টবে কৃষ্ণচূড়া ফুল চাষ

কৃষ্ণচূড়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম  ফুল গাছ। এর ইংরেজি নাম “Flame Tree“. এছাড়াও কৃষ্ণচূড়া ফুল কে রাধাচূড়া,  গুলমোহর এবং কনকচূড়া নামে ডাকা হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল, কমলা, হলুদ ফুল এবং উজ্জল সবুজ পাতা একে অন্যরকম আকর্ষনীয় করে তোলে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন-

“ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া,সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি।
কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরী কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও কর্ণে”।

কৃষ্ণচূড়া,
লালে রাঙা আগুন ঝরা
প্রিয়ার খোপার ফুল।
কৃষ্ণচূড়া,
হাওয়ায় খেলা পাপড়ি দোলা
বঁধুর কানের দুল।
কৃষ্ণচূড়া
গগণ তলে সবুজ মাঝে,
বনিতার অবাধ নৃত্য।
কৃষ্ণচূড়া
সোনার গায়ে চিমটি কাটা
আমার নিত্য কৃত্য।

– এস এম খায়রুল বাসার

কৃষ্ণচূড়া ফুল কোথায় কখন ফুটে 

ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড,  মায়ানমার,  আফ্রিকা,  ইংল্যান্ড,  যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশ সমূহে কৃষ্ণচূড়া ফুল বেশী দেখা যায়। এই ফুলটি অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন সময় দেখা গেলেও সাধারণত বসন্তের সময় বেশী দেখা যায়।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের গুরুত্ব ও ব্যবহার

চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল ফুলের জন্য এটি সব অঞ্চলেই প্রসিদ্ধ।  সব বয়সের মানুষের পছন্দনীয় ফুলের একটি। বাগানের এবং বাড়ির সৌন্ধর্য বর্ধণে এটি ব্যবহার করা হয়। কৃষ্ণচূড়ার ফুল এবং পাতা বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসায় কৃষ্ণচূড়া ফুল 

জ্বর সারাতে মধুর সাথে কৃষ্ণচূড়ার পাতার রস মিশিয়ে সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুল পাটায় বেটে নিয়ে চুলে লাগালে চুল ভালো থাকবে এবং খুশকি দূর হবে। কৃষ্ণচূড়ার পাতা পানির সাথে ফুটিয়ে সেই পানি সেবন করলে সন্ধিবাত ভালো হয়।  স্বরভঙ্গ রোগে কৃষ্ণচূড়ার পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও এর পাতা ভেজে খেলে পিত্ত বৃদ্ধিতে কাজ করে।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের বৈশিষ্ট্য

কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ লম্বায় বেশী বড় হয় না তবে পাশে বেশাই ছড়ায়। শাখা প্রশাখা নরম প্রকৃতির। গাছ উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি গুচ্ছে অনেক গুলো করে ফুল হয়। এর ফুল গন্ধ হীন।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং

কৃষ্ণচূড়া ফুল অনেক রংয়ের হয়ে থাকে। যেমন উজ্জল লাল, কমলা, হলুদ ইত্যাদি। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এই ফুল বেশী ফোটে। শীতে গাছের বেশীরভাগ পাতা ঝরে যায়।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য টব

কৃষ্ণচূড়া ফুল চাষের জন্য ১২-১৪ ইঞ্চির টব প্রয়োজন। বীজ থেকে অথবা গুটি কলম করে কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা রোপন করা যায়।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য মাটি ও সার

এই ফুলের জন্য দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটি উত্তম। মাটির সাথে অল্প সিলেকশন বালি, হাড়ের গুড়া, ছাই ভালোভাবে মিশিয়ে মাটি তৈরী করতে হবে।  এছাড়া কম্পোস্ট সার, গোবর, টিএসপি সার মেশানো উত্তম। চাপান সার এবং তরল সার ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বর্ষাকাল থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত তরল সার প্রয়োগ করা উত্তম।

কৃষ্ণচূড়া গাছের পরিচর্জা

গাছে পানি দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুই  সপ্তাহ পর পর মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। গাছ বড় হলে ডাল ছেটে দিতে হবে।

আরো পরুনঃ

টবে গাঁদা ফুল চাষের পদ্ধতি
টবে শিউলি ফুল চাষ
নয়নতারা গাছের উপকারিতা, রোপণ ও পরিচর্যা
টবে জবা ফুলের চাষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *