ছাদ বাগানের টবে গাছ লাগানোর পদ্ধতি

বাগান পছন্দ করে না এমন ব্যক্তি খুজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।  কিন্তু জায়গার অভাবে অনেকেই পছন্দনীয় এই কাজ টি করতে পারেন না। আবার অনেকে বারান্দা, বেলকনিতে বাগান করে নিজের সখ মিটান। আর যদি বাড়ির ছাদ থাকে তাহলে তো বাগান করা শুধু একটু সময়ের ব্যাপার। অনেকেই ছাদ বাগান করার বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান, তাই আমরা নিয়মিত ছাদবাগান বিষয়ে পরামর্শমূলক পোস্ট করছি এখানে। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো, ছাদ বাগানের টবে গাছ লাগানোর পদ্ধতি নিয়ে।

টব প্রস্তুতি

বাজারে মাটির তৈরী, প্লাস্টিক এবং সিরামিকের টব পাওয়া যায়। ফুল গাছ বা আকারে ছোট গাছের জন্য ছোট এবং মাঝারি আকারের টব নিতে হবে। আর বড় গাছ এবং ঝোপ ধরনের গাছের জন্য আকারে বড় টব নিতে হবে। যে ধরনের টব ই ব্যবহার করেন না কেন, অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য  টবের নীচে ২/৩ টি ছিদ্র করে দিতে হবে। প্লাস্টিকের টব হালকা হওয়ায় ছাদে ঝুলিয়েও আপনি বিভিন্ন লতা টাইপ সৌন্ধর্য বর্ধন গাছ বা ফুল গাছ লাগাতে পারবেন।

অন্যান্য টবের চেয়ে বাড়িতে বানানো কংক্রিটের টব বেশী উপযোগী। কারন এটি সহজে ভেঙে বা নষ্ট হয় না। দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। যে টব ই ব্যবহার করেন না কেন, নীচের ছিদ্রে ইটের কনা দিয়ে তার উপর প্রয়োজন মতো মাটি এবং সার প্রয়োগ করতে হবে। টবের মাটি এমনভাবে ভরতে হবে যেন টবের উপরে অল্প কিছু যায়গা খালি থাকে। অন্তত যেন ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি যায়গা খালি থাকে। টব ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এতে পোকার আক্রমণ কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টবের মাটি

ছাদ বাগানের টবের মাটি দোঁআশ মাটি হলেই ভালো। এতে  ভালো ফলন পাওয়া যাবে। বিভিন্ন জমি, ক্ষেত, পুকুর এবং নদীর পাড় থেকে এ মাটি সংগ্রহ করা যায়। মাটি সংগ্রহ করার সময় উপর থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হবে। বেশী গভীর থেকে মাটি সংগ্রহ না করাই ভালো। নর্দমার মাটি, কারখানার আবর্জনায় পরিপূর্ণ মাটি এবং সব সময় পানি জমে থাকে এমন মাটি সংগ্রহ করা যাবেনা। কিছু কিছু সময় এসব মাটি গাছের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে।

টবে চারা রোপণ

বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে টবে লাগাতে হবে এজন্য ১ থেকে ১.৫ মাসের চারা উত্তম। অথবা ছোট টব থেকে নিয়ে বড় টবেও চারা রোপন করা যেতে পারে। রোপনের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গাছের চারার যেন কোন ক্ষতি না হয় তাই খুব সাবধানে শিকড় চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে খুব সাবধানে মাটি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে শক্ত করে দিতে হবে যেন গাছ কোন একদিকে হেলে পড়ে না যায়। অবশ্যই গাছ যেন সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

আচ্ছাদন

প্রথমদিকে চারাগুলোকে অত্যন্ত রোদ থেকে বাচিয়ে রাখতে হবে। এজন্য সকাল বিকাল ছাড়া অন্য সময় টব গুলোকে ছায়ায় রাখতে হবে। ছায়ায় রাখা সম্ভব না হলে সরাসরি সুর্যের তাপ যেন না লাগে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

গাছের গোড়া

প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর গাছের গোড়ার মাটি খুচিয়ে দিলে ভালো হবে। মাটি একদম গুড়ো করা যাবে না। এক্ষেত্রে গভীরতা হবে ২-৩ ইঞ্চি পরিমাণ। 

গাছের অবলম্বন

আগে ই বলেছি গাছকে সোজা করে রাখতে হবে। সেটার জন্য গাছের চারা অবস্থা থেকেই ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন কাঠি বা বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন সেটা বার বার পরিবর্তনের প্রয়োজন না পড়ে। এতে গাছের গোড়ার ক্ষতি হতে পারে। গাছটিকে কাঠির সাথে এমনভাবে বাধতে হবে এবং এমন কিছু দিয়ে বাধতে হবে যেন গাছের ক্ষতি না হয়। মোলায়েম কোন রশি দিয়ে আলতোভাবে বেধে দিতে হবে। খুব টাইট করে না বেধে একটু হালকা করে বাধতে হবে যেন গাছ বাতাসে কিছুটা নড়াচড়া করতে পারে।

টবে পানি দেওয়া

টবের গাছে মগ বা সরাসরি পানি না দিয়ে ঝর্ণা দিয়ে পানি দেওয়া উত্তম। এতে গাছের গোড়ার মাটি সরে যাবে না। গাছ পানি কম পেলে গাছ বড় হতে বেশি সময় লাগে, আবার বেশী পানি হলে গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সকাল, বিকাল পানি দেওয়া ভালো। অন্য সময় পানি দেওয়া এড়িয়ে যেতে হবে। 

উপরি সার দেওয়া

প্রায় সব টবের গাছের উপরি সার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। মাটি খুড়ে এই সার পরিমাণ মতো সব দিকে দিয়ে আবার মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে। কুঁড়ি আসার লক্ষন বুঝা গেলে ১ সপ্তাহ পর পর দুই তিন বার  ২-৩ গ্রাম করে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে৷ এই সার যেন শিকড়ের উপর না পড়ে তা খেয়াল রাখতে হবে। ৫০ গ্রাম টিএসপি,  ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২৫ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে এই সার তৈরী করতে হবে।

ছাদ বাগান বিষয়ে আরো কিছু পোস্ট

ছাদে বাগান করার উপকারিতা

ছাদ বাগান করার সহজ পদ্ধতি

ছাদে বাগান করার কৃষি উপকরণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *