নতুন চুল গজানোর উপায়

একজন মানুষের সৌন্দর্যের অংশ চুল, আর এই চুলকে সুন্দর রাখতে আমাদের সবার কত না চিন্তা। আমাদের সবারই কম-বেশি চুল পড়ে। চুল পড়া নিয়ে অনেকেই দুঃশ্চিন্তায় থাকে, আসলে প্রতিদিন ৫০-১০০ টা চুল পরা স্বাভাবিক। এগুলো পরার পর আবার গজায়। কিন্তু নানা কারণে অনেকের স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি চুল পড়ে কিন্তু নতুন চুল গজায় না। এই চুল পড়া এবং নতুন চুল গজানো নিয়ে মানুষের মনে কত ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। যাদের চুল কম তারা চান নতুন চুল গজাতে। আর অনেকেই নতুন চুল গজাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকেন। কেউ কেউ নতুন চুল গজাতে চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকেন। আবার কেউ কেউ ঘরোয়া পদ্ধতির সাহায্য নেয়। আজকে আমরা আলোচনাকরব নতুন চুল গজানোর উপায় নিয়ে।

নতুন চুল গজাতে পেঁয়াজ

নতুন চুল গজানোর উপায় হিসেবে পেয়াজ অত্যন্ত কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজের রস মানুষের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এবং মাথার ত্বককে জীবানু মুক্ত রাখে। পেঁয়াজ কাটার সাথে সাথে মাথার ত্বকে ঘসলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেকে পেঁয়াজের রসের গন্ধ সহ্য করতে পারে না, সেজন্য পেঁয়াজ বেঁটে বা ব্লেন্ড করে রসটা নিবেন, তারপর গোলাপ জল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিবেন। এতে চুলে পেঁয়াজের গন্ধ কম হয়। 

নিম্নে পেঁয়াজের ৩টি রেমিডি দেওয়া হল:

  • অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজের রস ও অলিভ অয়েল এক সঙ্গে মিশিয়ে নিবেন। তারপর এই মিশ্রণটি হালকা গরম করে চুলে লাগান। ১-২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন, এতে চুল পড়া অনেকটা কমে আসে।
  • মাঝারি আকারের দুটি পেঁয়াজকে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। তারপর পেঁয়াজগুলো ব্লেন্ড করে ফেলবেন অথবা ছোট ছোট করে কেটে নিবেন। তারপর ব্লেন্ড করা পেঁয়াজ থেকে একটি ছাকনির সাহায্যে পেঁয়াজের রস বের করে ফেলবেন। তারপর এই পেঁয়াজের রসে ২ চা-চামচ নারিকেল তেল, ১ চা-চামচ ক্যাস্টর ওয়েল এবং ১চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিবেন। তারপর মিশ্রণটা ভালোভাবে একসাথে মিশিয়ে নিবেন। এই রেমিডিটি সপ্তাহে ৩ বার গোসলের পূর্বে মাথার স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে নিবেন। তারপর শ্যাম্পু করে গোসল করে নিবেন।
  • ৬টি মাঝারি আকারে পেঁয়াজ নিবেন। এর মধ্য থেকে ৩টি পেঁয়াজ মিহি করে কেটে রেখে দিবেন। বাকি ৩টি পেঁয়াজ খোসা ছাড়িয়ে নিবেন। তারপর একটি কড়াইতে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল নিয়ে, এতে পূর্বের মিহি করে কাটা পেঁয়াজগুলো ভেজেঁ নিব। এরপর মেথি, কালোজিরা, কারি পাতা এবং ছোট্ট একটি আদা একটি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিবেন। এবার এই সমস্ত উপকরণগুলো কড়াইয়ের তেলে ৫-৬ মিনিট হালকা আচে ভাজাঁভাজাঁ না হওয়ার পর্যন্ত নাড়তে থাকবেন। তারপর তেলটা কে একটা ছাকনির সাহায্যে ছেকে নিব এবং গুড়ো গুলোকে আলাদা করে নিব। তারপর এই তেলকে আবারও খোসা ছাড়ানো পেঁয়াজ দিয়ে ভেজেঁ ফেলব। তারপর এই তেলকে কাচেঁর জারে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারবেন।

নতুন চুল গজাতে মেথি

মেথি চুলের যত্নে অনেক উপকারী, মেথি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। সারারাত পানি দিয়ে মেথি ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে তা পান করে ফেলুন। মেথি ভেজানো পানিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও নিকটনিক এসিড। যার ফলে চুল ভিতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং হয়ে উঠে মজবুত। সারারাত মেথি ভিজিয়ে, সকালে মেথি গুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিবেন। এই ব্লেন্ড করা পেস্ট সরাসরি চুলে ব্যবহার করতে পারেন বা এতে দই – মধু মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। শুকিয়ে যাওয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো ভাবে চুল ধুয়ে নিবেন। 

এছাড়া একটি জারে ৫-৬ চা-চামচ কিংবা আপনার চুলের পরিমাণ মতো মেথি নিবেন এবং এতে একটি মাঝারি আকারের কাটা পেঁয়াজ নিবেন। এই দুটি উপকরণ সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন। পরের দিন সেগুলোকে একটি ব্লেন্ডারের সাহাযে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিবেন। ব্লেন্ড করার সময় চাইলে পানি ব্যবহার করতে পারেন। তারপর ব্লেন্ড করা মিশ্রণটিতে ক্যাস্টর দিয়ে দিবেন। আপনারা চাইলে কোকোনাট ওয়েল বা অলিভ ওয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। এই হেয়ার মাস্কটি চুলকে করবে লম্বা, কালো, ঘন ও সিল্কি। এটি চুল পাকা রোধ করতেও অনেকটা সাহাজ্য করে। 

ডিম এবং অলিভ অয়েল

চুলের জন্য ডিম ও অলিভ অয়েল অনেক কার্যকরী। একটি পাত্রে ২টি ডিম ও ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালো ভাবে মিশিয়ে নিবেন। তারপর এই মিশ্রণটি চুলের স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৪৫ মিনিট রেখে দিবেন। তারপর ভালো শ্যাম্পু দিয়ে ভালো ভাবে চুল ধুয়ে নিবেন। 

চুল বৃদ্ধি করতে ডিম ও কলা

চুল বৃদ্ধি করতে ডিম , কলা ও নারিকেল তেলেরমিশ্রণ চুলে দিতে পারেন। একটি ডিম ফেটে তারমধ্যে কলা চটকিয়ে ভালো ভাবে মেশান। তারপর তাতে নারিকেল তেল মিশিয়ে নিবেন। এই মিশ্রণটি চুলের স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ভালো ভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি চুল মজবুত করতে এবং চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

নতুন চুল গজাতে ভিটামিন-সি :

নতুন চুল গজাতে ভিটামিন-সি অনেক উপকারী। বেশি বেশি ভিটামিন-সি জনিত খাবার খাবেন। লেবু , কমলা , কামরাঙা , আনারস , পেয়ারা , কাঁচা মরিচে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-সি রয়েছে। তাই নতুন চুল গজানোর জন্য এসব খাবার খেতে পারেন। 

নতুন চুল গজাতে ম্যাসাজ :

মাথায় ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির ফলে নতুন চুল গজাবে। ভিটামিন-ই চুলের জন্য নিউট্রিশন এর যোগান দেয় তাই ১ চা-চামচ ভিটামিন-ই হাতে নিয়ে চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন। ভিটামিন-ই এর সাথে চায়ের নির্যাস মিশিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করতে পারেন। এই মিশ্রণটি হাতের আঙুলে বা হাতের তালুতে নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো ভাবে ৫-৬ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ভালো ভাবে চুল আঁচড়ে নিবেন৷ কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে চুল ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। নতুন চুল গজানোর জন্য দিনে ২-৩ বার ম্যাসাজ করুন। কিন্তু প্রতিবার শ্যাম্পু করবেন না কারণ অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা চুলের জন্য ক্ষতিকর।

নতুন চুল গজাতে বিভিন্ন ঔষধ :

নতুন চুল গজানোর জন্য সবাই বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে। যেমন ম্যাসাজ, ঘরোয়া পদ্ধতি এবং বিভিন্ন ঔষধ ইত্যাদি। চুল পড়া চিকিৎসায় ২টি ঔষধ রয়েছে। এদের কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এমন কোন ঔষধ এখনও বের হয়নি যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নতুন চুল গজানোর জন্য ঔষধ দুটির কথা নিম্নে বলা হল:

  • মিনোক্সিডিল : মিনোক্সিডিল একটি পরীক্ষিত ঔষধ। এটি গবেষণা ও ডাক্তার পরীক্ষায় প্রমাণিত। পুরুষ এবং মহিলাদের নতুন চুল গজাতে মিনোক্সিডিল সাহায্য করে। অতিরিক্ত চুল পড়া এবং টাক জনিত সমস্যা থেকে এই ঔষধটি সহায়তা করে। অনেকেই এই চিকিৎসার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। এই ঔষধটি ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষরা ব্যবহার করতে পারবেন। ঘুমানোর ২-৪ ঘন্টা আগে ঔষধটি মাথায় ব্যবহার করবেন। 
  • ফিনাস্টেরাইড : ফিনাস্টেরাইড ঔষধটি চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। ফিনাস্টেরাইড ঔষধটি পুরুষদের জন্য। এটি একটি পরীক্ষিত ঔষধ। এই ঔষধ ব্যবহারে অনেকে উপকৃত হয়েছেন। 

এসব ঔষধ পরীক্ষিত হলেও এদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তাই এসব ঔষধ সেবন করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন।

নতুন চুল গজাতে পিআরপি ও মেসোথেরাপি :

পিআরপি ও মেসোথেরাপি নতুন চুল গজানোর আধুনিক পদ্ধতি। অধিকাংশ মানুষই চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত। এই সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। 

পিআরপি পদ্ধতিতে রোগীর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে কিছু উপাদান আলাদা করা হয়। তারপর প্লাজমা সমৃদ্ধ রক্ত চুলের ফলিকে ইঞ্জেক্ট করা হয়। পিআরপি সাধারণত মাসে একবার করা হয়। তারপর তিন মাস অন্তর অন্তর। এই থেরাপিটি নতুন চুল গজাতে , চুল ঘন করতে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। 

মেসোথেরাপি অকালে চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। মেসোথেরাপি অনেকগুলো ইঞ্জেকশন দ্বারা পরিচালিত পদ্ধতি। বয়স্কদের জন্য এটি অনেক উপকারী। এটি খনিজ পদার্থ , ভিটামিন , পেপটাইড , অ্যামিনো এসিড , ত্বকের কেরাটিন স্তরের উপাদান দ্বারা তৈরি সিরাম। স্ট্রে , ডায়েট , জেনেটিক্স , দীর্ঘকালীন অসুস্থতার কারণে চুল পড়লে তা নিরাময়ের জন্য মেসোথেরাপি ব্যবহার করা হয়। 

আরো পরুনঃ
মুখের ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়
ব্রন কি? কেন হয়? ব্রন দূর করার উপায়।
ব্রণ দূর করার উপায় ও ব্রন এর দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *