টবে জুঁই ফুল চাষ এর পদ্ধতি

জুঁই একটি গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ, জুঁই ফুলের ইংরেজি নাম হলো “Jasmine“. যার বৈজ্ঞানিক নাম “Jasminum”। এটি তিউনিসিয়ার জাতীয় ফুল। প্রজাতির কারনে এটিকে ব্রাজিলীয় জুঁই, সোনালী জুঁই, শ্বেত জুঁই নামেও অনেকে চিনে। পাকিস্তানের জাতীয় ফুল এটি এবং সেখানে একে চাম্বেলী বা ইয়াসমীন নামে ডাকা হয়।

জুঁই গাছের উচ্চতা সাধারণত ৬-৮ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।  এই ফুলের প্রায় ২০০ টির মতো প্রজাতি রয়েছে। এর পাতা গুলো ঘন সবুজ এবং প্রায় ২-২.৫ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

জুঁই ফুলের রং সাধারণত সাদা, হলুদ অথবা যার্ডিশ রংয়ের হয়ে থাকে। এবং এর আকার ২.৫ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই গাছের ফল পাকলে কালো হয়ে যায়। আজকে আলোচনা করব টবে জুঁই ফুল চাষ এর পদ্ধতি নিয়ে।

এই ফুল নিয়ে একটি কবিতার অংশবিশেষ দেখে নিনঃ

জুঁই ফুল, টুল টুল
বুলবুলির, নাক ফুল।
টুনটুনিদের, কানাকানি
হয়ে গেল, জানাজানি।
প্রাণের প্রিয়, ফুল মালা
ভালোবাসার,শ্রেষ্ঠ বালা। 

– খালিদ হাসান

জুঁই ফুল এর ব্যবহার ও গুরুত্ব

মালা তৈরী, ফুল সজ্জা সাজানোর জন্য ব্যাপক জনপ্রিয় জুঁই ফুল। এছাড়াও বিয়ে, পুজো এবং বিভিন্ন অনুষ্টানে এই ফুল ব্যবহার করা হয়। বারান্দায়,  বাগানে, ছাদে এই ফুল চাষ করে সৌন্ধর্য বর্ধন করা হয়। এই ফুলের চাহিদা অনেক তাই এটি বিক্রি করে বানিজ্যিক ভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব। চীনে এক প্রকারের চা বানানো হয় এই জুঁই ফুল দিয়ে। এর বেশ কিছু ভেষজ গুনাগুন ও রয়েছে।

চিকিৎসায় জুঁই ফুল এর ব্যবহার

শরীরের যে কোন স্থান যদি ফুলে যায় তাহলে সেখানে জুঁই ফুলের রস লাগালে ফোলা কমে যাবে। এই ফুলের রস নিয়মিত ব্যবহার করলে চর্ম রোগ খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়। এই ফুলের চা খুব উপকারী,  এই চা ঘুমের সমস্যা দূর করে। বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ে দিলে বিষ উঠতে জুঁই ফুলের রস ব্যবহার করা হয়।

কোথায় কখন জুঁই ফুল ফুটে

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং এশিয়ার অনেক গুলো দেশে এই ফুল খুব বেশী দেখা যায়। শীতকালে এই ফুলটি কম ফোটে এছাড়া সব সময় ই  এই ফুল বেশী ফুটতে দেখা যায়। 

টবে জুঁই ফুল চাষ এর পদ্ধতি

টব নির্বাচন

জুঁই ফুল টবে চাষ করার জন্য টবের আকার মাঝারি অথবা বড় হওয়াটাই সর্বোত্তম।  কাটিং নিয়ে এই ফুলের চারা রোপণ করা যায় এজন্য মাটির নীচে গাছের অংশ থেকে যেই শাখা গজায় তার ঝাড় তুলে পৃথক পৃথক করে কাটিং করতে হবে।

মাটি নির্বাচন

এটি প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মালেও এর জন্য বেলে দোঁ আশ মাটি উত্তম। ভালো ফলনের জন্য অবশ্যই মাটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মাটির সাথে গোবর সার মিশ্রণ করে টবে মাটি ভরতে হবে৷ মাটির পিএইচ মান যেন ৬.৫ এর বেশী হওয়া ঠিক হবে না। অতিরিক্ত সূর্যের অলো পড়ে এমন স্থানে টব স্থাপন না করাই উত্তম।

জলবায়ুর প্রভাব

নিয়মিত পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শীতকালের ঠান্ডা হাওয়া গাছের ক্ষতি করতে পারে, তাই উপযুক্ত স্থানে বসাতে হবে। শীতকালে ফুল কম ফোটে, সেই সময় ই গাছ বেড়ে উঠে আর তখন পর্যাপ্ত পরিমানে পানি দিতে হবে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন পানি দেওয়ার প্রয়োজন নাই।

সার প্রয়োগ

গাছে অবশ্যই পরিমান মতো সার দিতে হবে। এজন্য গোবর সার উত্তম। তবে এছাড়াও প্রয়োজন মতো আবর্জনা পঁচা সার,  এমোনিয়া সাল্ফেট, সুপার ফসফেট, পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।

পোকামাকড় দমন

এই গাছে সাধারণত মাকড় ও পত্রভুক আক্রমণ করে। এজন্য ভারমিটেক ও ইমিটাফ স্প্রে করে পোকামাকড় দমন করতে হবে।

পরিচর্যা

গাছ এর ডাল ছাটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ডাল ছাটাই করে দিলে অধিক ফলন পাওয়া যায়৷ নিয়মিত পানি সেচ দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

আরো পরুনঃ
টবে কাঠগোলাপ চাষ
টবে হাসনাহেনা ফুলের চাষ
টবে শিউলি ফুল চাষ
টবে কৃষ্ণচূড়া ফুল চাষ
টবে কামিনী ফুল এর চাষ
টবে জবা ফুলের চাষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *