রামে। তুরাগ নদীর তির ঘেষা সাদুল্লাহপুর গ্রামটি ই গোলাপ গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। 

গোলাপ গ্রামে কখন যাবেন?

মুলত শীত কালে সবচেয়ে বেশি ফুল ফুটে এবং গাছ ও ফুল দুইটাই এই সময় বেশ সতেজ থাকে। তাছাড়া সারাবছরই কম বেশি ফুল ফুটে থাকে। 

গোলাপ গ্রামে কোথায় খাবেন?

সাদুল্লাপুর ঘাটে একটি সাধারণ মানের খাবার হোটেল আছে। সাহদুল্লাপুর ঘাটে বট গাছের নিচে বসে চা-নাস্তা খেতে পারবেন। একসাথে অনেক লোক গেলে সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমান খাবার নাও পেতে পারেন, তাই অনেক লোক যাওয়ার প্লান থাকলে আগে থেকে হোটেল ওয়ালাকে বলে রাখতে পারলে ভাল। 

গোলাপ গ্রামে কিভাবে যাবেন?

গোলাপ গ্রামে একেক যায়গা থেকে একেকভাবে যাওয়া যায় কোথা থেকে কিভাবে যাবেন তা নিচে দেয়া হল।

রুট প্ল্যান ১ঃ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এর নর্থ টাওয়ারের কাছ থেকে লেগুনা আসে তাতে করে সোনারগাঁ জনপথ রোড ধরে দিয়াবাড়ি আসতে হবে। একটু সামনে গেলেই মেইনরোডে যেকোন গাড়িতে করে বিরুলিয়া ব্রিজ আসবেন। এখান থেকে অটোতে করে চলে আসতে পারবেন সাদুল্লাহপুর বা গোলাপগ্রাম ভাড়া নিবে ২০-৩০ টাকা।  আর যদি চান নৌকা ভ্রমনের স্বাদ নিতে তাহলে বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে নৌকায় যেতে পারেন গোলাপ গ্রামে।

রুট প্ল্যান ২ঃ চিটাগাং রোড, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, সাহবাগ, ধানমন্ডী, ফার্মগেট এসব জায়গা থেকে মিরপুর বেড়িবাঁধ আসার অনেক বাস পাওয়া যায়। মিরপুর বেরিবাধ নেমে যাকাউকে জিঙ্গেস করলেই দিয়াবাড়ী ঘাট দেখিয়ে দিবে। এখান থেকে কিছুক্ষন পর পর বিভিন্ন ধরনের নৌকা সাদুল্লাহপুর বা গোলাপ গ্রামের উদেশ্যে ছেরে যায়। লোকাল ভাড়া জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকা।

বিশেষ নোটঃ সন্ধ্যা ৬ টার পর এখানে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে  যায় তাই যারাই যাবেন নৌকায় ফিরতে চাইলে সন্ধ্যা ৬ টার আগেই নৌকা ঘাটে আসতে হবে। তাছাড়া সড়কপথেও এর বেশি দেরি করা উচিত নয়। অন্যথায় গারি পেতে সমস্যা হতে পারে।

2.মৈনট ঘাট

moinot ghat

আপনার মনের কস্ট বা বিরক্তবোধকে সাগরে ঢেলে দিতে চাচ্ছেন? মানে সমুদ্র পারে গিয়ে রিফ্রেশ হতে চাচ্ছেন কিন্তু ঢাকার কাছে কোন সমুদ্র না থাকায় সময়ের অভাবে তা করতে পারছেন না। তাহলে ঢাকার দোহারে অবস্থিত পাদ্মার পারের মৈনট ঘাট আপনার জন্য হতে পারেয় আদর্শ স্থান। অনেকে এটাকে মিনি কক্সবাজার ও বলে থাকেন। একা, বন্ধু বান্ধব, কিংবা পরিবার নিয়েও যেতে পারেন এখানে। ঢাকার কাছে এত সুন্দর ও মনোরম জায়গা দেখে নিসন্দেহে আপনার ভাল লাগবে।

মৈনট ঘাট যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ

বর্ষার পর থেকে বসন্তের শেষ পর্যন্ত মৈনট ঘাটে যাওয়ার জন্য উপযোগী। বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর থাকে, অনেকে সেটাও দেখতে যান। অবশ্যই এখানে বিকালের দিকে পৌছানো উচিত নয়তো রোদে কস্ট হতে পারে। ঢাকা বা তার আশপাশ থেকে দুপুরে খেয়ে রওনা দিলেই ভাল। 

মৈনট ঘাটে উপভোগ্য বিষয়

এখানে আপনি পাদ্দার পারে বসে সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। চাইলে নৌকা, ট্রলার বা স্পিড বোটে পদ্মায় ঘুরতে পারবেন। অনেকেই এখানে গোসল ও করেন আপনিও চাইলে সেই অনুভুতি নিতে পারেন। তবে যারা সাতার পারেন না তাদের বেশি দূরে যাওয়া কিংবা একা নামা উচিত নয়। পদ্মার পারে গেছেন কিন্তু ইলিশ খেয়ে আসেন নাই এমন ঘটনা খুব কমি শুনা যায়। এখানেও তার বেতিক্রম নয়। এখানে কয়েকটি খাবার হোটেল আছে আর তাতে পাওয়া যায় ইলিশ সহ নানা রকম মাছ দিয়ে খাবার সুব্যবস্থা। তবে নৌকা চড়া কিংবা সবকিছুর ক্ষেত্রেই আগে দাম জিঙ্গেস করে নিবেন।

মৈনট ঘাটে কিভাবে যাবেন

গুলিস্তান গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে দোহারের অনেক বাস যায় তবে সব বাস কিন্তু মৈনট ঘাট পর্যন্ত যায় না। সেক্ষেত্রে আগে জিঙ্গেস করে নিতে হবে মৈনট ঘাটে পর্যন্ত যায় কিনা। অথবা দোহারের অন্য বাসে গেলেও সেখান থেকে অটতে ঘাট পর্যন্ত যেতে পারবেন। গুলিস্তান থেকে মল্লিক পরিবহনে উঠলে দোহার মাঝিরকান্দি নামক স্থানে নামতে হবে, সেখান থেকে অটতে বাশতলা, আবার বাশতলা থেকে অটতে কার্তিকপুর, কার্তিকপুর থেকে আবার অটতে মৈনট ঘাট। অথবা ঢাকার যেকোন যায়গা থেকে নিজস্ব গারি কিংবা সি এন জি ভাড়া করেও যেতে পারেন। 

সতর্কতাঃ মৈনট ঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬ টার পর আর কোন বাস ছারেনা। তাই যেখানেই থাকুন ৬ টার মধ্যে বাসে চলে আসতে হবে। অন্যথায় ফেরার পথে গারি না পাওয়ার বিরম্বনায় পরতে পারেন।

3. জিন্দা পার্ক

জিন্দা পার্ক, রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানার দাউদপুর এলাকায় ১০০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে গরে তোলা হয়েছে এই জিন্দা পার্ক। কতৃপক্ষ চেস্টা করেছে এটাকে যতটা সম্ভব প্রকৃতি নির্ভর রাখতে। এখানে প্রায় 250 প্রজাতির ১০ হাজারের উপরে গাছ আছে। তাই পুরো জায়গাটাই ছায়া ঘেরা। আরো আছে 5 টা পুকুর যেখানে খেলা করে মাছ আর হাঁস। যেদিকেই তাকাবেন শুধু সবুজ আর ফুল-ফল চোখে পরবে। প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য খুবি পছন্দের যায়গাটা। ঢাকার খুব কাছে প্রিয়জনদের নিয়ে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর জন্য জিন্দা পার্ক বা জিন্দাগ্রাম চমৎকার একটা জায়গা। 

জিন্দা পার্ক কখন যাবেন?

জিন্দা পার্ক বছরের যেকোন সময় ই যেতে পারেন। এটি সপ্তাহের ৭ দিন সকাল ৭  টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে রাত্রিযাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। 

জিন্দা পার্কে উপভোগ্য বিষয়

সবুজে ঘেরা নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানকার লেক বা পুকুরে নৌকা চরার সুযোগ। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলির মাধ্যমে তৈরি স্কুল, মসজিদ, লাইব্রেরি ও নানান রকম গাছের পরিচয়। আরো আছে গাছের উপরে টং বা মাচা যেখানে বসে সময় কাটাতে পারবেন। এছড়াও এখানে খাবারের সুব্যবস্থা ও আছে।

জিন্দা পার্কে কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হচ্ছে কুড়িল বিশ্ব রোডের রেললাইনের পাশের রাস্তা থেকে বি আর টিসির বাস এ কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত আসবেন। এটি পূর্বাচল ৩০০ ফিট হয়ে আসে। কাঞ্চন ব্রিজের আগে ঢাকা সিটি বাইপাসের রাস্তায় অটো থাকে যা জিন্দা পার্ক যায়। অথবা গুলিস্তান থেকে বাসে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এসে এখান থেকে লোকাল বা রিজার্ব সি এন জিতে জিন্দা পার্ক। যাত্রাবারি থেকে বাস বা লেগুনায় ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার তারপর লোকাল বা রিজার্ব সি এন জিতে জিন্দা পার্ক। চিটাগাং রোড থেকে লেগুনায় ডামরা স্টাফ কোয়ার্টার তারপর  লোকাল বা রিজার্ব সি এন জিতে জিন্দা পার্ক। অথবা চিটাগাং রোড বা কাচপুর থেকে বাসে ভুলতা গাউসিয়া ওখান থেকে বাসে বা সি এন জিতে কাঞ্চন ব্রিজ তারপর অটোতে জিন্দাপার্ক।

জিন্দা পার্কের খরচ

লোকাল গারিতে গেলে আর সাধারণ খাবার খেলে জন প্রতি খরচ সর্বোচ্চ 500 টাকা। তাছাড়া ইদের ছুটি ও অন্যান্য ছুটির সময় প্রবেশ মূল্য বরদের 150 টাকা, অন্যান্য সময়ে ১০০ টাকা, 5 বছরের কম বয়সিদের জন্য 50 টাকা। 

গাড়ির ভেদে পার্কিং খরচ 50 থেকে ১০০ টাকা। 

খাবার খরচ পেকেজ ২৭০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত।

পিকনিক বা একসাথে অনেক দর্শনার্থি যেতে চাইলে সেক্ষেত্রে কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন – 

01716 260908

01715 025083

01721 266610

4. পানাম সিটি

পানাম নগর

পানাম সিটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এ অবস্থিত। ঈসাখাঁর আমলে বাংলার রাজধানী ছিল এই পানাম সিটি। বিশ্বের ১০০ টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি এই পানাম সিটি। ভূঁইয়াদের শাসন আমলের ইতিহাস জড়িয়ে আছে এখানে। প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছিল এই নগরী। একপাশে মেঘনা আর একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। আর এই নদী পথ দিয়েই দেশ-বিদেশ পন্য আমদানী রপ্তানি হত। আর তাই এখানে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য নান্দনিক স্থাপনা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, নাচ ঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবার কক্ষ, প্রশস্ত দেয়াল, ভোজনালয়, বিচারালয়, প্রমোদ কুঞ্জ ইত্যাদি।  স্থাপনাগুলোতে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সাথে মোঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ লক্ষ করা যায়। বর্তমানে এখানে রাস্তার দুধারে 50 এর অধিক স্থাপনা আছে। সেই আমলে গরেউঠা এই স্থাপনাগুলোর নির্মানশৈলি দেখে দেশি ও বিদেশি পর্যটকেরা এখোনো অবাক হন।

পানাম সিটিতে কখন যাবেন?


এখানে বছরের যেকোন সময়ে যেতে পারেন। প্রতি রোববার সারাদিন ও সোমবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। তাছাড়া অন্যন্য ছুটির দিনে জাদুঘর বন্ধ থাকলেও পানাম নগর খোলা থাকে।

পানাম সিটিতে যা যা দেখবেন?

লোকশিল্প জাদুঘর, বড় সরদার বাড়ি, জয়নুল আবেদিন সৃতি জাদুঘর, এখানে আরো আছে সুবিশাল লেক এবং তাতে রয়েছে নৌকা চরার সুযোগ। তারপর চলে যাবেন পানাম নগরে এখানকার প্রাচিন ভবনগুলো দেখতে দেখতে আপনি হারিয়ে যাবেন সেই মুঘলীয় শাসন আমলে। যখন এখান থেকেই রাজকার্য পরিচালনা করা হত। এ ছাড়াও নগরীর আশেপাশে ছড়িয়ে আছে ঈসা খাঁ ও তাঁর ছেলে মুসা খাঁর প্রমোদ ভবন, ফতেহ শাহের মসজিদ, সোনাকান্দা দুর্গ, পঞ্চপীরের মাজার, কদম রসুল, চিলেকোঠাসহ বহু পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ স্থাপনা।

পানাম সিটিতে কিভাবে যাবেন?

গুলিস্তান থেকে স্বদেশ ও দোয়েল বাস এ সোনারগাঁও এর মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এ নেমে বাম পাশেই অটোতে প্রথমে যাবেন লোকশিল্প জাদুঘর ওখানে ঘুরে আবার অটোতে চলেযেতে পারবেন পানাম সিটিতে। অথবা ঢাকা বা তার আশপাশ থেকে নিজস্ব পরিবহন বা ভাড়া গাড়ি রিজার্ব করেও যেতে পারেন। 

পানাম সিটিতে কোথায় খাবেন?

ওখানে খুব উন্নতমানের খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই, তবে মোটামুটি মানের বেশ অনেকগুলো খাবার হোটেল ও রেস্তোরা আছে যেগুলো থেকে খুদা নিবারন করতে পারবেন। 

সতর্কতাঃ পানাম নগরির ভবনগুলো অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় এগুলোর উপরে উঠার চেস্টা না করাই উত্তম। 

5. মাওয়া ফেরি ঘাট

প্রায় এক দশক থেকেই মাওয়া ফেরি ঘাট ঢাকা ও আশেপাশের মানুষের কাছে একটি ভ্রমনের যায়গায় পরিণত হয়েছে। এখানে মানুষ বন্ধুবান্ধব ও পরিবার পরিজনদের নিয়ে সময় কাটাতে ও ইলিশ খেতে আসেন।

কয়েক দশক থেকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই মাওয়া ফেরিঘাট ছিল অত্যন্ত কর্মচঞ্চল। ভিড় জমে থাকত ফেরি, গারি, ট্রলার, স্পিড বোট, ইত্যাদিতে। আর তখন থেকেই প্রথমে কর্মব্যস্ত ও জতায়াতকারি মানুষের জন্য গরে উঠে খাবার হোটেল। আর পদ্মার পারে হওয়ায় এখানকার কমন খাবার ইলিশ সাথে নানান প্রজাতির মাছ। 

প্রথমে প্রয়োজনের তাগিদে হলেও পরে আস্তে আস্তে ঢাকার ভ্রমন পিপাসু মানুষ নদী দেখতে ও ইলিশ খেতে পদ্মার পারে যাওয়া শুরু করে। আর সেই সুবাদে এখানে গরে উঠে প্রজেক্ট হিলশা রেস্টুরেন্ট সহ ছোট বড় অসংখ্য হোটেল রেস্টুরেন্ট। আর এখনতো নদী দেখা ও ইলিশ খাওয়া ছাড়াও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেওয়ে ও হয়েছে দেখার মতন। আর এর মাঝে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও বহুমুখী পদ্মা সেতুতো আছেই।

মাওয়া ঘাটে উপভোগ্য বিষয়ঃ

ঢাকা থেকে যেতে পরিকল্পিত এক্সপ্রেসওয়ে দেখে আপনার মনে হতে পারে আপনি বাংলাদেশ নয় বরং উন্নত কোন দেশের রাস্তায় আছেন। যাদের বাজেট থাকবে বা ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা চাইলে একেবারে পদ্মা ব্রিজ পার হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারেন। 

এছাড়া পদ্মা নদীর পারে বসে সূর্যাস্ত দেখা আর সন্ধার পরতো নদীর পারে বসে সময় কাটানোতে অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করে। নৌকা, ট্রালার, বা স্পিড বোটে পদ্মায় ঘুরে বেড়ানো। যেখানে আপনি মাছ দেখে কিনে সেটা রান্না করে দিতে বলতে পারেন। 

অনেকেতো নদীতে গোসল ও করেন, তবে সেক্ষেত্রে যারা সাতার জানেন না তাদের নদীতে না নামাই ভাল, সাতার জানালেও একা নামা উচিত নয় কারণ নদীর স্রোত গভিরে নিয়ে যেতে পারে। 

মাওয়া ঘাটে কখন যাবেন?

এখানে বছরের যেকোন সময় ই যেতে পারেন। তবে সকালে না গিয়ে দুপুরে রওনা দেয়া ভাল। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে এখানে অনেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ও সময় কাটান। তাছাড়া রাত ১০ টা ১১টা পর্যন্ত লোকাল গাড়ি চলে এর পরেও চলে তবে খুব কম।

মাওয়া ঘাটে কিভাবে যাবেনঃ

গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া ও ভাঙ্গো পর্যন্ত অনেক বাসই যায়। এখানে আসলেই দেখবেন ডাকছে। তাছাড়া মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে স্বাধীন পরিবহন যায়। উঠার আগে জিঙ্গেস করে নিবেন মাওয়া যায় কিনা। কারণ সিটিতে অন্য একটা স্বাধীন পরিবহন চলে যেটা মোহাম্মদপুর থেকে ডেমরা যায়। 

6. বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর

সারাদিনের সময় নিয়ে কোথাও বেরাতে চাইলে, বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে গাজীপুরের এই সাফারি পার্ক এ যেতে পারেন। এই পার্কের বিশেষ আকর্শন কোর সাফারি। এখানে গেলে আপনি রোমাঞ্ছিত হবেন নিশ্চিত, কিছুটা ভয়, এডভেঞ্চার, সাথে ভাল ও লাগবে নিশ্চিত। কারণ চিড়িয়াখানায় পশুপাখি খাচায় বন্দি থাকে আর মানুষ বাইরে থেকে তাদের দেখে। কিন্তু সাফারি পার্কে বিস্তির্ন যায়গা জুড়ে সিংহ, বাঘ, জেব্রা, জিরাফ, হরিন, ঘোড়া সহ আরো নানান পশু ঘুরে বেরায় আর মানুষেরা তার মাঝখানে গারি দিয়ে দেখতে দেখতে যায়। মাঝে মাঝে গারি দারায় পশু দেখার জন্য। এমন ও হতে পারে গারি যাচ্ছে কিন্তু গারির সামনে পথ আগলে দারিয়ে আছে সিংহ, বাঘ  কিংবা জিরাফ। অথবা গারির জানালা দিয়ে বাইরে দেখছেন হঠাত বাঘ কিংবা সিংহ দৌরে এসে জানালায় ঝাপিয়ে পরল কেমন অনুভুতি হবে। নিশ্চই বুকটা ধক করে উঠবে।

তাহলে আর দেরি কেন একদিন সময় করে চলে যান বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এ। এটি গাজীপুরের শ্রিপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত। শালবন ও ছোট ছোট টিলা সম্বলিত 3690 একর জায়গার উপর গরে তোলা হয়েছে সাফারি পার্কটি।

সাফারি পার্কে যা যা দেখবেনঃ

বঙ্গবন্ধু স্কয়ারঃ প্রশাসনিক ভবন, বিনোদন উদ্যান, পার্কিং এরিয়া,ফোয়ারা, লেক, পার্কের ডিসপ্লে মেপ, তথ্যকেন্দ্র, ডরমেটরি, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ইকো রিজোর্ট এগুলো নিয়েই বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।

কোর সাফারিঃ এটাই পার্কের মূল আকর্শন, কারণ এখানেই মুলত বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়া, ভাল্লুক, চিতা বাঘ, হরিন, গয়াল ইত্যাদি উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। এখানে গারি ছাড়া যাওয়া নিশেধ। কতৃপক্ষ এখানে যাওয়ার জন্য ২ টি মিনিবাস ও ২ টি জিপ রেখেছে। যাতে করে নির্দিস্ট পরিমান টাকার বিনিময়ে   দর্শনার্থিরা পশু-প্রানিদের দেখতে যেতে পারেন। 

সাফারি কিংডমঃ এখানে রয়েছে ম্যাকাও লেন্ড যেখানে আছে ৩৪ প্রজাতির আফ্রিকান পাখি। এর পাশেই আছে নানান প্রজাতির মাছের অ্যাাকুরিয়াম। যার বিশেষ আকর্ষন ২০ সেকেন্ড পর পর রঙ পরিবর্তনকারি চিকলেট মাছ।

এখানে আরো আছে 9D মুভি থিয়েটর যেখানে ঢুকলে আপনার মনে হবে প্রতিটা জীব জন্তু সত্যি আপনার পাশে বিচরন করছে যা চাইলেই আপনি স্পর্শ করতে পারবেন এমন। 

এছাড়াও আছে প্রজাপতি পার্ক, কার্ব গার্ডেন, কুমির, ক্রাউন্ট ফ্রিজেট ও হর্নবিল এভিয়ারি যেখানে আছে নানা প্রজাতির ময়ূর ও ধনেশ। তাছাড়া বাচ্চাদের জন্য আছে বিভিন্ন রাইড সম্বলিত শিশু পার্ক সহ অনেক কিছু। 

সাফারি পার্কে কখন যাবেনঃ

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক মঙ্গলবার ব্যতিত সপ্তাহের বাকি ছয়দিন সকাল ৯ টা থেকে 5 টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

সাফারি পার্কে কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে বলাকা, অনাবিল, বা গাজিপুরগামী যেকোন বাস এ গাজিপুর চৌরাস্তা গিয়ে ওখান থেকে বাস কিংবা লেগুনায় বাঘের বাজার এ নেমে ওখান থেকে অটো বা সি এন জিতে সাফারি পার্ক। অথবা গাজিপুর চৌরাস্তা থেকে সরাসরি সি এন জি তে সাফারি পার্ক। 

আবার ঢাকা থেকে শ্রিপুর বা ময়মনসিংহ এর বাস এ বাঘের বাজার এ নামে অটো বা সিএনজিতেও  বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব সাফারি পার্ক যেতে পারেন। 

সাফারি পার্কে খরচঃ

লোকাল বাস এ গেলে পার্কের সকল টিকেট ও খাবার খরচ সহ জন প্রতি ৮০০-১০০০ টাকা খরচ হবে।

সতর্কতাঃ মিনিবাস বা জিপে পরিদর্শনকালে ভুলেও গাড়ি থেকে নামবেন না। বন্য প্রাণীর খাচা থেকে দূরে থাকবেন। কতৃপক্ষের সতর্ক বার্তা মেনে চলবেন। উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী কোন যন্ত্র ম্যবহার করবেন না। 

যোগাযোগঃ পিকনিক বা যেকোনো প্রয়োজনে যেগাযোগ করুন – 01973 000044, 01823 000044

ওয়েবসাইট – https://www.safariparkgazipur.info.bd/

7. বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

যারা ইতিহাস ঐতিহ্য বা প্রাচীন স্থাপনা সম্পর্কে দেখতে বা জানতে চান বালিয়াটি জমিদার বাড়ি তাদের জন্য চমৎকার একটি ঐতিহাসিক স্থান। এই জমিদার বাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। 

বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে বিভিন্ন উত্তরাধিকারেরা বিভিন্ন সময়ে মোট ৭ টি স্থাপনা তৈরি করেন যা এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দড়িয়ে আছে এখনো।

জমিদার বাড়িটি এখন প্রত্নতাত্বিক বিভাগের তত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। বাড়িটির রঙ্গমহল খেত ভবনটিতে করা হয়েছে যাদুঘর। 

১৯০০ শতকে ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার  এর বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে উঠে পেলেসটি। রাস্তার একপাশে বিশাল পুকুর অপর পাশে জমিদার বাড়িটি। রাস্তার সাথেই পাশাপাশি বিশাল ৪ টি ভবন এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি পরিদর্শনের সময়ঃ

জমিদার বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে অক্টোবর থেকে মার্চ মানে শিতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। রবিবার সারাদিন আর সোমবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এছাড়া যেকোন সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জমিদার বাড়ি বন্ধ থাকে। আর শুক্রবার দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে ২ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন?

গাবতলী থেকে সাটুরিয়া গামী এস বি লিংক পরিবহণে গেলে। সাটুরিয়া পার হয়ে সাটুরিয়ার জিরো পয়েন্টে নেমে যেতে হবে। জিরো পয়েন্ট থেকে অটোতে জমিদার বাড়ী ভাড়া ২০-৩০ টাকা।

অথবা গাবতলী থেকে আরিচা বা মানিকগঞ্জগামী যে সব বাস সাটুরিয়া হয়ে যায় সেগুলোতে করে সাটুরিয়া যেতে পারবেন। 

উত্তরার দিক থেকে যেতে চাইলে আব্দুল্লাপুর হয়ে সাভার নবীনগর যাবেন। সাভার স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে সাটুরিয়ার বাস পাওয়া যায়, ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। তারপর সাটুরিয়া নেমে অটো বা সি এন জিতে বালিয়াটি জমিদার বাড়ী।

অথবা নিজস্ব কিংবা রিজার্ব গারিতে সরাসরি চলে যেতে পারেন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ির খরচঃ 

লোকাল বাসে গেলে খাবার খরচ সহ প্রতিজনের জন্য খরচ হবে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা করে।

তো আর দেরি কেন সুযোগ বুঝে ঘুরে আসুন সুন্দর এই ঐতিহাসিক জায়গা থেকে। 

8. মহেরা জমিদার বাড়ি

যারা ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে যানতে চান এবং প্রাচীন স্থাপনা দেখতে পছন্দ করেন টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি তাদের জন্য অনন্য একটি স্থান। আমাদের দেখা প্রচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় আছে এটি। এছাড়াও এখানে ছোট বড় আরো ৪ টি জমিদার বাড়ি রয়েছে। তাছাড়া টাঙ্গাইল জেলা প্রাকৃতিকভাবেই সুন্দর হওয়ায় ভ্রমনপিপাসুদের কাছে এটি পছন্দের একটি জায়গা। আর টাঙ্গাইলের বিখ্যাত চমচম এর সুনামতো দেশজুরে সমাদৃত। ঢাকার কাছে হওয়ায় একদিনে ঘুরে আসার জন্য টাঙ্গাইল উপযুক্ত জায়গা। জমিদার বাড়ির প্রবেশদারের আগে রয়ছে বিশাখা সাগর নামে বিশাল একটি দীঘি। বাড়ির পিছনে আছে আর দুটি পুকুর একটির নাম পসরা অপরটির নাম রানি পুকুর।

মহেরা জমিদার বাড়িতে চৌধুরি লজ, মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, ও কালিচরন লজ নামে বড় ৪ টি ভবন আছে। এছাড়াও রানি মহল, নায়েব ভবন, কাচারি ভবন নামে আরো কয়েকটি ছোট ভবন আছে।

মহেরা জমিদার বাড়ির উপভোগ্য বিষয়ঃ

মহেরা জমিদার বাড়িতে আপনি দৃস্টিনন্দন ভবনগুলো দেখা ছাড়াও আরো পাচ্ছেন নির্দিস্ট পরিমান টাকার বিনিমিয়ে একা বা ভ্রমণসঙ্গীদের নিয়ে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা। এছাড়াও এখানে আরো আছে শিশুপার্ক, সুইমিং বা সাতারের এর ব্যবস্থা, নৌকা বা বোট এ চরার সুযোগ। এখানে পুলিশ প্রশিক্ষনকেন্দ্রের সল্পমূল্যের কেন্টিনে চাইলে কাস্টমাইজ বা আপনাদের পছন্দমত খাবার তৈরি করে দিতে বললে তাও পাবেন। এছাড়া আশেপাশের মনোরম গ্রাম্য পরিবেশতো দেখবেন ই। 

মহেরা জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে মহেরা জমিদার বাড়ির দুরুত্ব ৭০ কিলোমিটারের উপরে। তাই দিনে দিনে ফিরে আসতে চাইলে সকাল সকাল রওনা দেয়াই ভাল কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডে প্রায় ই জ্যাম থাকে। আর ওখানে গিয়ে রাত্রিযাপনের ইচ্ছে থাকলে দুপুরে বা বিকালেও রওনা দিতে পারেন। 

মহাখালী থেকে নিরালা বাসে টাঙ্গাইল এর ডুবাইল পুলিশ সেন্টারে নেমে সি এন জিতে মহেরা জমিদার বাড়ী। সি এন জি ভাড়া লোকাল ১৫ টাকা আর রিজার্ব ৭০ টাকা।

অথবা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে টাঙ্গাইলগামী ধলেশ্বরি, বিনিময় বা ঝটিকা বাসে করে টাঙ্গাইল এর নাটিয়াপাড়া নামতে হবে। ওখান থেকে সি এন জি বা অটো রিক্সায় মহেরা জমিদার বাড়ি বা মহেরা পাড়া পুলিশ প্রশিক্ষন কেন্দ্রে আসতে হবে। জমিদার বাড়িটি এখন পুলিশ প্রশিক্ষন কেন্দ্র।

এছাড়া খিললখেত, উত্তরা, টঙ্গি ঐসব জায়গা থেকেও চাইলে গাড়িতে উঠতে পারেন।

ঢাকা থেকে চাইলে ট্রেনেও যেতে পারেন। ধুমকেতু এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ছয়টায়, বিমানবন্দর থেকে সাড়ে ছয়টায় আর জয়দেবপুর থেকে সকাল ৭ টায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়ে কমলাপুর থেকে সকাল ৮.১৫ মিনিটে, বিমানবন্দর থেকে ৮.৪৫, আর জয়দেবপুর থেকে ৯.১৫ মিনিটে। সিল্কসিটি কমলাপুর থেকে ছাড়ে দুপুর ২.৪৫ এ, বিমান বন্দর থেকে ৩.১৫, আর জয়দেবপুর থেকে ৩.৫০ মিনিটে। সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছাড়ে দুপুর ৪.১৫ এ, বিমান বন্দর থেকে ৪.৪৫, আর জয়দেবপুর থেকে ৫.১৫ মিনিটে। এগুলো ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি ট্রেন যায়। যা আপনারা অনলাইনে টিকেট করার সময় দেখবেন, বা কাউন্টারে গিয়ে জিঞ্জেস করলেই বলবে। 

উল্লেখিত ট্রেনের মধ্যে ধুমকেতু ও একতা ছাড়া অন্য ট্রেনে গেলে আপনি টাঙ্গাইলের আগে মির্জাপুর স্টেশনে নেমে যেতে পারেন কারন মির্জাপুর আর টাঙ্গাইল এর মাঝামাঝি পরে মহেরা। মির্জাপুর নেমে সি এন জিতে জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।

এছাড়া নিজস্ব বা রিজার্ব গারিতে যেকোনো জায়গা থেকে যাওয়ার সুযোগতো আছেই।

মহেরা জমিদার বাড়ির খরচঃ

বাসে গেলে যদি রাতে না থাকেন খাবার সহ প্রত্যকের খরচ হবে ৮০০-১০০০ টাকা। আর যদি রাতে থাকেন তাহলে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মত লাগবে।

বুকিং বা অন্য কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে – 01921- 62390

9. ড্রিম হলিডে পার্ক

বাজেট ইসু না থাকলে পরিবার বাচ্চা কাচ্চা বা বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতে পারে ঢাকার কাছে নরসিংদি জেলার ড্রিম হলিডে পার্কে। এটি নরসিংদী জেলার ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সাথে অবস্থিত। পার্কটির নামকরণের সার্থকতা আছে বলতেই হয়। বাচ্চারা এই পার্কে গেলে তাদের ড্রিমলেন্ডে গিয়েছে মনে হবে নিশ্চিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও বেশি রাইড সম্বলিত আধুনিক পার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখনে ২৫ টির ও বেশি রাইড রয়েছে। ঢাকা থেকে যেতে সময় লাগে এক থেকে দেরঘন্টা। একদিন সময় করে ঘুরে আসুন ড্রিম হলিডে পার্ক থেকে

ড্রিম হলিডে পার্কের টিকেটের মূল্যঃ

ড্রিম হলিডে পার্কের প্রবেশ মুল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৩২০ টাকা ও শিশুদের জন্য ২২০ টাকা। এটা দিয়েই ড্রিম হলিডে সাফারি পার্ক এ প্রবেশ করতে পারবেন। আপনি চাইলে ২০ রকম রাইড সহ কাপল পেকেজ বা ফেমেলি পেকেজ নিতে পারবেন। কাপল পেকেজের মূল্য ২৫০০ টাকা এবং চার জনের ফেমেলি পেকেজের মূল্য ৪৫০০ টাকা। এছাড়া শুধু প্রবেশের টিকেট করে ভিতরে প্রবেশ করে যেটা যেটা ভাল লাগে চরতে চান শুধু সেগুলোর টিকেট করে চরতে পারবেন। রাইড ভেদে টিকেট এর মূল্য ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

ড্রিম হলিডে পার্কে যা যা আছেঃ

ড্রিম হলিডে পার্কে প্রবেশ করেই আপনার চোখে পরবে পৃথিবীর একটা মানচিত্রের তোরন। এর পরি আছে পার্কের কোন দিকে কি আছে তা জানার সুবিধার্থে পার্কের ম্যেপ। 

তারপর ই আছে বাচ্চাদের জন্য চাইল্ড জোন। যেখানে আছে বাচ্চাদের জন্য নানা রকম রাইডের ব্যবস্থা। 

চাইল্ড জোনের পরেই আছে ড্রিম হলিডে ওয়াটার পার্ক যেটা পার্কের অন্যতম আকর্শন। ওয়াটার পার্ক খোলা থাকে দুপুর ১২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত। ওয়াটার পার্কের পরেই আছে অত্যন্ত সুন্দর করে সাজানো বিশাল একটা লেক, যেখানে চাইলে বোট রাইড করতে পারবেন। তার কিছুটা সামনে মুর্তির মাধ্যমে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আমাদের গ্রাম বাংলার পরিবেশ। 

তারপর আছে ভুতের বাড়ি, কাউকে ভয় দেখাতে চাইলে ভুতের বাড়িতে নিয়ে গেলেই হবে। আর তার পাশে আছে বুলেট ট্রেন। পাশেই পেয়েযাবেন আরো কিছু রাইড। এখানে আরো আছে ভুতের আড্ডাখানা। 

আছে নদীর ভিতর টানেল মানে পানির নিচ দিয়ে পারাপারে রাস্তা। আরো আছে পদ্মা ব্রিজ ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আদলে করা মিনি পদ্মা ব্রিজ ও স্যাটেলাইট। এখানে লেকের মাঝখানে একটি দিপ বানিয়ে সেটিতে মুর্তির মাধ্যমে গ্রামীন জীবনাচার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেকে বোটে করে আরো দেখা যায় জীবন্ত হরিন। আরো আছে প্রাচীন মানুষের ভাসকর্য। অন্য একটি দিপে বানানো হয়েছে ডলফিন, কুমির সহ অনেক প্রানী। 

এখানকার আরো একটি বিশেষ আকর্শন ক্যাবলকার যাতে উঠলে প্রায় পুরো পার্কটি দেখা যায়। আরো আছে কাইট ফ্লাইয়িং বা ঘুরিতে চরা। তাছাড়া নাগরদোলাতো আছেই। 

 ড্রিম হলিডে পার্ক কিভাবে যাবেন?

ঢাকার কমলাপুর, গুলিস্তান, সায়দাবাদ, মহাখালী থেকে অনেক বাস নরসিংদী যায় ভাড়া ১০০ টাকা। এছাড়াও যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোড, কাচপুর এসব জায়গা থেকেও নরসিংদির বাস পাওয়া যায়। নরসিংদির বাস ছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারি কিশরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বা সিলেটের যেকোন লোকাল বাসে করেও ড্রিমহলিডে পার্ক যেতে পারবেন। যেই বাসেই যান না কেন ড্রিম হলিডে পার্ক নামিয়ে দিতে বললেই নামিয়ে দিবে।

ড্রিম হলিডে পার্ক ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে যেতে পারবেন। এগারসিন্দুর ট্রেন কমলাপুর থেকে ছাড়ে সকাল ৭.১৫ মিনিটে আর বিমান বন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ে ৭.৪৫ এ। তিতাস কমিউটার ট্রেন কমলাপুর থেকে ছাড়ে সকাল ৯.২৫ মিনিটে আর বিমান বন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ে ৯.৫৫তে। কিশরগঞ্জ এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছাড়ে সকাল ১০.৪৫ আর বিমান বন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ে ১১.১৫ তে। চট্রলা এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছাড়ে দুপুর ১.০০ টায় আর বিমান বন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ে ১.৩০ এ। নরসিংদী ট্রেন স্টেশন নেমে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে গিয়ে যেকোন গারিতে ড্রিম হলিডে পার্ক যেতে পারবেন। অথবা স্টেশন থেকে সিএনজিতেও যেতে পারেন।

তাছাড়া নিজস্ব বা রিজার্ব যেকোন গারিতে যাওয়ার সুযোগতো আছেই।

পিকনিক বা কোন অনুষ্ঠানের জন্য বুকিং করতে যোগাযোগ করুন –

মোবাইলঃ 01711-453429, 01762-696302, 01762-696303

ইমেইল : dreamholidayltd@gmail.com

ওয়েবসাইট : dreamholidayparkbd.com

ফেসবুক পেইজ : fb.com/dreamholidaypark

আরো পড়ুনঃ
যমুনা ফিউচার পার্ক (Jamuna Future Park)
ঠিকানা রিসোর্ট / ডে আউটার্স
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত – চট্রগ্রাম
চট্রগ্রাম সিটিতে বেরানোর জায়গা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *