টবে টগর ফুল চাষ

টগর একটি গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ এই ফুল কে ইংরেজিতে বলা হয় “Pinwheel flower”, যার বৈজ্ঞানিক নাম “Tabernaemontana divaricata“। সিলেট  এ এই ফুল কে দুধ ফুল নামে ডাকা হয়। এছাড়া অনেকে এই ফুল কে কাঠ মালতী বা কাঠ মল্লিকা নামে চিনে।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে টগর ফুলের গাছ বেড়ে উঠে এবং ফুল দেয়। এই গাছটি দেখতে খুব সুন্দর, কারন এতে ঝাঁকড়া মাথা থাকে। ডালপালা গুলো সোজা না বেড়ে ঝোপেড় মতো বেড়ে উঠে। কাটিং করে খুব সুন্দর ঘন ঝোপ বানানো যায়। এই গাছের  কান্ডের ছাল ধূসর। এর ভিতরে সাদা দুধের মতো কষ আছে। যা পাতা বা ডাল ছিড়লে বের হয়। এই গাছের পাতা ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হয়।

এই গাছে প্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে৷ ফুল গুলোর রং হয় দুধ সাদা। একক টগরের ফুলে গন্ধ থাকে না। কিন্তু থোকা টগরে মৃদু গন্ধ থাকে। আজকে আমরা আলোচনা করব টবে টগর ফুল চাষের পদ্ধতি নিয়ে।

এই ফুল নিয়ে মোহিদ নজরুল এর কবিতাঃ

হয়তো তুমি আসবে
ভোরের কুয়াশায়, ঘায়ে মেখে শিবির
আমি ফুল নিয়ে তোমার প্রতীক্ষায়,
এখন মাঝ রাত, মৃত প্রায় পৃথিবী
আমি অপেক্ষায় আছি, কখন ফুটবে টগর ফুল
প্রথম সকালে যখন আঁধার মরে যাবে,
তোমাকে ধরনীর বুকে প্রথম শুভেচ্ছা জানাব।
হয়তো তুমি আসবে
স্বপ্ন ভরা চোখে কাজল মেখে
তোমার চুল আছরে দেব, বেঁধে দেব খোপা,
গুজে দেব টগর ফুল।

মোহিদ নজরুল

কোথায় কোথায় টগর ফুল ফুটে

চীন, তাইওয়ান,  মালেশিয়া, থাইল্যান্ড,  ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ,  অস্ট্রেলিয়া এসব অঞ্চলে এই ফুল বেশী জন্মে।

টগর ফুলের ব্যবহার ও গুরুত্ব

সব বয়সের মানুষের পছন্দনীয় ফুলের একটি। বাগানের এবং বাড়ির সৌন্ধর্য বর্ধণে এটি ব্যবহার করা হয়। এই গাছের পাতা এবং মূল বিভিন্ন  রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

টগর গাছের ঔষুধী গুন

চিকিৎসার কাজে টগরের মূল ও শেকড় ব্যবহার করা হয়।এর শেকড় কটু স্বাদের ও তেতো হয়। শেকড় এর রস কৃমি ও চুলকানি দূর করে। টগরের কাঠ ঘামাচি থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও এই গাছের কাঁচা ডাল দাঁতের বিভিন্ন রোগ দূর করে।

টগর ফুলের প্রকারভেদ

টগর দুই ধরনের হয়ে থাকে। একক টগর ও থোকা টগর। একটি পাপড়ির টগরকে একক টগর বলা হয়। এবং গুচ্ছ পাপড়ির টগরকে বলা হয় থোকা টগর। এদেরকে আবার ছোট টগর ও বড় টগর বলা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতে এই দুই ধরনের টগর ই পাওয়া যায়।

টবে টগর ফুল চাষের পদ্ধতি

টব নির্বাচন

টগরের গাছ রোপণ করার জন্য যে কোন মাপের টব হলেই হবে। কলম এর মাধ্যমে চারা করা যায় অথবা বর্ষাকালে ডাল পুতলেও গাছ হয়। এছাড়া বীজ থেকে ও চারা করা যায়।

মাটি ও সার

অন্যান্য গাছের মতো এই গাছও দোঁ আশ মাটিতে ভালো জন্মে। মাটির সাথে গোবর মিশ্রণে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতি ১০ কেজি মাটির সাথে ৬ কেজি গোবর সার, ৬০০ গ্রাম স্টেরামিল মেশাতে হবে। এছাড়া প্রতিটি টবে ৫০ গ্রাম গুড়ো সর্ষের খৈল, ৩০ গ্রাম ফসফেট, ১৫ গ্রাম পটাশ এবং পরিমাণ মতো ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।

পরিচর্যা

এই গাছ খুব দ্রুত বেড়ে উঠে তাই এই গাছে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি দিতে হবে। শীত কাল শেষে ডাল ছাটাই করে দিতে হবে। গাছ ছোট থাকা অবস্থায় অবলম্বন প্রয়োজন। এজন্য লাঠি পুতে দিতে হবে এবং গাছ বড় হলে তা সরিয়ে নিতে হবে। 

আরো পরুনঃ
টবে বেলি ফুল চাষ এর পদ্ধতি
টবে জুঁই ফুল চাষ এর পদ্ধতি
টবে গাঁদা ফুল চাষের পদ্ধতি
টবে কাঠগোলাপ চাষ
টবে হাসনাহেনা ফুলের চাষ
টবে শিউলি ফুল চাষ
টবে কৃষ্ণচূড়া ফুল চাষ
টবে কামিনী ফুল এর চাষ
টবে জবা ফুলের চাষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *